অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে
কানাইঘাটে ভিজিএফ’র চাল আটকের চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রকাশিত: ১১:২৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১, ২০১৯

<span style='color:#077D05;font-size:19px;'>অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে</span> <br/> কানাইঘাটে ভিজিএফ’র চাল আটকের চাঞ্চল্যকর তথ্য

সিলেটের কানাইঘাট রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে গত ৪ জুন ভিজিএফ এর ৪৩ বস্তা চাল রাস্তায় গাড়ী সহ আটকের ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর জন্য এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে ভিজিএফ এর চাল কালোবাজারে বিক্রি করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এমন মিথ্যা সংবাদ ছড়ান ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুহেল আহমদ। সুহেল আহমদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ভিজিএফ এর চালগুলো ট্যাক্টর সহ রাস্তায় আটক করেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা লুৎফুর রহমান সহ আরো কয়েকজন।

বিষয়টি স্বীকার করে লুৎফুর রহমান আরো কয়েকজন জানান, ঘটনার দিন তাকে রাজাগঞ্জ বাজারে পেয়ে ইউপি সদস্য সুহেল আহমদ জানান, ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিনহাজ উদ্দিন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৪৫ বস্তা ভিজিএফ চাল ট্যাক্টরে কালো বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে। তার এমন সংবাদের প্রেক্ষিতে চালগুলো তারা আটক করেন। তাকে ইন্ধন যোগান আরেক ওয়ার্ডের এক ইউপি সদস্য।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামকে ফাঁসানোর জন্য পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য সুহেল আহমদ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য পরিকল্পিত ভাবে লুৎফুরদের ভুল তথ্য দিয়ে এ কাজটি করেছিলেন এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

পরিষদের কয়েকজন ইউপি সদস্য সহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে নানা কারনে চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামের সাথে ইউপি সদস্য সুহেল আহমদের মনোমালিন্য চলছিল। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইউপি সদস্য সুহেল আহমদ তার ওয়ার্ডে ১৭-১৮ অর্থ বছরে এলজিএসপি’র ৩ লক্ষ টাকা অর্থায়নে নয়ামাটি জমির উদ্দিনের দোকান হইতে আসকরের বাড়ী পর্যন্ত একটি রাস্তার মাটির কাজে ব্যাপক অনিয়ম হলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ কাজের বিলের টাকা আটকে দেন। এছাড়া এই ইউপি সদস্য কর্তৃক এলজিএসপি’র অর্থায়নে একই অর্থ বছরে একটি কালভার্টের কাজে ব্যাপক অনিয়মের ঘটনা ঘটলে চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম তাকে সঠিক ভাবে কাজ করার জন্য বলেন। চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামকে সাথে নিয়ে সম্প্রতি ইউপি সদস্য সুহেল আহমদ মাটির কাজের ৩ লক্ষ টাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে উত্তোলনে চেষ্টা করলে ফখরুল ইসলাম তাকে সহযোগিতা না করে ভালো করে মাটির কাজ করে অফিস থেকে টাকা উত্তোলনের পরামর্শ দিলে চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামের উপর ক্ষুদ্ধ ছিলেন, ইউপি সদস্য সুহেল আহমদ।

সর্বশেষ গৃহায়ন মন্ত্রণলায় কর্তৃক রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে দরিদ্র পরিবারের জন্য একটি ঘর বরাদ্ধ হলে চেয়ারম্যান ফখরুল সুহেল আহমদের ওয়ার্ডের গাজীপুর গ্রামের আজির উদ্দিনের নামের ঘরের তালিকা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ সরেজমিনে আজির উদ্দিনের বাড়ী পরিদর্শনে গেলে ইউপি সদস্য সুহেল আহমদ তাকে আজির উদ্দিনের বাড়ীটি পরিদর্শন না করে চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামকে অনুরোধ করে সুহেল তার নিকটাত্মীয় একজনের নামে আজির উদ্দিনের বাদ দিয়ে উক্ত ঘরে তালিকা অন্তর্ভূক্ত করলে চেয়ারম্যান বিষয়টি মেনে নেননি। এ নিয়ে গত ২৭ রমজান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সম্মুখে সুহেল আহমদ তার নিকটাত্মীয়ের নামে ঘর বরাদ্ধ না দেওয়ায় চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে ঝগড়া-ঝাটিতে লিপ্ত হন।

ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের ভিজিএফ কার্ডধারীদের মাঝে চাল বিতরণ সঠিক সময়ে না হয়ে ২৯ রমজান পরিষদের সিন্ধান্ত মোতাবেক ১ ও ২নং ওয়ার্ডের ভিজিএফ এর চাল পরিষদে বিতরণ করা হয় এবং ৩-৫নং ওয়ার্ডের চাল বিতরণ না করে ইউনিয়ন পরিষদে ঈদের পর বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যরা সেখানে তাদের ভিজিএফ’র চাল মজুদ করে রাখেন।

এ তালিকায় ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুহেল আহমদও রয়েছেন। ৬-৯নং ওয়ার্ডের ভিজিএফ’র কার্ডধারীদের চাল সুবিধাজনক স্থান ইউনিয়নের নয়াবাজারের একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়। ২৯ রমজান সকাল থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে দুপুরের দিকে এ ৪টি ওয়ার্ডের ভিজিএফ’র ৪৫ বস্তা চাল নয়াবাজারে বিতরণের উদ্দ্যেশে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন চৌকিদারগণ একটি ট্র্যাক্টরে করে পরিষদ থেকে রওয়ানা দিলে ইউনিয়ন পরিষদে সে সময়ে উপস্থিত ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুহেল আহমদ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্থানীয় আ’লীগ নেতা লুৎফুর রহমান সহ আরো কয়েকজনকে ফোন দিয়ে জানান ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিনহাজ উদ্দিন তার ওয়ার্ডে ভিজিএফ এর চাল কালোবাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে।

এমন সংবাদের ভিত্তিতে ইউপি সদস্য মিনহাজ উদ্দিনের সাথে ওয়ার্ডের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড নিয়ে পূর্ব থেকে বিরোধে লিপ্ত লুৎফুর রহমান ও শহিদ আহমদ গাজী বোরহান উদ্দিন সড়কের খালপার নামক স্থানে ভিজিএফ এর চাল সহ ট্যাক্টর আটক করেন।

এ সময় ইউপি সদস্য ইছাব আলী চাল আটককারীদের গালিগালাজ করলে ইউপি সদস্য মিনহাজ উদ্দিন আটককারীদের হাতে লাঞ্চিত হন। খবর পেয়ে ভিজিএফ এর চাল বিতরণের স্থান নয়াবাজার থেকে চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে আসার আগেই চাল আটক নিয়ে জনরুশে সৃষ্টি হলে তিনি সেখান থেকে চলে যান।

চাল আটককারী লুৎফুর রহমান সহ আরো অনেকে জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামের সাথে তাদের কোন বিরোধ নেই। চেয়ারম্যানকে ফাঁসানোর জন্য তারা চাল আটক করেননি, ইউপি সদস্য সুহেল আহমদ আমাদেরকে জানান মিনহাজ মেম্বার কালোবাজারে ভিজিএফ’র চাল বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে তাই আমরা পুরো বিষয়টি না জেনে চাল আটক করেছি। তদন্তে কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করলে সত্য ঘটনা বলবো। তবে তাদের ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিনহাজ উদ্দিন উন্নয়ন মূলক কাজে অনেক দুর্নীতি করেছে। ভিজিএফ এর চাল সঠিক মতো বিতরণ করে না। ওয়ার্ডের মানুষ তার উপর ক্ষুদ্ধ। অনুসন্ধানে ভিজিএফ’র চাল বিতরণে চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামের গাফলাতি রয়েছে, তবে প্রশাসন কর্তৃক চাল কালোবাজারে বিক্রি করার জন্য নিয়ে যায়।

জয়নাল আবেদিন আযাদ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল