২১শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৪০ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২০
মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ
পূর্ণা চক্রবর্ত্তী স্নিগ্ধা। জন্মের পর থেকে জীবনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলছে। তবুও লেখাপড়ার হাল ছাড়েনি। পিছু হটেনি লড়াই থেকে। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ঘিরেই সংগ্রাম করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। নিজের চেষ্টায় সিলেট শিক্ষাবোর্ডের এসএসসি পরীক্ষা জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার ফলাফলে খুশি হয়েছে পরিবারসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ আত্মীয়-স্বজন। তবে অর্থাভাবে সে আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হচ্ছে পূর্ণার। সামনে পুরোটা পথ তার অনিশ্চিত। দারিদ্র্যতার কারণে আগামী দিনে উচ্চ শিক্ষার খরচের চিন্তায় বাবা-মায়ের চোখেমুখে হতাশার ছাপ।
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের তেলিয়া নতুন পাড়া গ্রামের স্বপন চক্রবর্ত্তীর (৬২) মেয়ে পূর্ণা চক্রবর্ত্তী স্নিগ্ধা। তার বাবার যাজনিক (পুরোহিত) এর আয়ে চলে তাদের সংসার। দুই বোনের মাঝে পূর্ণা ছোট। বড় বোন নিবেদিতা চক্রবর্ত্তী সিলেট এমসি কলেজে সমাজ বিজ্ঞানের শেষ বর্ষের ছাত্রী। অর্থের অভাবে কোনরকম ধারদেনা করে বড় বোনের পড়ালেখা চালাতে হচ্ছে। জমি বলতে বাড়ির ভিটেটুকুই। বারো বছর আগে তার বাবা সুনামগঞ্জের একটি ফার্মে চাকরি করে জমানো টাকা এবং সব জায়গাজমি বিক্রি করে একটি ষ্টীলবডি নৌকা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ক্রয় করেছিলেন। তিন বছর যেতে না যেতেই বালি বোঝাই নৌকাটি নদীতে ডুবে যায়। নৌকা তুলতে তিনবার ডুবুরী দিয়ে অনেক টাকা ঋণ করে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সেই থেকে ঋণের বোঝা এখনও পিছু ছাড়েনি।
পূর্ণার মা শিপ্রা চক্রবর্ত্তী বলেন, মেয়ে আমার ভালো ফলাফল করেছে। সে আরও পড়তে চায়। তাই আমরা এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছি তার পড়ালেখার খরচ নিয়ে। অল্প আয়ে চার সদস্যের সংসার চলে। তার উপর স্বামী আমার ডায়াবেটিস রোগী। যজমানী ছাড়া পরিশ্রমী কোন কাজ করতে পারেন না। এখন দুই মেয়ের পড়ার খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও জানান, পূর্ণার বাবা অসুস্থ থাকায় যজমানী ঠিকমতো করতে পারেন না। এর মধ্যে প্রতি মাসে প্রায় হাজার টাকার ঔষধ লাগে। তাছাড়া আমাদের বড় মেয়ে সিলেট এমসি কলেজে পড়ুয়া ছাত্রী। করোনার কারণে তার ৪টি পরীক্ষা বাকি রয়ে যায়। তাকে ঠিকমতো টাকা দিতে পারছি না। তারপর পূর্ণাকে নিয়ে বড় চিন্তায় পড়েছি। পূর্ণা ২০২০ সালে জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ১১৫৭ নম্বর পেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর আগেও ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও ৮ম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ সহ সাধারণ বৃত্তি পেয়েছে।
পূর্ণা চক্রবর্ত্তী স্নিগ্ধা বলেন, প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ঘন্টা লেখাপড়া করেছি। পাশাপাশি মায়ের রান্নাবান্নার কাজে সহযোগিতা করেছি। কোনকিছু কিনার ইচ্ছা থাকলেও কিনি নাই বাবার কষ্ট হবে ভেবে। বছরে বৃত্তির ৪ হাজার টাকা দিয়ে স্কুলের গাইড বই ও ড্রেস কিনেছি। অর্থাভাবে আমাদের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাই সৌরবিদ্যুতের আলোতে লেখাপড়া করতে হয়েছে। আমি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। কেউ যদি আমার লেখাপড়ায় সাহায্যের হাত বাড়ি দেন তাহলে আমি সবার আগে কৃতজ্ঞতাসহ সেই ঋণ শোধ করার চেষ্টা করব।
পূর্ণার বাবা স্বপন চক্রবর্ত্তী জানান, এক মেয়েকে লেখাপড়া করাতে হিমশিম খাচ্ছি। ছোট মেয়ে পূর্ণাও প্রতিটি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে। সে প্রতিদিন লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করে। আমি ঋণের বোঝা টানতে টানতে এখন দেউলিয়া। মেয়ের দিকে চাইলে মরে যেতে ইচ্ছে হয়। বাবা হয়ে তাদের আশা পূরণ করতে পারছি না। কিভাবে তার লেখাপড়া এগিয়ে নেব তা ভেবে পাচ্ছি না। তাই কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেলে মেয়েটার লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারতাম। আমার মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সহযোগিতা জন্য প্রার্থনা করছি। সহযোগিতার জন্য মোবাইল নম্বর-০১৭১৮৯০৬১২৬, ০১৬৪৪১২০৫৮৪।
জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান ভূষণ চক্রবর্ত্তী বলেন, অর্থের অভাবে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা পূর্ণার জীবন বড়ই কষ্টের। বিদ্যালয়ের অন্য ছাত্রীদের চেয়ে আলাদা মেধাসম্পন্ন ছিল সে। এছাড়াও সে ভালো গান ও কবিতা আবৃত্তি করে আমাদের বিদ্যালয়ের সুনাম অর্জন করেছে। আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D