নাসের রহমানের বিরোধিতায় পদ গেল আবেদ রাজার

প্রকাশিত: ৬:৪৯ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০১৯

নাসের রহমানের বিরোধিতায় পদ গেল আবেদ রাজার

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম. নাসের রহমানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে প্রতিবাদ করায় এবার ‘বলির পাঠা’ হলেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা। আবেদ রাজাকে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা কমিটি। পাশাপাশি ওই পদে বিএনপির অন্য এক নেতাকে দায়িত্ব দিয়ে উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জেলা বিএনপি।

সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ.জেড. এম জাহিদ হোসেনের নির্দেশনায় আবেদ রাজাকে দুঃখ প্রকাশ, অনুশোচনা ও রেজুলেশন করতে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকলেও তিনি এবিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।

কেন্দ্রীয় এ নেতা শুক্রবার (২১জুন) বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, আবেদ রাজাকে দুঃখ প্রকাশ করতে আমি সরাসরি নির্দেশ কেনই বা দিতে যাবো। আবেদ রাজার বিষয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কি লিখেছে, সেটার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। জেলার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আমার রেফারেন্স যে দেয়া হয়েছে সেটায় আমি অবগত নই। এমনকি আমাকে কিছু বলা হয়নি। সাংগঠনিক হিসেবে জেলার কার্যক্রম দেখ ভালো করি। আমার কাছে এখন পর্যন্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে চিঠি কেউ পাঠায়নি।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার(২০জুন) রাতে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি এম নাসের রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে আবেদ রাজাকে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর থেকে কুলাউড়ার তৃণমূল বিএনপিতে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। এ নিয়ে কুলাউড়া বিএনপিতে চরম হতাশা কাজ করছে।

নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘদিন পর কুলাউড়া বিএনপির গ্রুপিং ভেঙে ঐক্যবদ্ধভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা। জানা যায়, গত ১৫ জুন কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন ধার্য্য করা হয়। ওই সম্মেলনকে ঘিরে কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার মোট ১২৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিল ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ গোপন ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। উপজেলার আহ্বায়ক কমিটির ১৩জন সহ ১৩ ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মোট ২৬ জন মিলে মোট ৩৯ জন কাউন্সিলরের গোপন ভোটের মাধ্যমে উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ওইদিন সকালে ‘অনিবার্য কারনবশত’ উল্লেখ করে জেলা কমিটি তা স্থগিত করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। জেলার এমন সিদ্ধান্তকে ‘অগণতান্ত্রিক’ উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে জেলার সভাপতি এম নাসের রহমানের পদত্যাগ দাবি করেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবেদ রাজাকে উপজেলা আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র এবং উক্ত কাউন্সিলের সভাপতি প্রার্থী কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুলাউড়া বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত করা হয়। কিন্তু আবেদ রাজা নেতাকর্মীদের কাছে সভাস্থলে জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্তপূর্ণ ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ.জেড. এম জাহিদ হোসেনের নির্দেশে গত ২০ জুন রাতে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়জুল করিম ময়ুনের বাসভবনে বৈঠকে আবেদ রাজাকে গর্হিত আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ, অনুশোচনা ও রেজুলেশন করতে বলা হলে তিনি তা অপারগতা প্রকাশ করেন। তাই তাঁকে উক্ত পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর থেকে কুলাউড়া বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষোভ বিরাজ করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিএনপি নেতা বলেন, গত কয়েক বছর আবেদ রাজা এককভাবে কুলাউড়া বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে কুলাউড়া বিএনপিতে এখন ঐক্যের সুর। দুই একজন সুবিধাবাদি নেতার ব্যক্তি স্বার্থে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত কুলাউড়া বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

জেলা বিএনপির এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন জুনেদ বলেন, আবেদ রাজা নিজে একজন সহসভাপতি হয়ে জেলা বিএনপির সভাপতিকে নিয়ে কটুক্তি করা সঠিক হয় নি। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দুর্বল নয়, বরঞ্চ আগের চেয়ে কুলাউড়া বিএনপি শক্তিশালী হবে।

আবেদ রাজাকে অব্যাহতির সত্যতা নিশ্চিত করে এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, এটা জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত।

অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আবেদ রাজার নেতৃত্বে গঠিত বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। তাই গ্রুপিং হওয়ার সম্ভাবনা নাই। এব্যাপারে আবেদ রাজা বলেন, আমরা যখন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি ঠিক তখন এরকম অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত যারা নিচ্ছেন তারা ইতিহাসের আস্তাখুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। এধরণের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত যারা নিচ্ছেন তাদেরকে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ প্রতিরোধ করবে।

কুলাউড়া প্রতিনিধি