আমার সমস্ত বৈ রী সময়ে যিনি আমাকে হাতছাড়া করেনি তিনি হলেন আমার আল্লাহ আর মা-বাবা !

প্রকাশিত: ১:২৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫

আমার সমস্ত বৈ রী সময়ে যিনি আমাকে হাতছাড়া করেনি তিনি হলেন আমার আল্লাহ আর মা-বাবা !

আমার সমস্ত বৈ রী সময়ে যিনি আমাকে হাতছাড়া করেনি তিনি হলেন আমার আল্লাহ আর মা-বাবা !

সাহাদাত পারভেজ

 

আজ সারাদিন খুব এলামেলো ছিলাম। বিষন্নতার মধ্যে কেটেছে প্রতিটি মুহূর্ত। আজকের মতো কোনেদিন এত অসহায়বোধ করি নাই। গত বছর এই সময়ে আম্মা যখন দু’দফা আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে ছিল, তখনো না।

৮৩ বছর ছয় মাস আয়ু পাওয়া আমার অসুস্থ্য বাবার এখন প্রধান পথ্য আমার আত্মজা প্রিয়তা পারমি। তার সঙ্গে কথা বলতে পারলে অসুখ-বিসুখের কথা তার মাথায় থাকে না; লাউয়ের ডগার মতো তার প্রাণ সতেজ হয়ে যায়।

গতকাল রাতে আব্বাকে ফোন করেছিলাম প্রিয়তার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য। আব্বা ফোন ধরেন নাই। আজ সকাল ৯টা ৫৩ মিনিটে আব্বা ফোন করলেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বলে আমি তখনো ঘুমোঘোরে। আব্বার কণ্ঠটা খুবই করুণ। আব্বা বললেন, শরীরটা বেশি একটা ভালো না। তাই রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

আব্বা জানালেন, গলায় প্রচণ্ড ব্যাথা। কিছু খেতে পারছেন না। তিনদিন ধরে শুধু সাগু খেয়ে থাকছেন। শরীরের হাড়ে হাড়ে যে ব্যথা ছিল, তাই নাই। তবে শরীরের ভার আর রাখতে পারছেন না। মাঝে মাঝে পড়ে যাবেন পড়ে যাবেন মনে হচ্ছে।

আব্বা বললেন, ‘তোমাকে একটা কথা বলি, মন দিয়ে শোনো।’
আমি বললাম, ‘বলো’।
আব্বা বললেন, ‘এই দুই হাজার পঁচিশ সালই আমার জীবনের শেষ সময়। অনেক দিন তো বাঁচলাম। আর বোধ হয় বেশি দিন তোমাদের সঙ্গে নাই।’
বলেই আব্বার কণ্ঠ আদ্র হয়ে গেল।
আমি আব্বাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, ‘মনটাকে শক্ত করে রাখো আব্বা। সব ঠিক হয়ে যাবে।’

আব্বাকে বললাম, শক্ত থাকতে। কিন্তু আমি নিজেই শক্ত থাকতে পারলাম না। শক্ত থাকবো কেমন করে-আমার মূল শক্তিই তো আব্বা।

ছবি তুলতে এসে, লিখতে এসে এই ঢাকা শহরে কত প্রিয় বন্ধু শত্রু হয়ে গেল, অতি চেনা-মানুষ অচেনা হয়ে গেল। শুধু আলোকচিত্র বিষয়ে গবেষণা করি বলে এই শিল্পের গুটিকয়েক লোক আমাকে সমাজচ্যূৎ করতে চাইলো, কত অপবাদ দিতে চাইলো, কুৎসা রটালো, সবশেষে হত্যাযোগ্য করে তোলার চেষ্টা চালালো।

আমার এই সংগ্রামী জীবনে যাদের আপন ভাবতাম, সেই কাছের মানুষরাও পাশে না থেকে এড়িয়ে গেছে; যৌক্তিক প্রতিবাদটুকুও করেননি।

শুধু ছবি তুললে, ছবি নিয়ে লিখতে না আসলে দুনিয়ার অনেক কিছু আমার অজানা থেকে যেত। ড্যাডিসমগ্র প্রকাশের পর আলোকচিত্রের জমিনে যে কম্পন তৈরি হয়েছে, এর ফলে এই পাঁচ বছর প্রিয় কয়েকজন বন্ধু আমার জীবন স্বাভাবিক রাখে নাই। তাদের ধন্যবাদ জানাই এই জন্য যে আমি এখন কাঁটাবিছানো পথে চলতে শিখে গেছি।

সাদা সাদা কুয়াশার মতো আমার দুর্বিষহ সময়গুলো আলোর স্রোতে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আমার সমস্ত বৈরী সময়ে এই মানুষটিই আমাকে হাতছাড়া করেনি; আমাকে ছেড়ে যায়নি। দুনিয়ায় তার চেয়ে নিঃস্বার্থ বন্ধু আমার আর নাই।

আমার বাবার জন্য আপনাদের কাছে দোয়া চাই।

সাহাদাত পারভেজ
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল