জয়তু: সোহরাব হাসান

প্রকাশিত: ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫

জয়তু: সোহরাব হাসান

জয়তু: সোহরাব হাসান

সেলিম জাহান

 

জনান্তিকে জানা গেল যে, সোহরাব হাসান ‘প্রথম আলোতে’ ওঁর কর্মজীবনের ইতি টেনেছে। খবরটা শুনে চমকালাম – বলে কি? আমাদের সেদিনের সোহরাবও কি অবসরে গেল? নাহ্, তা বোধহয় নয়। যুবক সোহরাবকে তো আমি পরিস্কার দেখতে পাই ‘সংবাদ’ অফিসে। প্রায়ই যেতাম ‘সংবাদ’ অফিসে – হাসনাত ভাইকে (সংবাদের প্রবাদপ্রতিম সাহিত‍্য সম্পাদক আবুল হাসনাত) লেখা দিতে এবং সেই সঙ্গে সবার সাথে আড্ডা দিতে। সেখানে থাকতেন বজলু ভাই (সংবাদ সম্পাদক বজলুর রহমান), সন্তোষদা’ (সংবাদ সহ-সম্পাদক সন্তোষ গুপ্ত)। মাঝে মাঝে জাতীয় সাহিত‍্য প্রকাশনী থেকে আসতেন মফিদ ভাই (মফিদুল হক)। সে আড্ডার চারপাশেই থাকতো সে সময়ের তরুন সাংবাদিকেরা – বুলবুল (মঞ্জুরুল হাসান বুলবুল), প্রয়াত কামরুল (কামরুল ইসলাম চৌধুরী), সোহরাব (সোহরাব হাসান)।
সেই প্রথম সোহরাবকে দেখা। টগবগে তরুন – চোখে স্বপ্নের অঞ্জন। বিশ্বাস করে বামপন্থী রাজনীতিতে। একদা সক্রিয় ছিল ছাত্র ইউনিয়নে। প্রথম আলাপেই ভালো লেগে গেল সোহরাবকে – সেই ভালো লাগা তেমনটাই রয়ে গেছে গত চার দশক থেকে। প্রথম দেখাতেই বুঝেছিলাম যে, সোহরাবের পড়াশোনার ব‍্যপ্তি বিস্তৃত ও গভীর। কথা বলে ধীরে-সুস্থে, চিন্তা-ভাবনা করে। যুক্তিবান এবং হৃদয়বান এক মানুষ। তার যুক্তি-তর্ক এক শক্ত ভিত্তির ওপরে স্থিত।সেই সঙ্গে আকৃষ্ট হয়েছিলাম ওঁর রসিকতা করার সক্ষমতায় এবং রসিকতা গ্রহণ করার ক্ষমতায়।
তারপর সময় কেটে গেছে। সোহরাব পত্রিকা বদলেছে, কিন্তু সোহরাবের সঙ্গে আমার হৃদ‍্যতা বেড়েছে। ঢাকায় এসেছি, কিন্তু সোহরাবের সঙ্গে কথা বা দেখা হয় নি, এমনটা কখনো হয় নি। ‘প্রথম আলোতে’ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা-চক্রে সোহরাবের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছে; শুধুমাত্র সোহরাবের আমন্ত্রণে ‘প্রথম আলোতে’ গিয়েছি। সর্বদা সোহরাব ‘সবুজ চা’ খাইয়েছে। একবার ওদের ক‍্যন্টিনে চটপটি খাইয়েছিল বলে মনে পড়ছে। সোহরাবের উল্টোদিকে বসেন জাকারিয়া (প্রথম আলোর উপ-সম্পাদক একেএম জাকারিয়া)। সুতরাং এক যাত্রায় দু’জনার সঙ্গেই দেথা হয়ে যেতো।
বেশ ক’বছর আগে ‘প্রথম আলোর’ দপ্তরে বসে সোহরাব আমার এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিল। শিরোনাম দিয়েছিল, ‘দেশে শিক্ষা এবং মানবিকতার সংকট চলছে’। বহুল আদৃত হয়েছিল সে সাক্ষাতকার। সে সাক্ষাতকার সময়েই বোঝা যাচ্ছিল যে, কত তুখোড় সাংবাদিক সোহরাব – প্রশ্নের কত গভীরতায় এবং মাত্রিকতায় ওঁ যেতে পারে। প্রার্থিত উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত ওঁ ওঁর প্রশ্নবাণ চালিয়েই যাবে এবং শেষ পর্যন্ত উত্তরও বার করে নেবে। সাক্ষাতকারগ্রহণ কালে সোহরাবের হাত থেকে নিস্তার নেই। সোহরাবের সঙ্গে আলাপচারিতা তাই এক অনন‍্য অভিজ্ঞতা।
নানান পত্রিকায় সোহরাবের নানান লেখা এবং বিভিন্ন টেলিভিশনে ওঁর বক্তব‍্য ও বিশ্লেষণ আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ি এবং শুনি। বিভিন্ন বিষয়ের ওপরে ওঁর বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্মোহ আলোচনা আমাকে মুগ্ধ করে। জানি, সে বেশ কিছুদিন ধরে কবিতাও লিখছে। ইতিমধ‍্যে ওঁর কাব‍্যগ্রন্থ বেরিয়েছেও বলে শুনেছি। কবি সোহরাব হাসানের কবিতা এখনও আমার পড়া হয়ে ওঠে নি। অচিরেই পড়বো আশা রাখি।
গতবছর ঢাকায় গেলে বেশ কয়েক বার সোহরাবের সঙ্গে দেখা হয়েছে। একবার বাংলাদেশ উন্নয়ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে। শেষবার দেখা হয়েছে যখন আর পরম স্নেহভাজন মামুন (সাংবাদিক, লেখক ও ভাষ‍্যকার হাসান মামুন, মুসা ( ব্র‍্যাক কর্মকর্তা ও সাংবাদিক মুসা মিয়া) এবং সোহরাব আমাদের বাসায় এসেছিল। নানাবিধ আলোচনা ও জোর আড্ডা হয়েছিল। তার রেশ এখনও মনে লেগে আছে।
সোহরাব আমার একজন অতি প্রিয় এক মানুষ। আশা রাখি যে, এবার যখন ঢাকায় যাবো, তখন আরো জোরে আড্ডা হবে। নতুন কর্মস্থলা আরো সাফল‍্য আসুক সোহরাবের জন‍্যে। ‘চর্চা’ চর্চিত হয়ে উঠুক সোহরাবের সৃজনশীলতার ছোঁয়ায়। আগামী দিনগুলোতে সোহরাবের সাহিত‍্যকর্ম আরও প্রস্ফুটিত হবে। আমরা সবাই বলবো, ‘জয়তু: সোহরাব হাসান’।

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল