১০ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২৫
ইসলামের দৃষ্টিতে রসিকতা ও রসবোধ
জাওয়াদ তাহের
মানুষ স্বভাবতই হাসি-আনন্দ ও রসিকতাপ্রিয়। তবে এই স্বভাব যদি নিয়ন্ত্রিত না হয় এবং তা যদি অশ্লীলতায় রূপ নেয় বা অন্যের কষ্টের কারণ হয়, তাহলে এটি গুনাহের কাজ। তাই ইসলাম রসিকতা করার অনুমতি দিয়েছে বটে, কিন্তু তাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা বেঁধে দিয়েছে, যা না মানলে সেই রসিকতা গুনাহের কাজে পরিণত হতে পারে।
রসিকতা সত্য হতে হবে
রসিকতা করতে গিয়ে কেউ যদি মিথ্যা বলে, তবে তা ইসলামী শিষ্টাচার পরিপন্থী।
আজকাল সমাজে এমন একটি ভুল ধারণা প্রচলিত হয়েছে যে ‘মিথ্যা বললে সমস্যা নেই, যদি তা শুধু মজা করার জন্য হয়।’ অথচ হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ধ্বংস তার জন্য, যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে। ধ্বংস তার জন্য! ধ্বংস তার জন্য!
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৭১৩৬)
এ ছাড়া হাদিসে এসেছে, আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাদের সঙ্গে কৌতুকও করেন, তিনি বললেন, আমি সত্য ব্যতীত কিছু বলি না। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৯০)
এ থেকে স্পষ্ট হয় যে রসিকতা হালাল, তবে তার শর্ত হলো, তাতে যেন মিথ্যা না থাকে।
রসিকতার সময় ও স্থান বিবেচনা করা
রসিকতা করতে হলে অবশ্যই উপযুক্ত সময়, পরিবেশ এবং মানুষের মানসিকতা বুঝে নিতে হবে। কেউ দুঃখে আছে, বিপদে আছে বা মন খারাপ, এমন অবস্থায় তাকে উপহাস করা বা অতিরিক্ত ঠাট্টা করা চরম গুনাহের কাজ। এ বিষয়ে আল্লামা মুনাওয়ি (রহ.) বলেন, রসিকতা প্রশংসনীয়, তবে তা নির্দিষ্ট স্থানে ও নির্দিষ্ট পরিমাণে। সর্বদা রসিকতা যেমন অনুচিত, তেমনি সর্বদা গম্ভীর থাকা ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হাসিমুখে না থাকা অনভিপ্রেত। (ফয়জুল কদির, ৩/১৮)
পূর্বসূরি মুসলিম মনীষীরা সময় বুঝে রসিকতা করতেন। সাহাবিরা যেমন একে অপরের সঙ্গে মজা করতেন, তরমুজের খোসা ছুড়ে মারতেন, কিন্তু যখন সময় আসত দায়িত্ব পালনের তখন তাঁরাই ছিলেন সবচেয়ে দৃঢ় ও গম্ভীর।
রসিকতার ভাষা ও আচরণ যেন ভদ্র ও মর্যাদাপূর্ণ হয়
ইসলাম কোনো রকম অশ্লীলতা, উপহাস, তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও কটূক্তিকে সমর্থন করে না, এমনকি তা যদি রসিকতার ছলেই হয়। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়কে উপহাস করুক না, হতে পারে তারাই উত্তম।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১১)
তাই এমন কোনো কথায় রসিকতা করা উচিত নয়, যাতে কাউকে অপমান করা হয়, কারো শারীরিক বৈশিষ্ট্য, বংশ বা পেশা নিয়ে হাসাহাসি করা হয় বা এমন কথা বলা হয় যা কাউকে কষ্ট দেয়।
রসিকতা যেন ইসলামের সীমার মধ্যে হয়
রসিকতা যদি কোনো হারাম বা নিষিদ্ধ বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে, যেমন—নারী-পুরুষের অশ্লীল কৌতুক, ধর্মীয় বিষয় নিয়ে ঠাট্টা, কাউকে গালি দেওয়া, তবে তা স্পষ্ট গুনাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন, বলো, আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসুলকে নিয়ে কি তোমরা ঠাট্টা করছিলে? এখন অজুহাত দিয়ো না, তোমরা তো কুফরি করেছ ঈমান আনার পর। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬৫-৬৬)
তাই কোনো রসিকতা যেন শরিয়তের কোনো বিধান, আল্লাহর আয়াত, ইসলামের কোনো বিধান বা ইসলামী ব্যক্তিত্বের ওপর হয় না। এমন রসিকতা ঈমান নষ্ট করে দিতে পারে।
রসিকতা যেন কারো সম্মানহানি না করে
ইবন হিব্বান (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের ধরনের (স্তরের বা মর্যাদার) বাইরের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ঠাট্টা-মশকারা করে, সে তার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায় এবং সে তার ওপর সাহস দেখায় (ধৃষ্টতা করে), যদিও সেই ঠাট্টা সঠিক ও সত্য হয়। কারণ প্রতিটি বিষয়ের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা আছে, তা সঠিক পন্থায় এবং সঠিক ব্যক্তিদের মাঝেই হওয়া উচিত। আর আমি সাধারণ মানুষের সামনে ঠাট্টা করার বিষয়টি অপছন্দ করি, যেমনভাবে সমমর্যাদার লোকদের উপস্থিতিতে ঠাট্টা পরিহার করাও আমি অপছন্দ করি। (রওজাতুল উকালা : ৮০)
মুহাম্মাদ ইবনে মুনকাদির (রহ.) বলেন, আমার মা আমাকে বলেছিলেন, হে বৎস! বাচ্চাদের সঙ্গে ঠাট্টা-মশকারা কোরো না, তাহলে তুমি তাদের কাছে তুচ্ছ হয়ে যাবে। (ইহইয়া উলুমিদ্দিন, ৩/১২৮)
ইদানীং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মজা করে মানুষ যে ধরনের কথাবার্তা বা ছবি প্রকাশ করে, তাতে অনেক সময় গুনাহ, অপমান, মিথ্যা এবং অশ্লীলতা থাকে। এমনটি পরিহারযোগ্য।
বিডি প্রতিদিন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D