সিলেট ৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৫১ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০২০
অনলাইন ডেস্ক
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। আরও তিন জেলায় এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল পর্যন্ত দেশের ৩১ জেলায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন জেলা ও এলাকা সংক্রমণের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। গতকাল শনিবার নতুন আরও ৫৮ জনের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮২ জনে পৌঁছাল। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩০ জনে।
মোট আক্রান্তের ৫২ দশমিক ০৭ শতাংশ রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। এর পরই নারায়ণগঞ্জে ১৭ দশমিক ২১ শতাংশ। নারায়ণগঞ্জকে এরই মধ্যে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইইডিসিআর। এখান থেকেই দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ঘটেছে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৭০ দশমিক ১৩ শতাংশ পুরুষ এবং নারীর সংখ্যা ২৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আক্রান্তদের ৫১ দশমিক ৬৫ শতাংশের বয়স ১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। আবার মৃতদের বেশিরভাগের বয়স ৫০ বছরের ওপরে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আক্রান্তদের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে দেশের অন্যত্র ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। আগে থেকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিলে হয়তো ভয়ানক পরিস্থিতি এড়ানো যেত। কিন্তু সংশ্নিষ্টদের ব্যর্থতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। শুরু থেকেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাজে সমন্বয়ের অভাব লক্ষ্য করা গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একেক জন একেক ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। এ থেকেই বোঝা যায়, তারা কতটা সমন্বয়হীনভাবে কাজ করছেন। আশা করি তারা এটি বুঝবেন। সমন্বিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। অন্যথায় এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিধি বাড়ানো সংক্রান্ত স্বাস্থ্য বিভাগের ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে আখ্যায়িত করে ডা. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, শুরু থেকেই বলে আসছি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাড়ান। কিন্তু তারা বাড়ায়নি। এতে ভাইরাসটি বিস্তৃতির যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু ভালো খবর, শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগ মনে করেছে, পরীক্ষা বাড়াতে হবে। যত বেশি পরীক্ষা করা যাবে তত বেশি ঝুঁকি কমবে। পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে আইসোলেশন এবং তার সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া গেলে এই ভাইরাস বিস্তারের সুযোগ পায় না। সে জন্যই পরীক্ষা বাড়ানোর প্রয়োজন।
আইইডিসিআরের তথ্যে দেখা যায়, আক্রান্ত ৪৮২ জনের মধ্যে ২৫১ জন রাজধানীর বাসিন্দা। আর ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জে ৮৩ জন। অন্যদিকে ঢাকা জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ জন। মোট আক্রান্তের মধ্যে এ জেলার দখলে ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ ছাড়া মাদারীপুরে ১৩, গাজীপুরে ১২, মুন্সীগঞ্জে ১১, কিশোরগঞ্জে ১০, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় আটজন করে, রাজবাড়ীতে ছয়, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও গাইবান্ধায় পাঁচজন করে, নরসিংদী, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চারজন করে, জামালপুরে তিন, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, রংপুর, নীলফামারী ও শেরপুরে দু’জন করে আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন কেরানীগঞ্জ, শরীয়তপুর, কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, নেত্রকোনা, বরগুনা ও পটুয়াখালীতে।
বেশি ঝুঁকিতে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা : আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষ। আক্রান্ত ৪৮২ জনের মধ্যে ১০৮ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তারা মোট আক্রান্তের ২২ দশমিক ৪০ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সের ৯৫ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৯২ জন, ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৬৩ জন, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ৩৫ জন এবং ১ থেকে ১০ বছর বয়সী ১৪ জন। হিসাব করলে দেখা যায়, ১ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ২৪৯। অর্থাৎ এই বয়সসীমার মধ্যে রয়েছে মোট আক্রান্তের ৫১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
রাজধানীর ৭০ এলাকায় সংক্রমণ : রাজধানী ঢাকার ৭০ এলাকায় করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে। গত শুক্রবার এ সংখ্যা ছিল ৬১। গতকাল শনিবার আরও ৯টি এলাকায় সংক্রমণের বিস্তার ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত পাওয়া গেছে টোলারবাগে; ১৯ জন। এ ছাড়া উত্তরায় ১৫ জন, ধানমন্ডিতে ১৪ জন, ওয়ারীতে ১৩ জন, বাসাবোতে ১২ জন, যাত্রাবাড়ী ও লালবাগে ১১ জন করে; মিরপুর-১১ নম্বর ও মোহাম্মদপুরে ১০ জন করে; বনানী ও বংশালে ৭ জন করে; গ্রিন রোড ও মিরপুর-১ নম্বরে ৫ জন করে; বসুন্ধরা, গুলশান, হাজারীবাগ এবং মিরপুর-১০ ও ১২ নম্বরে ৪ জন করে; বাড্ডা, বেইলী রোড, চকবাজার, জিগাতলা, মহাখালী ও সোয়ারীঘাটে ৩ জন করে; আগারগাঁও, আজিমপুর, বাবুবাজার, গেন্ডারিয়া, গুলিস্তান, হাতিরপুল, ইসলামপুর, কোতোয়ালি, লক্ষ্মীবাজার, মালিবাগ, মীরহাজারীবাগ, মিরপুর-৬ ও ১৩ নম্বর, মগবাজার, পরীবাগ, পুরানা পল্টন, রাজারবাগ, শাহআলী বাগ, শাহবাগ, শান্তিনগর ও তেজগাঁওয়ে ২ জন করে; আদাবর, আশকোনা, বেগুনবাড়ী, বেড়িবাঁধ, বছিলা, বুয়েট এলাকা, সেন্ট্রাল রোড, ঢাকেশ্বরী, ধোলাইখাল, দয়াগঞ্জ, ইস্কাটন, হাতিরঝিল, কামরাঙ্গীচর, কাজীপাড়া, কদমতলী, মানিকদি, মিটফোর্ড, মুগদা, নারিন্দা, নিকুঞ্জ, রামপুরা, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া এবং উর্দু রোডে ১ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন।
নতুন আক্রান্ত ও মৃতদের তথ্য : গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৪ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এর আগে আক্রান্ত ৩ জন সুস্থ হয়ে ওঠায় মোট ৩৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। গতকাল শনিবার ভার্চুয়াল বুলেটিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। এটা ইতিবাচক।
আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ৪৮ জন পুরুষ এবং ১০ জন নারী। আক্রান্তদের মধ্যে ১৪ জন ঢাকার এবং ৮ জন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। নতুন রোগীদের মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তির সংখ্যা ১৭। এটিই সর্বাধিক সংখ্যা। এর পর ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৈশ্বিক অবস্থা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী আমরা বুঝতে পারছি, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। আমরা কমিউনিটি পর্যায়ে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশের প্রত্যেকটি ইউনিয়নের পরিস্থিতি আমরা জানতে চাই। একইভাবে প্রতিটি গ্রামের পরিস্থিতিও জানতে চাই। সে জন্য পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহার করে কমিউনিটি পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
মহাপরিচালক বলেন, আমরা বিভিন্ন শহর থেকে পর্যাপ্ত নমুনা সংগ্রহ করব। এর মাধ্যমে বুঝতে চাইব- বাংলাদেশের পরিস্থিতি কী। কোনো উপজেলা কিংবা ইউনিয়নে একজনও করোনা রোগী না থাকলে সেখানে যাতে সংক্রমণ না ঘটে সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একইভাবে সংক্রমণ পাওয়া গেলে, তা যাতে বাইরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্যও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সারাদেশে এ রকম একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। সে জন্য পরীক্ষার সংখ্যা প্রচুর বাড়াতে হবে।
ড. আজাদ বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ১৩ থেকে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে অন্যান্য হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সের সুরক্ষা আমরা নিশ্চিত করব। প্রয়োজনে সবাইকে পিপিই সরবরাহ করা হবে। একই সঙ্গে প্রত্যেক জেলায় কভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরির চেষ্টা করব।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
(পরিচালক)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি