১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:২১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০২০
অনলাইন ডেস্ক
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হল হজ। হজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। আর্থিক এবং শারীরিক সক্ষম প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জীবনে একবার হলেও হজ করাকে ফরজ করা হয়েছে। কারও হজ যদি কবুল হয়, তার জন্য আল্লাহতায়ালা পুরস্কার হিসেবে ঘোষণা করেছেন জান্নাত।
বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে মাত্র ১০ হাজার হজযাত্রী নিয়ে পালিত হচ্ছে এবারের হজ। আজ পবিত্র হজের মূলপর্ব বা আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিন। এদিনের অনেক ফজিলত রয়েছে। হাদিসে আছে, আলহাজ্জু আরাফাহ বা আরাফাই হজ।
সমস্ত হজযাত্রী বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করছেন। থাকবেন সন্ধ্যা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময় ৩টা ২৫ মিনিটে আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা দেয়া হয়। শেষ হয় ৩টা ৫৭ মিনিটে। খুতবা প্রদান করেন শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে সুলাইমান আল-মানিয়া।
তিনি আল্লাহতায়ালার প্রশংসা ও নবীজি (সা.) এর ওপর দরুদ পাঠ করার পর বলেন- হে মুসলিম সম্প্রদায়, আমি তোমাদের প্রতি উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা আল্লাহতায়ালাকে ভয় কর। এর মাধ্যমে আপতিত সব আপদ-বিপদ তিনি দূর করে দিবেন। আল্লাহতায়ালাকে ভয় করার অর্থ হল- সুখে-দুঃখে, শান্তিতে-অশান্তিতে আল্লাহতায়ালার কাছেই সমর্পিত হওয়া। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে তাঁর কাছেই চাওয়া। পৃথিবীর কোনো সৃষ্টির কাছে না চাওয়া। এটাই কালিমার দাবি।
কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমরা আল্লাহতায়ালার ইবাদত কর, তার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না।
তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালার ওপরে, তার সৃষ্ট ফেরেশতাদের ওপরে, আসমানি কিতাবসমূহের ওপরে, আগত সমস্ত রাসূলের ওপরে, কিয়ামত দিবসের ওপরে এবং ভালো-মন্দ যা কিছু হয় তা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে হয়- এ কথার ওপরে অন্তরে দৃঢ়বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা আমাদের জন্য একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা দিয়েছেন। ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) কুরআনের আয়াত পড়েছিলেন- আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং আমার নেয়ামতকে তোমাদের ওপরে পরিপূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য মনোনীত করলাম ইসলাম ধর্মকে।
খতিব বলেন, আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনের আরেক জায়গায় বলেছেন- হে ইমানদারগণ, তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর সবর এবং সালাতের মাধ্যমে। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।
হে মানব সম্প্রদায়, পৃথিবী দুঃখকষ্ট থেকে মুক্ত নয়। জীবনের পদে পদে আপদ-বিপদ আসবেই। তখন আমাদের নিরাশ হলে চলবে না। ধৈর্যধারণ করে আল্লাহতায়ালার কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের ঈমানকে যাচাই করতে চান। ধৈর্যধারণ করে সেই পরীক্ষায় আমাদের উত্তীর্ণ হতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদের ভয় দিয়ে, ক্ষুধা দিয়ে এবং জানমালকে সংকীর্ণ করে দিয়ে পরীক্ষা করব। সুসংবাদ ধৈর্যশীলদের জন্য।
হে মানবসম্প্রদায়, আল্লাহতায়ালার দয়া ও অনুগ্রহ অত্যন্ত প্রশস্ত। তিনি আমাদের জন্য সবকিছু সহজ করতে চান। পবিত্র কুরআনে আছে, প্রত্যেক কাঠিন্যতার সঙ্গেই সহজতা আছে। সাময়িক কিছু দুঃখ-দুর্দশা আমাদের জীবনে এলেও এর বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা আমাদের উত্তম বিনিময় দান করবেন।
তিনি বলেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহতায়ালার বিধান মানা আমাদের জন্য আবশ্যক; যা হালাল তা উপার্জন করতে হবে। আর যা হারাম তা পরিত্যাগ করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আছে- আল্লাহতায়ালা ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং রিবা তথা সুদকে হারাম করেছেন। তাই সুদ-ঘুষ খাওয়া যাবে না।
অন্যায়ভাবে কারও সম্পদ ভোগ করতে আল্লাহতায়ালা নিষেধ করেছেন। তাকদির আমাদের জন্য নির্ধারিত। মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে। পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা যাবে না। পরস্পরে ভাতৃত্ব ও সৌহার্দ বজায় রাখতে হবে। নারী-পুরুষ সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এটাই ইসলামের বিধান।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, আল্লাহতায়ালা তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা তার ইবাদত করবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাদের দু’জনের একজনকে বা দুজনকেই যদি বৃদ্ধ অবস্থায় পাও, তাহলে তাদের সামনে (তাদের আচরণে বিরক্ত হয়ে) উফ বলবে না এবং তাদের ধমক দিবে না। বরং তাদের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলবে।
হে মানবসম্প্রদায়, আল্লাহতায়ালা তোমাদের ন্যায় ও ইনসাফের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামে মানবজাতির জন্য এমন বিধিবিধান রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে সমশ্রেণির মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমরা আল্লাহতায়ালার রঞ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে ভেদাভেদ সৃষ্টি করো না।
বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) বলেছেন- সতর্ক হয়ে যাও, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমাদের প্রতি তোমাদের রক্ত ও মালকে হারাম করে দিয়েছেন। যেমন তোমাদের এদিন হারাম তোমাদের এই শহরে, তোমাদের এই মাসে।
হে মানবসম্প্রদায়, নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা কুষ্ঠরোগী দেখলে পলায়ন করো, যেমন বাঘ দেখলে পলায়ন করে থাক। তেমনিভাবে, তোমাদের কোনো এলাকায় যদি মহামারী দেখা দেয়, তাহলে সেখান থেকে বের হইও না এবং সেখানে প্রবেশ করো না।
এই হাদিসগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে উদ্ভূত মহামারীর কারণে সৌদি সরকার এবারের হজকে সীমিত পরিসরে আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয়। খাদিমুল হারামাইন শারিফাইন বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এবং তার সন্তান মোহাম্মদ বিন সালমানকে আল্লাহতায়ালা উত্তম বিনিময় দান করুন।
হে আল্লাহতায়ালার বান্দারা, আজকের এ আরাফাতের দিন দোয়া কবুলের দিন। আমরা নিজেদের জন্য, অন্য সবার জন্য এবং মহামারী থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করব। আল্লাহতায়ালা কুরআনে বলেছেন- তোমাদের প্রতিপালক বলছেন, তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা কর। আমি তোমাদের প্রার্থনাকে কবুল করব।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D