১৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৫১ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০২০
অনলাইন ডেস্ক
সাবধান, করোনা আক্রান্ত গলি’। রাজধানীর সবুজবাগের নন্দীপাড়ার জিরো গলির সাত বাসিন্দার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরই ৩ এপ্রিল থেকে গলিটি লকডাউন করে দেয় পুলিশ। এরপর সেখানে এমন সতকর্তামূলক বাণী লেখা ব্যানার ঝোলানো হয়েছে। গলির প্রবেশমুখে কাঠের বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়া হলেও ছোট্ট একটি পকেট গেট রাখা হয়েছে। কাঠের গেটে বিপজ্জনক সংকেত হিসেবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তিনটি লাল কাপড়; যা দেখে সহজেই অনুমেয় এটা কোনো বিপদ সংকেতের চিহ্ন। করোনাভাইরাস সম্পর্কে এলাকায় সতর্কতা থাকলেও সেখানকার সাধারণ মানুষও এখনও তা যেন আমলেই নিচ্ছেন না। অহরহ গলিতে ঢুকছেন আর বের হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিট থেকে ১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত ৩০ মিনিটে করোনা আক্রান্ত ওই গলিতে ৪০ জনের বেশি লোক ঢুকেছে আর বের হয়েছে। তাদের অধিকাংশই ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেনি। শুধু নন্দীপাড়ার ওই দৃশ্য নয়, রাজধানীর আলোচিত টোলারবাগ এলাকায়ও একই চিত্র। লকডাউন থাকলেও টোলারবাগে অহেতুক লোকজনের চলাচল বেড়ে গেছে। টোলারবাগের বাসিন্দা দুই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ও একাধিক ব্যক্তি সংক্রামিত হওয়ার পর প্রথম দিকে টোলারবাগে এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এখন আবার অহেতুক টোলারবাগে চলাচল বেড়েছে।
একই ধরনের চিত্র দেশের বহু এলাকায়; যেখানে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরপরই ওই এলাকা লকডাউন করছে প্রশাসন। তবে ঢিলেঢালা লকডাউন চলছে অধিকাংশ এলাকায়। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে। প্রধান সড়কে যান চলাচল কম থাকলেও অলিগলিতে হচ্ছে লোকজনের জটলা। বিশেষ করে কাঁচাবাজারে এখন প্রচুর লোকের সমাগম।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, লকডাউন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নয়। এটা প্রশাসনিক বা আইনগত সরকারি ব্যবস্থা। এর মানে হলো- সীমানা, চলাচল, রাস্তাঘাট সবকিছু বন্ধ। এটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, নাগরিকের স্বতঃপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত নয়। এ সময় কর্তৃপক্ষ যা বলবে, তা শুনতে হবে। এখন অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, মানুষকে ঘরে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে। এর পরও আমাদের এখানে অনেকের মধ্যে কোনো সচেতনতা আসেনি।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল আবদুলল্গাহ ইবনে জায়েদ বলেন- ব্যক্তি, পরিবার, দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে নাগরিক হিসেবে সবার অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। শুধু কঠোর আইন প্রয়োগ করলেই তো সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যায় না। সশস্ত্র বাহিনীকে সহযোগিতা করবে প্রত্যেক নাগরিক- এই প্রত্যাশা তার।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখনও অলিগলিতে প্রচুর মানুষের জটলা। মিরপুর ১ নম্বরে শাহ আলী কাঁচাবাজার এলাকায় সামাজিক দূরত্ব না মেনে অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা জড়ো হচ্ছেন। ১০ নম্বর মিরপুর হোপ স্কুলের আশপাশের গলিতে বৃহস্পতিবার আড্ডা দিচ্ছিলেন অনেক তরুণ। ঘরের বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, অল্প সময়ের জন্য ঘুরতে বের হয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ পুলিশের একটি টহল গাড়ি হোপ স্কুলের গলিতে এসে আশপাশের দোকান খোলা রাখার কারণ জানতে চায়। তাৎক্ষণিকভাবে সব দোকান বন্ধও করে দেয় পুলিশ। তবে পুলিশ
চলে যাওয়ার পর আবার সেই পুরোনো দৃশ্য। এ ছাড়া মিরপুর, পলল্গবী এলাকায় বিহারিপল্লীতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ওপর শত শত লোক আড্ডা দিচ্ছেন। একই চিত্র মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পেও। পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, আগে থেকে বিহারিরা অল্প এলাকায় অনেক লোক বসবাস করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে থাকতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া নন্দীপাড়া সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যারা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ওই এলাকার জিরো গলি দিয়ে হেঁটে আসা শিপন নামে এক তরুণকে প্রশ্ন করা হয়- দেখে তো মনে হচ্ছে না, কোনো প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছেন। প্রশ্ন শুনে তিনি যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। বললেন- ‘একটানা ঘরে কি থাকা যায়। দু’দিন পর একটু বের হলাম। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে দ্রুতই ফিরে যাব।’ প্রবেশমুখে আরেক যুবক জানালেন, তিনি বাজার করার জন্য বের হয়েছেন। গলির পাশেই ভ্যানে করে মাস্ক বিক্রি করছিলেন এক যুবক। তিনি জানান- প্রায় সবসময় মানুষ যাতায়াত করে। মাঝেমধ্যে পুলিশ এসে কড়াকড়ি করে। পুলিশ চলে যাওয়ার পর আবার একই অবস্থা।
সবুজবাগ থানার ওসি মাহবুব আলম জানান, জিরো গলিতে সাতজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় গত ৩ এপ্রিল থেকে লকডাউন করা হয়েছে। এ ছাড়া সবুজবাগ থানা এলাকার বিভিন্ন গলি এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে লকডাউন করেছেন।
দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ার কারণে মাদারটেক কৃষি ব্যাংক গলি গত বৃহস্পতিবার রাতে এলাকাবাসী লকডাউন করেছে। বাঁশ আর টিনের বেড়া দেওয়া হয়েছে। গলির প্রবেশমুখের তরমুজ বিক্রেতা মালেক জানান, লকডাউন করলেও কখনও কখনও বেড়া খুলে গাড়ি যাতায়াত করছে।
বৃহস্পতিবার মগবাজার চেয়ারম্যান গলিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বিকেলে ওই এলাকা লকডাউন করা হয়। মানুষকে বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ মাইকিং করে। পাশাপাশি স্থানীয় মসজিদের মাইকেও মানুষকে বের হতে নিষেধ করা হয়। এর পরও সন্ধ্যায় বেশ কয়েকজনকে বের হতে দেখা যায়।
গত মঙ্গলবার পুলিশ ওয়ারীর র্যাঙ্কিন স্ট্রিট, যুগীনগর ও নারিন্দা এলাকা লকডাউন করে একই কারণে। বৃহস্পতিবার বিকেলে র্যাঙ্কিন স্ট্রিটে দলে দলে মানুষ রাস্তায় বের হয়। লকডাউনের মধ্যে বের হওয়ার কারণ হিসেবে তাদের যুক্তি- শবেবরাত উপলক্ষে অনেকেই রোজা রেখেছেন। ইফতার সামগ্রী কেনার জন্য তারা বাইরে বের হয়েছেন। লালবাগের বড় ভাটা মসজিদ এলাকার লকডাউনও ঢিলেঢালা।
জানা গেছে, ঢাকা ছাড়া আরও অন্তত ২১ জেলায় করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। রাজধানী ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন জায়গায় দুইশ’র বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। শুক্রবার পর্যন্ত ওই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুরোপুরি লকডাউন করা হয়। তবে দেশে প্রথম লকডাউন করা হয় মাদারীপুরের শিবপুর উপজেলা। এরপর লকডাউন করা হয় টোলারবাগ।
পুলিশ সূত্র জানায়, সংক্রমণ ঠেকাতে রাজধানীর যেসব এলাকায় নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে, সেই এলাকা লকডাউন করা হচ্ছে। অনেক এলাকায় সীমিত পরিসরে ভবন বা গলি লকডাউন করা হচ্ছে। রাজধানীর বাইরে এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, নরসিংদী ও টাঙ্গাইল- এই ছয় জেলা পুরো লকডাউন করা হয়েছে। নতুন আক্রান্ত হওয়ার খবর পেলেই প্রশাসন লকডাউন করছে ওই এলাকা। কোনো কোনো এলাকা স্থানীয় জনসাধারণ নিজেদের উদ্যোগে লকডাউন করছেন। তবে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ জায়গায় লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সেখানে এখনও অনেকে অহেতুক ঘরের বাইরে যাচ্ছেন। পর্যটন এলাকা কক্সবাজারেরও একই চিত্র। লকডাউনের নিয়ম মানছেন না অনেকে। কেউ কেউ লকডাউনের অর্থ বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ব্যাখ্যা করছেন এটা ১৪৪ ধারা বা কারফিউ।
লকডাউনের পর অনেক এলাকায় কেন আরও কঠোর হচ্ছে না পুলিশ- এমন প্রশ্নে একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরুতে সারাদেশের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কঠোর অবস্থায় ছিল পুলিশ। পরে দুই ব্যক্তিকে কান ধরে উঠবস করানোয় প্রশাসন ক্যাডারের এক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশসহ অন্যান্য প্রশাসনের কঠোর ভূমিকার সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচনার ভয়ে এতে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ ঢিলেঢালা মনোভাব দেখায়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আবার পুলিশকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এখন একদিকে বিপদগ্রস্ত মানুষকে খাবার দিয়ে সহায়তা করছে, অন্যদিকে মানুষকে ঘরে রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
গত ৮ মার্চ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ঢাকার অন্তত ৬০ এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- মিরপুর-১-এর শাহআলীবাগ, টোলারবাগ, পল্লবী, শাহআলী এলাকা; সবুজবাগের বাসাবো ছাড়াও হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আদাবর, বছিলা, লালবাগ, বুয়েট এলাকা, বংশাল, কোতোয়ালি, জিগাতলা, সেন্ট্রাল রোড, ইসলামপুর ও নারিন্দা, বাংলাবাজার, রামপুরা, গ্রিন রোড, বেইলি রোড, বংশালের আলী নেকীর দেউড়ী এলাকার ৯ ভবন ও খিলক্ষেতের একাংশ লকডাউন করা হয়েছে। মগবাজার, পুরানা পল্টন, শাহবাগ, ইস্কাটন, বাড্ডা, নিকুঞ্জ, আশকোনা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কিছু গলি, আংশিক এলাকা ও বাসাবাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এ ছাড়া শেরেবাংলা নগর এলাকার মোতাহার বস্তির এক বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর বুধবার থেকে বস্তিটি লকডাউন করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D