ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে শেরপুর ব্রিজ। কুশিয়ারা নদীতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন নদীর গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে নতুন বস্তি গ্রাম।

প্রকাশিত: ৭:১৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০২৪

ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে শেরপুর ব্রিজ।  কুশিয়ারা নদীতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন নদীর গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে নতুন বস্তি গ্রাম।

ওসমানীনগর(সিলেট)প্রতিনিধি:

সিলেটের শেরপুর কুশিয়ারা নদীতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তীর ও গ্রাম ভেঙ্গে নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। নদীর গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে নতুন বস্তি গ্রাম। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শেরপুর ব্রিজ। বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে ব্রিজের গোড়ার মাটি তলিয়ে গেলে, বন্ধ হয়ে যেতে পারে সিলেটের সাথে সংযোগ স্থাপনকারি শেরপুর ব্রিজ। নদীর পাশ্রবর্তি গ্রামের ভিতর দিয়ে পাইপ টেনে বিভিন্ন মাঠে বালু সংরক্ষণ করায় এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। মানুষ প্রতিনিয়ত জ¦র সর্দিতে ভোগছেন। কুশিয়ারা নদীটি সিলেটের ওসমানীনগর, মৌলভীবাজার সদর ও হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই তিন উপজেলার শেরপুর সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামে ১২/১৩টি অনঅনুমোদিত বালুর মাঠ রয়েছে।
জানা যায়, সিলেট মৌলভীবাজার হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার মিলনস্থলে শেরপুর অবস্থিত এবং ভারত থেকে চলে আসা কুশিয়ারা নদী শেরপুর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। শেরপুর সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ৪জেলার মধ্যখানে পড়ায় চতুর্দিকে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এ স্থানটি হয়ে উঠেছে কুশিয়ারা নদীর অবৈধ বালু উত্তোলনের হটস্পট।
কুশিয়ারা নদীর তীরে শেরপুর ব্রিজের পূর্ব পাশে নতুন বস্তি নামক গ্রামে বালুর মাঠ তৈরি করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাসেল আহমদ ও যুবলীগ নেতা এমরান আহমদ গং এ.আর. এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে কুশিয়ারা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে উত্তোলণকৃত অবৈধ বালু সংরক্ষণ ও সরবরাহ করে আসছেন। সরকারি তথ্যমতে ব্রাহ্মণগ্রাম মৌজায় বালু উত্তোলন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ থাকলেও তারা প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বালুর ব্যবসা করছেন। গেল সপ্তাহে বালুর মাঠের পানির প্রবাহে এবং শক্তিশালী ড্রেজার মেশিনের ঝাকুনিতে নতুন বস্তি গ্রামের চলাচলের রাস্তার একটি অংশ ভেঙ্গে নদীতে তলিয়ে গেছে। এরপর থেকে গ্রামের সাধারন মানুষ শংকার মধ্যে রয়েছেন। আশংকা রয়েছে, যেকোন সময় ব্রিজের গোড়ার মাটি ও রাস্তার বাকি অংশ নদীতে ধসে যেতে পাড়ে।
নতুন বস্তি গ্রামের বাসিন্দা কয়েছ মিয়া, নাসির মিয়া ও সুহেল মিয়া বলেন, নদীর তীর ঘেঁষা গ্রামে আমরা প্রায় ৫শ পরিবার বাস করছি। ব্রিজের নিচ দিয়ে যাতায়াত করতাম। বালুর মাঠ তৈরি করার জন্য ছাত্রলীগ নেতা রাসেল আহমদ ও যুবলীগ নেতা এমরান আহমদ গং আমাদের রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। ড্রেজার দিয়ে বালু তুলার কারণে নদীর তীর ভেঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে, ব্রিজের গোড়ার মাটিও তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে । গ্রামের রাস্তা প্রায় নদীতে তলিয়ে গেছে, একজন মানুষ মারা গেলে লাশ নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ ও ব্রিজ সংলগ্ন মাঠটি খালি করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ব্যবসায়ী জাকির খান জাকারিয়া বলেন, কুশিয়ারা নদীর শেরপুর ব্রিজের পূর্ব পাশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর তীর ভেঙ্গে যাচ্ছে। এতে শেরপুর ব্রিজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। অবৈধ বালু পরিবহন করায় নতুন বস্তি গ্রামবাসি ও আজাদ বখত উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এর শিক্ষার্থীদের সীমাহীন সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। গ্রামের ভিতরের রাস্তাঘাট ভেঙ্গে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসি। ব্যবসায়ী সৈয়দ হুমায়েল বলেন, শেরপুর বালু ব্যবসার একটি কেন্দ্র হয়ে গেছে।অবৈধ হলে এগুলো বন্ধ করা দরকার। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি তাদের সাথে ব্যবসায় জড়িত নই। নদীর তীরে বালুর মাঠ হওয়ায় পানি প্রবাহিত হয়ে তীর ভেঙ্গে নদীতে তলিয়ে গেছে।
এমরান আহমদ বলেন, ব্রিজের নিচের মাঠ আমার নয়। আমার মাঠ ব্রিজ থেকে ৩শ মিটার দূরে । আমার মাঠ বন্ধ রয়েছে। চায়না রেলওয়ে ফার্স্ট গ্রুপ এর সহকারী কর্মকর্তা মি. লিও বলেন, ব্রিজের নিচের বালুর মাঠ আমাদের নয়,এটা সাপ্লাইয়ারদের। আমরা বালু উত্তোলন করিনা, সাপ্লাইয়াররা করে থাকে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রাজন খান বলেন, শেরপুর ব্রিজের নিচে সরকারি যায়গায় এ আর এন্টারপ্রাইজ ও চায়না কোম্পানী মাঠ তৈরি করে বালু সংরক্ষন করছে। এতে নদীর তীর ও নতুন বস্তি গ্রামের রাস্তা ভেঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে।
খলিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী বলেন, শেরপুর জুড়ে একটাই আলাপ, বালু তোলায় নদীর তীর ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমি বিষয়টি এ্যাসিল্যান্ডসহ তহসিলদারকে জানিয়েছি। বালু উত্তোলনের জন্য প্রায় ৫শ পরিবারের রাস্তা তলিয়ে গেছে। হুমকির মুখে আছে শেরপুর ব্রিজ ও নতুন বস্তি গ্রাম। গ্রামের একজন মানুষ মারা গেলে লাশ নিয়ে বের হওয়ার উপায় নেই। বালু উত্তোলনের জন্য নদীর তীর ও গ্রাম ভেঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে, এটা দ্রæত বন্ধ করা উচিৎ।
ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার গাইন বলেন, কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলন ও ব্রাহ্মণগ্রাম মোৗজায় সংরক্ষণের জন্য সরকারের অনুমতি নেই। এখানে ৬/৭টি মাঠে অবৈধ উত্তোলনকৃত বালু সংরক্ষণ পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার এ্যাসিল্যান্ড সানজিদা আক্তার বলেন, আমিতো এক দেড়মাস হয়েছে জয়েন্ট করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবো।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছরিন চৌধুরী বলেন, এটাতো এ্যাসিল্যান্ড দেখেন, আপনি আমাকে মেসেজ করেন দেন কোন যায়গাটা, আমি দেখবো।