১৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:১৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৪, ২০১৯
স্বামী মারা গেছেন অনেক আগেই। নিজেদের জমি নেই, ঘরও নেই। তাই প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে এক বৃদ্ধা মাকে ঠাঁই নিতে হয়েছে বাঁশতলায়।
এমনই করুণ পরিস্থিতি মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার নাজিরাকোনা গ্রামের বৃদ্ধা হালিমা খাতুন ও ৪৫ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলে খুদির। নিরুপায় এই বৃদ্ধা বর্তমানে স্থানীয় শাঁয়েস্তা খান নামে এক ব্যক্তির করুণায় তার জমির বাঁশতলার নিচে একটি ছোট কুঁড়েঘর করে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘরের পাশেই রয়েছে বড় খাল। এ দিকে, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে খাল ভরাট হয়ে যেন ঘর ছুঁই ছুঁই করছে পানি। আর অল্প কিছুদিন এমন বৃষ্টি হলে হয়তো কুঁড়েঘরটিও হারাতে হবে তাদের।
সরকারিভাবে ভূমিহীনদের মধ্যে জমি ও ঘর দিলেও একটি ঘর কিংবা জমি জুটছে না তাদের কপালে। সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক বৃদ্ধা মায়ের নামে বয়স্ক ভাতার কার্ডের টাকা ও প্রতিবেশীদের সাহায্যের টাকায় কোনোরকম দিন কাটাচ্ছেন তারা।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশতলার নিচে কোনোমত একখানা ছাউনি তুলো খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নিয়েছে পরিবারটি। এ দিকে, খালটিও যেন চেয়ে আছে কখন ঘরটি ছুঁতে পারবে পানি। আবার পাশের ঘুরে বেড়াচ্ছে খাবারের সন্ধানে সদ্য পানি থেকে উঠে আসা বেশ কয়েকটি হাঁস।
বৃদ্ধা হালিমা খাতুন জানান, তার স্বামী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে তাদের। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট খুদি। মেয়েটির বিয়ে হওয়ায় সে এখন পরের বাড়িতে। ভাইগুলো সবাই নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। কেউ সেভাবে তাদের মা বা ছোট ভাইয়ের খোঁজ রাখে না। এমতাবস্থায় ছোট ছেলেটিই তার মায়ের দেখাশুনা করত। কিন্তু কয়েক বছর আগে মাঠে কাজ করতে গিয়ে নসিমন থেকে পরে প্রতিবন্ধী হয়ে যায় সে। এখন ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারে না। সারাদিন শুয়ে শুয়েই দিন কাটাতে হয় তাকে। এ দিকে, ছেলের চিকিৎসার জন্য নিজের নামে যেটুকু জমি ছিল তার সবটুকুই খোয়াতে হয়েছে। কিন্তু তাতেও ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে পারেননি তিনি। ভিটা জমি, ঘরবাড়ি শেষ হয়ে এখন নিঃস্ব। সয়-সম্বল বলতে ছেলের কাছে মা আর মায়ের কাছে ছেলে।
তাদের এ কষ্টকে কিছুটা নিবারণ করতে একই গ্রামের শাঁয়েস্তা খান নামে একজন ব্যক্তি নিজের জায়গায় থাকার এ ব্যবস্থাটুকু করে দিয়েছেন। শাঁয়েস্থা খানের দেওয়া আশ্রয়ে তাদের অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে।
বৃদ্ধা হালিমা খাতুন ও তার ছেলে
এ ব্যাপারে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে মুজিবর খাঁ জানান, তাদের কষ্ট দেখে আমাদেরও খুব খারাপ লাগে। আমরা সকলেই গরিব বংশের সন্তান। তাই আমারও পারিনা ভালোভাবে সাহায্য করে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে। তবুও যে যেমন পারে তেমনভাবে সাহায্য করে কোনরকম আহারটা জুটিয়ে দিচ্ছে তাদের। তিনি বলেন, আমরা চাই সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতি সুদৃষ্টি দিয়ে তাদের বসবাসের একটা ব্যবস্থা করে দিক।
এ দিকে, জমির মালিক শাঁয়েস্তা খান জানান, ‘তাদের এ কষ্টের কথা জানতে পেরে নিজের জায়গায় আশ্রয় দিয়েছি। এরপর তারা সেখানে বাঁশ দিয়ে কোনোমত ঘর তুলে সেখানে বসবাস করছেন। তাদের মতো একটি অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। কিন্তু এভাবে তাদের কতদিন চলবে? তবে, সরকার যদি তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে তাদের জন্যে খুবই ভালো হবে। এতে তারা একটু হলেও সুখের মুখ দেখতে পারবে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উসমান গনী জানান, বিষয়টি সম্পর্কে কেউ তাকে অবগত করেনি। ফলে এ বিষয়ে তিনি কোনো কিছুই জানতেন না। তবে, যদি এ ধরনের কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই দ্রুত সময়ে তাদের পুনর্বাসন করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সিলেটের দিনকাল ডেস্ক
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D