১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:৩১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২০
ইমরান আবদুল্লাহ:
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেসক্লাব থৈথৈ করছে। ২৬টি দেশের ২৭০ জন গবেষক যার যার আসন গ্রহণ করেছেন। উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীন কর্তৃপক্ষের অত্যাচার নিয়ে সারা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যৌথ বিবৃতি দেবেন তারা। প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে উপস্থিত জিংজিয়াংয়ের বন্দী শিবিরে নির্যাতিত উইঘুর নারী মিহিরগুল তুরসুন।
মিহিরগুল তুরসুন বললেন, অমানবিক নৃশংস এক জগতের গল্প। ভয়ে, লজ্জায় গায়ের লোম শিরশির করে উঠে যে গল্পের বর্ণনায়। সাদা চামড়ার ভেতর কালো কুচকুচে দৈত্য-দানবের গল্প। মিহিরগুল বললেন, ‘জিংজিয়াং প্রদেশে উইঘুর পরিবারে আমার জন্ম হলেও পড়াশোনা মিশরে। ওখানেই প্রেম, বিয়ে। আমি আমার তিন সন্তান নিয়ে ২০১৫ সালে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চীনে আসি। ঠিক তখনই দানবের খপ্পরে পড়ে যাই। বাচ্চাদের থেকে আলাদা করে আমাকে আটক করা হয় বন্দী শিবিরে। আমার ওপর চালানো হয় নারকীয় যৌন এবং শারীরিক নির্যাতন। আমার বুকের দুধ না পেয়ে মারা যায় আমার ছোট সন্তান।’
মিহিরগুল আঁচলে চোখ মুছেন। লাভ হয় না। চোখ মুছতে গিয়ে কান্না যেন আরও বেড়ে যায়। নিজেকে সামলে আবার বলেন, ‘বন্দী শিবিরে আমাকে বিভিন্ন ওষুধ খেতে বাধ্য করা হতো। ওষুধ খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতাম। বাথরুম করতে হতো ক্যামেরার সামনে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির স্তুতিতে গান করতে বাধ্য করা হতো। একদিন আমাকে ন্যাড়া করে হেলমেটের মতো কিছু একটা পরিয়ে ইলেকট্রিক শকিং চেয়ারে বসানো হয়। যন্ত্রণায় আমি কাঁপছিলাম। মনে হচ্ছিল আমার শিরা-উপশিরা বুঝি ছিঁড়ে যাচ্ছে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’
অডিটোরিয়ামে পিনপতন নীরবতা। সবার গা শিউরে উঠছে। মিহিরগুল থামলেন না। বলেই চললেন, ‘বন্দীশিবিরে মহিলাদের খোলামেলা পোশাকে নাচতে বাধ্য করা হয়। নগ্ন হয়ে ক্যামেরার সামনে গোসল করতে হয়। যৌনাঙ্গে মরিচের গুড়া ঢলে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। নির্যাতন সইতে না পেরে শুধু আমার রুমেই মৃত্যুবরণ করে নয়জন নারী। আমিও বলেছিলাম, আমাকে তোমরা মেরে ফেলো। আর সহ্য হচ্ছে না।’
ছাড়া পাওয়ার পর মেহেরগুল নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চান। যুক্তরাষ্ট্র তাকে আশ্রয় দেয়। কিন্তু তার মতো আরও হাজার হাজার মেহেরগুল ছাড়া পায় না।
দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট-এর এক প্রতিবেদনে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম নারীদের ওপর সরকারি কর্মকর্তাদের যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উইঘুর মুসলিম পুরুষদেরকে আটককেন্দ্রে বন্দী রাখা হয়েছে, আর তাদের স্ত্রীদেরকে সরকারি কর্মকর্তারা জোরপূর্বক শয্যাসঙ্গী করে যৌন নিপীড়ন চালাচ্ছে। কখনও কখনও সরকারি কর্মকর্তাদের বাসায়ও ওই স্ত্রীদের ‘আমন্ত্রণ’ জানানো হয়। আমন্ত্রণে সাড়া দিতে বাধ্য করা হয়।
স্থানীয় মানবাধিকার গ্রুপ ও আইনজীবীরা বলছেন, সরকার যে ব্যাপক নির্যাতন চালায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মুসলমান নারীদের সন্তান জন্মদান ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া।
২.
যারা বন্দী শিবির থেকে ছাড়া পেয়েছেন, তাদেরকে এখনো দুঃস্বপ্ন তাড়া করে বেড়ায়। কী সাংঘাতিক দিন ছিল শিবিরে, ভেবে এখনো ভয় পান। হাহাকারে হাহাকারে দুঃখের নিঃসীম আঁধারে ডুবে যান। চীনা কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে এমেই কিছু উইঘুর নারী আশ্রয় নিয়েছেন সীমান্তবর্তী দেশ কাজাখস্তানে। এই পালানো-নারীদের একজন ৩৮ বছর বয়সী গুলজিরা মোগদিন।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তার মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে চীনা কর্তৃপক্ষ। গ্রেপ্তারের পরই একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা করে জানা যায়, গুলজিরা ১০ সপ্তাহের গর্ভবতী। চীনা কর্তৃপক্ষ গর্ভে থাকা ভ্রুণ নষ্ট করার নির্দেশ দেয়। গুলজিরাকে অচেতন না করেই ভ্রুণ নষ্ট করেন সরকারি চিকিৎসক। শারীরিক যে যন্ত্রণা তিনি পেয়েছেন তখন, তা আর কখনো ভুলতে পারেন না।
গুলজিরা এখন আর মা হতে পারবেন না। নষ্ট করে দেয়া হয়েছে তার জরায়ু। আক্ষেপ নিয়ে তিনি শুধু বললেন, ‘তারা দুটো মানুষকে হত্যা করেছে। একজন আমার অনাগত সন্তান, আরেকজন আমি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নারীর আইনজীবী আইমান উমরারোভা জানান, তার মক্কেলকে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দুই দফায় গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করে জিনজিয়াং কর্তৃপক্ষ। পরে তিনি কাজাখস্তানে পালিয়ে আসেন।
উইঘুর বংশোদ্ভূত আলমাস নিজামুদ্দিন নামের এক অস্ট্রেলীয় নাগরিকসহ দু’জনের সঙ্গে কথা বলেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। দু’জনই জানিয়েছেন, তাদের স্ত্রীদের এখনো আটককেন্দ্রে রাখা হয়েছে। ২০১৭ সালে তাদের গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করে কর্তৃপক্ষ।
২০০৯ সালে চীনা হানদের সঙ্গে দাঙ্গা বাঁধে উইঘুরদের। ওই সময় অন্যদের সঙ্গে আটক করা হয়েছিল ইসলামিক স্টাডিজের শিক্ষার্থী রুকাইয়া পেরহাতকে। চার বছর তাকে বিভিন্ন কারাগারে রাখা হয়েছিল। মুক্তি পাওয়ার পর তুরস্কে গিয়ে আশ্রয় নেন তিনি। আটক অবস্থায় চীনা হান নিরাপত্তারক্ষীরা একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করে বলে জানান রুকাইয়া। এর পরিণতিতে তিনি দু’বার গর্ভবতী হন এবং দু’বারই তাকে গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করা হয়।
৩.
ইস্তাম্বুলের বড় একটি হলে লাইনে দাঁড়ানো শতাধিক উইঘুর অধিবাসী। তাদের প্রত্যেকের হাতে সন্তানদের ছবি। এসব সন্তানকে পিতা-মাতার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে চীন কর্তৃপক্ষ। কোন শিবিরে, কোন এতিমখানায় বড় হচ্ছে আদরের সন্তান, কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না তারা। তাদেরকে জানানোও হয়নি—কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গবেষকরা একজন একজন করে সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। একটু খোঁজের আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মায়েরা তাদের সন্তানের ছবি বুকে জড়িয়ে। শূন্য বুকে এই ছবিগুলোই সান্ত্বনা। একজন মা তার সন্তানের ছবি বাড়িয়ে দিলেন সামনে।জার্মানির গবেষক আদ্রিয়ান জেনজ অবাক হয়ে বললেন, ‘তিনজন?’
ওড়না দিয়ে মুখ চেপে কান্না থামিয়ে মা বললেন, ‘তিনজন। আমি জানি না এখন তারা কোন এতিমখানায় বড় হচ্ছে। আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।’ আরেকজন মা তার এক ছেলে ও মেয়ের ছবি বাড়িয়ে বললেন, ‘শুনেছি তাদেরকে এতিমখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
আদ্রিয়ান জানতে চাইলেন, কোন এতিমখানায়?
মা উত্তর দিতে পারলেন না। উত্তর দিতে পারলেন না এমন ৬০ জন মা। তারা জানেন না তাদের সন্তান কোথায়। চীন কর্তৃপক্ষ তাদের শিশুদের তুলে নিয়ে গেছে এতিমখানায় ‘উন্নত’ শিক্ষা দেবার কথা বলে। আসলেই কি তাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে নাকি পরিবার, বিশ্বাস ও ভাষা থেকে বিচ্ছিন্ন করে মুসলিম সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞ ও উদাসীনরূপে গড়ে তুলছে?
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উইঘুর শিশুদেরকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্ক উইঘুরদের বিশাল বিশাল বন্দী শিবিরে আটকে রাখা হচ্ছে। শুধু একটি শহরেই চারশতাধিক শিশুর পিতা-মাতা উভয়কেই বন্দীশিবিরে বা কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।
বিবিসি অনুমোদিত গবেষকরা মনে করেন, ওই শিশুদের ‘কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া শিশু সুরক্ষার’ প্রয়োজন কিনা তা নির্ধারণ করতে আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনা হওয়ার দরকার। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে ঠিক কী ধরনের আচরণ করা হচ্ছে তাও দেখা দরকার। আমরা যেসব প্রমাণ পেয়েছি, তা শিশুদের পর্যায়ক্রমে তাদের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে প্রচারণা চালানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জার্মানির গবেষক আদ্রিয়ান জেনজ বিশ্বের সামনে জিনজিয়াংয়ের মুসলমানদের গণহারে বন্দী করার পূর্ণ চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, জিনজিয়াংয়ে স্কুল সম্প্রসারণের ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। নতুন ডরমিটরি তৈরি হচ্ছে এবং সেখানে ধারণক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এখন রাষ্ট্র অনেক শিশুর ২৪ ঘণ্টা তদারকির সক্ষমতা অর্জন করেছে। একই সঙ্গে তারা জিজ্ঞাসাবাদের ক্যাম্প তৈরি করছে। এ সবই মুসলিমদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু শিশুদের কিন্ডার গার্টেনে ভর্তির হার ৯০ শতাংশ বেড়েছে।যে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নেয়া হয় সন্তান, পৃথিবীতে তার অবলম্বন থাকে না। তিন তিনটি সন্তান জীবন্ত হারিয়ে ফেলে যে মা বেঁচে আছেন, তাকে বেঁচে থাকা বলে?
৪.
উইঘুর মুসলিমদের হত্যা করে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দিচ্ছে চীনা সরকার। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে এমন নৃশংস ও পাশবিক নির্যাতন। এমনটাই জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি)।চীনের জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন টু অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট অ্যাবিজ অফ চীন (ইটিএসি) ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ওই ট্রাইব্যুনালের কাউন্সিল হামিদ সাবি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে জানান, বহু বছর চীনজুড়ে জোর করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করা হয়েছিল। এটা আজও অব্যাহত রয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত ফালুন গংয়ের বন্দী এবং উইঘুর সংখ্যালঘুদের এই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ।
তিনি বলেন, জীবন বাঁচাতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন একটি বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক বিজয়। কিন্তু দাতাকে হত্যা করা অপরাধ। নির্দোষ ও নিরীহ মানুষদের ধরে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করাকে এ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ গণনৃশংসতা বলে মত দেন তিনি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সঙ্গে জেনেভায় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এক দীর্ঘ বৈঠকে গবেষণার তথ্য দিয়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নেয়ার অভিযোগ উত্থাপন করেছে দ্য চায়না ট্রাইব্যুনাল।গবেষকদের দাবি, উইঘুর মুসলমান, তিব্বতি, কিছু খ্রিষ্টান সম্প্রদায় ও ফালুন গং ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছ থেকে হৃৎপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুস ও ত্বক নিয়ে নিচ্ছে চীন সরকার। গত ২০ বছর ধরে এভাবেই তাদের হত্যা করা হচ্ছে।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ১০ লাখ উইঘুর মুসলমানকে বন্দী করে রেখেছে চীন সরকার। তাদেরই অঙ্গপ্রতঙ্গ সংগ্রহের ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে দ্য চায়না ট্রাইব্যুনাল। শরীরে প্রাণ থাকতেই কিডনি, যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও কর্নিয়া ব্যবচ্ছেদ করা হয়। ত্বক ছড়িয়ে নেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তা পণ্য হিসেবে বিক্রি করা হয় বলে ট্রাইব্যুনালের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চীনা হাসপাতালগুলোতে খুবই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে অঙ্গপ্রতিস্থাপনের উদহারণ উল্লেখ করে দ্য চায়না ট্রাইব্যুনাল জানায়, শরীরের এসব অংশ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো হয়। চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
নিজেদের একটি স্বাধীন, আন্তর্জাতিক গণট্রাইব্যুনাল হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে দ্য চায়না ট্রাইব্যুনাল। চীনে অঙ্গপ্রতিস্থাপন বন্ধে আন্তর্জাতিক জোট ও অস্ট্রেলিয়ায় আইনজীবী এবং চিকিৎসকদের নিয়ে গড়া একটি মানবাধিকারবিষয়ক দাতব্য সংস্থা তাদের সহায়তা দিয়েছে। যুগোস্লাভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসোভিসের বিচারের কৌঁসুলি ব্রিটিশ আইনজীবী জিওফ্রে নাইসের নেতৃত্বে এই প্রতিবেদন লেখা হয়েছে।
৫.
উইঘুরদের বন্দী রাখতে ৫০০ ক্যাম্প-কারাগার চালাচ্ছে চীন। আর এতে ১০ লাখেরও বেশি উইঘুরকে আটক রাখার খবর দিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। চীনে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জিনজিয়াংয়ের স্বাধীনতার জন্য কাজ করছে ওয়াশিংটনভিত্তিক দ্য ইস্ট তুর্কিস্তান ন্যাশনাল এ্যাওয়াকেনিং মুভমেন্ট। গুগল আর্থের ছবি মূল্যায়ন করে ১৮২টি বিনা বিচারে বন্দী রাখার ক্যাম্প পাওয়া গেছে। গুগল কোঅরডিনেটস সিস্টেমের মাধ্যমে তারা এই তালিকা তৈরি করেছে। সরেজমিন প্রতিবেদনের সঙ্গে গুগলের তথ্য মিলে গেছে বলেও দাবি করছে ওই মানবাধিকার সংস্থাটি।
এছাড়াও ২০৯টি সন্দেহভাজন কারাগার ও ৭৪টি শ্রম ক্যাম্পও শনাক্ত করা হয়েছে। ব্যাপক অঞ্চলজুড়ে প্রতিষ্ঠিত এসব কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের খোঁজ এর আগে কখনো পাওয়া যায়নি। কাজেই এসব ক্যাম্পে একটা বড় সংখ্যক উইঘুর বন্দী রয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
তুর্কিস্তান ন্যাশনাল এ্যাওয়াকেনিং মুভমেন্টের পরিচালক কেইল ওলবার্ট ওয়াশিংটনের শহরতলীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এর আগে আমরা শনাক্ত করতে পারিনি এমন বহু ক্যাম্প রয়েছে সেখানে। ক্যাম্প সাইটের বিভিন্ন চিত্রে পরপর স্থাপিত বিভিন্ন স্টিল ও কংক্রিটের অবকাঠামো চোখে পড়ছে। নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতর গত চার বছরে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মী ও এই গ্রুপটির উপদেষ্টা অ্যান্ডার্স কোর বলেন, এর আগে ৪০ শতাংশ এলাকার প্রতিবেদন করা হয়েছিল।
গত মে মাসে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের এশিয়া বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা র্যানডার স্ক্রিভার বলেন, আটক রাখার এই সংখ্যা ৩০ লাখেরও বেশি হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। অঞ্চলটিতে দুই কোটির মতো জনসংখ্যা রয়েছেন। যাদের বড় একটা সংখ্যকই এখন কারাগারে বন্দি।
এসব বন্দী শিবিরে আটক অনেকেই বলেছেন, বোরকা পরা কিংবা দাড়ি রাখার মতো ইসলামি ঐতিহ্য মেনে চলার কারণে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। ক্যাম্পে কোরআন ও নামাজ পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে ঘরে চীনা বই রাখতে। তাদেরকে খেতে দেয়া হচ্ছে মদ ও শূকরের মাংস।
পুরো চীন জুড়ে ‘এক শিক্ষা, এক সংস্কৃতি’ চালু করতে বেইজিং সরকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার শিকার উইঘুর মুসলিমরা। এই অত্যাচারের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে অনেকেই উইঘুর এলাকা ছেড়ে জীবন বিপন্ন করে পালাচ্ছেন এশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে। শুধু উইঘুর নয়, চীন সরকারের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার এই অঞ্চলের কাজাখ মুসলিমসহ আরো বেশ কিছু প্রাচীন জনজাতি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D