অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট দেশের ৭৮ শতাংশের বেশি মানুষ

প্রকাশিত: ৮:০১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট দেশের ৭৮ শতাংশের বেশি মানুষ

পিআর বুঝে না ৫৬ শতাংশ,
অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট দেশের ৭৮ শতাংশের বেশি মানুষ

অনলাইন ডেস্ক

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে দেশের ৭৮ শতাংশের বেশি মানুষ সন্তুষ্ট- এমন তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন কনসাল্টিংয়ের জরিপের ফলাফলে। গতকাল সকালে রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে এক গোলটেবিল আলোচনায় এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ইনোভেশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সারওয়ার। অনুষ্ঠানে তিনি জানান, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে বিভিন্ন বয়সের ১০ হাজার ৪১৩ জন মানুষের মতামত নেয়া হয়। দেশের ৬৪ জেলা থেকে তাদের বাছাই করে সরাসরি মতামত নেয়া হয়। জরিপে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে ধারণা, নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে ধারণা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নির্বাচনের সময় ও ভোটার উপস্থিতি- এই ছয় বিষয়ে মতামত নেয়া হয়েছে।

 

ফলাফল উপস্থাপনে জানানো হয়, আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত-এমন মত দিয়েছেন দেশের ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার। একইসঙ্গে ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন তারা ভোট দিতে আগ্রহী। আর পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) সম্পর্কে ধারণা নেই ৫৬% ভোটারের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
দেশের ১০ হাজার ৪১৩ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের অংশগ্রহণে এই জরিপে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মদক্ষতা, নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে জনমত বিশ্লেষণ করা হয়।

জরিপের মূল ফলাফল;
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মদক্ষতা: ৭৮ দশমিক ৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী সরকারের কার্যক্রমকে ‘ভালো’ বা ‘মধ্যম মানের’ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। তবে তরুণ, শিক্ষিত ও নগরবাসীদের মধ্যে সন্তুষ্টির হার তুলনামূলকভাবে কম।
নির্বাচন ও ভোট নিরাপত্তা: ৬৯ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম। এ ছাড়া ৭৭ দশমিক ৫ শতাংশ বিশ্বাস করেন তারা নিরাপদে ভোট দিতে পারবেন। তবে পুলিশ ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে তরুণ ও নগরবাসীর সংশয় বেশি।

আইনশৃঙ্খলা: ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ নাগরিক মনে করেন গত ছয় মাসে চাঁদাবাজি বেড়েছে। এ ধারণা নগর এলাকায় বসবাসকারী তরুণ ও উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি। তথ্যের প্রধান উৎস হিসেবে তরুণ ও শিক্ষিতদের বড় অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল।

নির্বাচনের সময়সূচি ও অংশগ্রহণ: ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেন এবং ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে শিক্ষার্থী, উচ্চশিক্ষিত এবং কিছু পেশাজীবীদের মধ্যে নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে আপত্তি তুলনামূলক বেশি।

নির্বাচনী সংস্কার: সংসদের উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি সম্পর্কে ৫৬ শতাংশ উত্তরদাতা অবগত নন। তবে যারা এই বিষয়ে জানেন, তাদের মধ্যে এই ব্যবস্থার পক্ষে সমর্থনই বেশি। তরুণ ও উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা এবং সমর্থনের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।

পিআর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক দলগুলো: প্রেস সচিব
গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, পিআর নাকি বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোই। সরকারের এ বিষয়ে কম কথা বলাই ভালো। নির্বাচনের জরিপ প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, জরিপের পরিসংখ্যানই বলছে সরকারের ওপর জনগণের আস্থা আছে। তিনি বলেন, জরিপে অংশ নেয়া ৯৫ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে চাওয়া মানে সামনের নির্বাচন হবে ইনক্লুসিভ নির্বাচন। সবাই ভোট দিতে এলে ভোট ভালো হতে বাধ্য।
এদিন আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সংস্থাটির জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, দেশে আগামী নির্বাচনে পিআর সিস্টেম নিয়ে জানেন না দেশের ৫৬ শতাংশ মানুষ। পিআর চায় ২১.৮ শতাংশ এবং চায় না ২২.২ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেয় ১০ হাজার ৪১৩ জন। এতে ৬৯.৯% উত্তরদাতা মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হবে।

তবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতার বিষয়ে তূলনামূলক কম ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে এমনটাই দেখা গেছে জরিপে।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও যোগাযোগ বিষয়ে শিক্ষক ড. সাইমুম পারভেজ, বিডিজবস ডটকমের প্রধান নির্বাহী এ কে এম ফাহিম মাশরুর, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম এবং ব্রেইনের নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান।

ইনোভেশন কনসালটিং একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক, গবেষণা ও কারিগরি সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের উদ্যোগে ‘পিপলস পারসেপশন অন ইলেকশন সার্ভে’ পরিচালিত হচ্ছে, যা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে ভয়েস ফর রিফর্ম ও বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (ব্রেইন)।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল