ইউএনও ঊর্মির শেল্টারে পলাতক ডেভিলরা এখনো জনপ্রতিনিধির চেয়ারে

প্রকাশিত: ২:৫০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০২৫

ইউএনও ঊর্মির শেল্টারে পলাতক ডেভিলরা এখনো জনপ্রতিনিধির চেয়ারে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইউএনও ঊর্মি রায়ের শেল্টারে পলাতক ডেভিলরা এখনো দক্ষিণ সুরমার জনপ্রতিনিধির চেয়ারে। জনদূর্ভোগ থাকায় দফায় দফায় আওয়ামী ডেভিলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার পর ও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তিনি। তদন্তের নামে কেবল সৃষ্টি করছেন দীর্ঘ সূত্রিতা। এর মধ্যে ডেভিলরা সংগঠিত হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে বৈঠক করছে জনআতংক সৃষ্টি করতে। এমনকি তারা প্রকাশ্যে উপজেলা পরিষদ ভবনে ইউএনওর সাথে শলাপরামর্শ করে যাচ্ছে নিয়মিত। তাদের এহেন কার্যকলাপ ৫ আগষ্টের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এ নিয়ে বিভিন্ন দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন ইউনিয়নে অসন্তোষ বিরাজ করছে। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার লালাবাজার, জালালপুর, সিলাম ও দাউদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা বিগত পলাতক ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের সহযোগী ছিলেন। বিশেষ করে সিলেট ৩ আসনের কথিত সাংসদ হাবিবুর রহমান হাবিবের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন তারা।তৎকালীন সরকারের সহযোগী হিসেবে ছাত্র জনতার আন্দোলনকে মাঠে থেকে প্রতিরোধ করেছিলেন এসব জনপ্রতিনিধি। ৫ আগষ্টের পর এসব জনপ্রতিনিধিরা ও চলে যান লোক চক্ষুর আড়ালে। তারা হয়ে যান বিভিন্ন মামলার আসামী।নিজ নিজ পরিষদের সচিবরা এসব চেয়ারম্যানদের বাসা থেকে অফিসিয়াল কার্যক্রমের সীল স্বাক্ষর নিয়ে এসে পরিষদকে এ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরপর ও কয়েকটি ইউনিয়নের ভুক্ত ভোগী অধিবাসীরা দফায় দফায় যোগাযোগ করেন ইউএনও সহ উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে। তারপর ও হয়নি কোন সুরাহা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪ ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক থাকলেও প্রশাসনের সহযোগিতায় তারা দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তারা নিয়মিত অফিসে উপস্থিত না হওয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ মানুষদের। আওয়ামী লীগের পতনের পর বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে রয়েছেন এসব জনপ্রতিনিধিরা। তবে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে নিজেদের পদে বহাল রয়েছেন তারা। বর্তমানে অনেকটাই গোপনে অফিস করছেন। এতে সাধারণ নাগরিকরা সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছেন না। লালাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ত্বোয়াজিদুল হক তুহিনের বিরুদ্ধে তার নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। হত্যাসহ ৭ টি মামলার আসামী চেয়ারম্যান তুহিন গত ১ বছর যাবত নিয়মিত অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত রয়েছেন। বিশেষ করে ৫ আগষ্টের পর থেকে নিজেকে অনেকটা লুকিয়ে রেখেছেন। মাঝে মধ্যে অতীব জরুরি কাগজপত্রে বিশেষ কায়দায় স্বাক্ষর করে দিলেও তা নাগরিক প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ প্রদত্ত বিভিন্ন কর্মসূচি বা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিশেষ কৌশল অনুসরণ করে আসছেন। নিজের পছন্দমত লোককে অগ্রাধিকার দিয়ে এসব বিলি বন্টন করছেন। সুচারু ভাবে বিলি বন্টন না হওয়ার অত্র ইউনিয়নে জনরোষ ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে জন্ম ও মৃত্যু সনদ তৈরি বা গ্রহনে চরম দূর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন ইউনিয়নের নাগরিকরা। টিআর, ভিজিডিসহ ভিজিএফসহ অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমে চরম পক্ষ পাতিত্ব করে যাচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। এতে করে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় নাগরিক এবং একাধিক ইউপি সদস্যের অভিযোগের ভিত্তিতে গত মাসে লালাবাজার ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শনে আসেন স্থানীয় সরকার বিভাগ সিলেট এর পরিচালক মোঃ ফারুক আহমদ। তিনি সরাসরি বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে তুহিন চেয়ারম্যানকে বরখাস্তের সুপারিশ ও লিখে যান পরিষদের পরিদর্শন বহিতে। তারপর ও প্রশাসন এখনো তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। হত্যা মামলার পর মাঝে মধ্যে গোপনে অফিসে এসে নথিপত্রে স্বাক্ষর করে ফের অন্তরালে চলে যান তিনি। জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েস আহমদ , সিলাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ ওলিদ, দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল হক ও ‌‌উপজেলার মাসিক সভায় সরাসরি অংশ নেন না, তবে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সচিব উপস্থিত হন,এবং এসব ইউনিয়নের বরাদ্দ বুঝে নেন। পরে তারা তাদের নিরাপদ স্থানে বসে নিজেদের লোকদের মধ্যে বিলি বন্টন করেন। উপজেলার একাধিক বাসিন্দারা জানান, উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করেন না। জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। আর গোপনে থেকেও লুটপাট অব্যাহত রেখেছেন। এসব চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিল জনগণের আমানত ভোটরচুরি করে। সিলেটের বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা বরখাস্ত হয়েছেন, অথচ দক্ষিণ সুরমায় এই ৪জন এখনো স্বপদে বহাল আছেন। উপজেলার ৬ নং লালাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ত্বোয়াজিদুল হক তুহিনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দায়েরের পর কেন তাকে বরখাস্ত কিংবা প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় স্হানীয় সরকার সিলেটের উপপরিচালক সূবর্না সরকার এর সাথে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদন্ত করছেন। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। একাধিক মামলা, বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পরে ও তুহিনসহ অন্যান্য চেয়ারম্যান কিভাবে স্বপদে বহাল থাকে এ নিয়ে কথা হয় সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, স্থানীয় সরকার সিলেট বিভাগ সিলেট) দেবজিৎ সিংহ এর সাথে। তিনি বিষয়টি নিষ্পত্তি শেষে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল