নবীজি (সা.)-এর সিরাতে আছে আমাদের মুক্তির দিশা

প্রকাশিত: ২:১৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫

নবীজি (সা.)-এর সিরাতে আছে আমাদের মুক্তির দিশা

নবীজি (সা.)-এর সিরাতে আছে আমাদের মুক্তির দিশা

শায়খ আহমাদুল্লাহ

 

রসুল (সা.) ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন, এটা ঐতিহাসিকদের অনেকগুলো মতের একটি মত। এর বাইরেও আরও অনেক মত রয়েছে। তবে এ মতটি প্রসিদ্ধি লাভ করার কারণে পৃথিবীজুড়েই রবিউল আউয়াল মাসে নব উদ্যমে নবীজি (সা.)-এর জীবনী চর্চা ও আলোচনা শুরু হয়। যদিও বছরজুড়েই নবীজি (সা.)-এর জীবন নিয়ে আমাদের চর্চা করা দরকার। এর ফলে রসুল (সা.)-এর প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। রসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তান ও সমগ্র মানুষের চেয়ে প্রিয় না হব। (বোখারি)।

ভালোবাসা চর্চার বিষয়। চর্চা না করলে ভালোবাসা মরে যায়। চর্চা করলে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। আমরা নবীজি (সা.)-এর সৌরভময় জীবন নিয়ে যত আলোচনা করব, তাঁর প্রতি আমাদের মুগ্ধতা তত বৃদ্ধি পাবে। আমরা বিমোহিত হব। এর ফলে তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে আমরা প্রায়ই অমুসলিমদের মুসলমান হওয়ার সংবাদ শুনতে পাই। অমুসলিমরা প্রধানত দুটি কারণে ইসলাম গ্রহণ করে। এক. কোরআন চর্চা। দুই. রসুল (সা.)-এর জীবনী চর্চা। কোরআন এমন এক অমোঘ বাণী, যার ভিতর কোনো ত্রুটি নেই। অনেক অমুসলিম ত্রুটি খোঁজার উদ্দেশে কোরআন পড়তে গিয়ে এর ঐশী স্পর্শে মুসলমান হয়েছে। আবার নবীজি (সা.)-এর চরিত্র এমন সৌরভময়, আলোকজ্জ্বল, ঘোর শত্রুও তাঁকে নিয়ে গবেষণা করে মুগ্ধ হয়েছে। এ কারণে শত্রুতার বীজ বপন করতে এসে তাঁর জীবদ্দশায় অনেক মানুষ মুসলমান হয়েছে। আবার এ যুগেও বহু মানুষ তাঁর সিরাতের সান্নিধ্যে এসে মুসলমান হচ্ছে।

নবীজি (সা.)-এর চরিত্র এতটাই মাধুর্যমণ্ডিত এবং পূতপবিত্র ছিল, স্বয়ং আল্লাহ তাঁর উত্তম চরিত্রের সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই আপনি (হে মোহাম্মদ) সুমহান চরিত্রের অধিকারী (সুরা আল-কলম)। আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেছেন, তাঁর চরিত্র ছিল কোরআনময় (মুসলিম)। অর্থাৎ নবীজি (সা.)-এর প্রতিটি কথা, কাজ, আচরণ ছিল কোরআনের বাস্তব রূপ। কোরআনে যা আদেশ করা হয়েছে, তিনি তা পালন করতেন এবং যা নিষেধ করা হয়েছে, তিনি তা থেকে বিরত থাকতেন। এ কারণে কোরআনের অনুসরণ করতে হলে আমাদের রসুলের অনুসরণ করতে হবে। রসুলের (সা.) অনুসরণের মাঝেই সুপ্ত আছে কোরআনের অনুসরণ। মহান আল্লাহ নবীজি (সা.)-এর ব্যাপারে বলেছেন, ‘আর আমি আপনার জন্য আপনার জিকিরকে (স্মরণ) উচ্চ করে দিয়েছি।’ (সুরা ইনশিরাহ)। এ আয়াত নবীজি (সা.)-এর জন্য কতটা ধ্রুব সত্য, তা আমরা চারপাশে তাকালেই বুঝতে পারব। নামাজের জন্য প্রতিদিন পাঁচবার আজান দেওয়া হয়। আজানে মুয়াজ্জিন উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা দেন : আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসুলুল্লাহ। অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রসুল। ভৌগোলিক তারতম্যের কারণে সারা পৃথিবীজুড়ে প্রায় সারাক্ষণই কোথাও না কোথাও আজান হতে থাকে। আর সেই আজানে মুয়াজ্জিন নবীজি (সা.)-এর বড়ত্বের ঘোষণা দিতে থাকেন। নবীজি (সা.)-এর রিসালাতের এ ঘোষণা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কখনোই বন্ধ হয় না। আবার পৃথিবীতে যাঁর জীবনী সবচেয়ে বেশি লেখা হয়েছে, তিনি মুহাম্মদ (সা.)। এ মুহূর্তে আপনি যখন লেখাটি পড়ছেন, তখনো হয়তো পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে কোনো এক লেখক হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে নবীজি (সা.)-এর জীবনী লিখে চলেছেন। পৃথিবীজুড়ে লাখ লাখ পাঠক হয়তো এ মুহূর্তে পড়ে চলেছে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে লেখা সুবাসিত কোনো বই। ফলে আল্লাহ যে বলেছেন, তিনি তাঁর রসুল (সা.)-এর স্মরণকে উচ্চকিত করেছেন, তা এসব উদাহরণ থেকে দিবালোকের মতো পরিষ্কার। পৃথিবীতে বহু তারকা এসেছে, বহু তারকা গত হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীবাসী নবীজি (সা.) যেভাবে ভালোবেসেছে, অন্য কোনো তারকাকে তাঁর সিকিভাগও ভালোবাসেনি। ২০০ বছর আগে জন্ম নেওয়া কোনো তারকাকে আজ যদি গালি দেওয়া হয়, তবে তার প্রতিবাদ করার মানুষ পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রায় ১ হাজার ৫০০ বছর আগে যে মানুষটি চলে গেলেন, তিনি আজও এতটাই প্রাসঙ্গিক, আলোচিত এবং ভালোবাসায় সিক্ত যে তাঁকে কেউ গালি দিলে সারা পৃথিবী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। এটাই নবীজি (সা.)-এর প্রতি উম্মতের অনাবিল ভালোবাসার নমুনা। মহান আল্লাহ তাঁর রসুলকে আমাদের জন্য অনুপম আদর্শ হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তাঁর জীবনের সবকিছুই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পাথেয় ও নির্দেশনা। এ কারণে সাহাবিগণ সিরাত চর্চাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) এবং বারা ইবনে আজিব (রহ.) তাঁদের ছাত্রদের রসুলের জীবনী শিক্ষা দিতের এবং তাঁরা তা সংরক্ষণ করতেন। হোসাইন (রা.)-এর পুত্র আলি বলেন, ‘আমদেরকে কোরআনের সুরা যেমন গুরুত্বের সঙ্গে শিক্ষা দেওয়া হতো, রসুল (সা.)-এর জিহাদ ও অভিযানগুলোর ইতিহাসও সেভাবে শিক্ষা দেওয়া হতো।’

বর্তমানে বিভিন্ন পেশার অসংখ্য সফল মানুষ পাওয়া যাচ্ছে। বৈষয়িক উন্নতির প্রতিযোগিতা চলছে সব জায়গায়। কিন্তু ভালো মানুষ হওয়ার প্রতিযোগিতা কোথাও নেই। এ সংকটময় মুহূর্তে, প্রজন্মকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে রসুল (সা.)-এর সিরাত পাঠ, পর্যালোচনা ও তাঁর আদর্শ অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই।

জুমার মিম্বর থেকে গ্রন্থনা : সাব্বির জাদিদ

বিডি প্রতিদিন

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল