ফসল রক্ষা বাঁধ নিয়ে শঙ্কিত কৃষক, চাই সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনী ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ৯:৪২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০

ফসল রক্ষা বাঁধ নিয়ে শঙ্কিত কৃষক, চাই সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনী ব্যবস্থা

হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জের অন্যতম হাওর প্রধান এলাকা জামালগঞ্জে এবছর বাঁধের কাজের পিআইসি নির্ধারণের শুরু থেকে পিআইসি নিয়ে সর্বত্র আলোচনা সমালোচনা চলছে। প্রকৃত ও প্রান্তিক কৃষকদের উপেক্ষা করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক মধ্যস্বত্বভোগিদের ঢালাওভাবে পিআইসিতে অন্তর্ভুক্ত করণের কারণেই এসব সমালোচনা চলে আসছে বলে হাওরপাড়ের তৃণমূল কৃষক সমাজ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়িত হাওর বাঁধে সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে এ বছর প্রায় ৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমোদিত ৬৯টি প্রকল্পের অধিকাংশের কাজই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।

সংশ্লিষ্টদের তরফ থেকে মুখে মুখে ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এ রকম দাবী করা হলেও সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাস্তবে কোন কোন পিআইসিতে এখনও কাজই শুরু করেনি রাজনৈতিক প্রভাবে প্রণীত পিআইসিরা। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, এবছর জামালগঞ্জে ৬৯টি প্রকল্পের মধ্যে শনির হাওরের একাংশে রয়েছে ১২টি, পার্শ্ববর্তী মহালিয়া হাওরে ৫টি, পার্শ্ববর্তী হালির হাওরে ২৮টি, পাগনার হাওরে ২০টি, মিনি-পাগনায় ৩টি, জোয়ালভাঙ্গায় ১টি। এতে বিগত সময়ে ভাল কাজ করেছেন এরকম পিআইসিদের বাদ দিয়ে এবছর একপেশে রাজনৈতিক বলয়ের পিআইসি সিন্ডিকেট চক্রের হাতে হাওরের একমাত্র বোরোধান রক্ষায় প্রাণের বাঁধ নির্মানের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে।

যা বিগত ২০১৭ সালের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। গত বছর জামালগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন হাওরে ৫৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ফসল রক্ষা হলেও এবছর অতিরিক্ত ১৬টি প্রকল্প নতুন সংযোজন করে ৬৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর এতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পক্ষের দাপটে অধিকাংশ পিআইসিতে এবার পাত্তা পাননি জমি সংলগ্ন কোন প্রকৃত কৃষক। সবই স্থানীয় নানা রকমের পেশাজীবী নেতাকর্মী। এতে তৃণমূল জনমনে জেগেছে সিন্ডিকেট কর্তৃক বাঁধ নির্মানে মোটা দাগে বরাদ্দ লোপাটের আশংকা আর বাঁধ বিপর্যয়ের অজানা ভীতি। ইতোমধ্যে সিন্ডিকেট প্রণীত পিআইসির শম্বুক গতির মর্জিমাফিক কাজে শংকিত হয়ে পড়েছে তৃনমূল কৃষকেরা।

কারণ হিসেবে কৃষকরা জানান, স্থানীয় এই সিন্ডিকেট চক্রকে এলাকায় সর্বদায়ই টিআর, কাবিখা, খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহসহ সব ধরণের সরকারি বরাদ্দকৃত কাজে সম্পৃক্ত ও তৎপর থাকতে দেখা যায়। ঘুরে ফিরে এই সিন্ডিকেট চক্রই সরকারি বরাদ্দের সুযোগ সুবিধা লুফে নিচ্ছে। এখন হাওর বাঁধের দখলদারিত্বে এই স্বার্থান্বেষী মহল নেমে পড়ায় সমগ্র হাওর অঞ্চলে চরম অসন্তোষ জন্ম নিয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি জামালগঞ্জ উপজেলার বৌলাই নদীর দুইপাড় ঘেষা শনির হাওরের একাংশ সহ হালির হাওরের কয়েকটি বাঁধ প্রকল্পে গিয়ে হতাশাজনক চিত্র দেখা গেছে। যেসব পিআইসিতে সবেমাত্র কাজ শুরু হয়েছে এর সবকটিতেই আগাগোড়া অনিয়ম করে বাঁধে মাটি ফেলা হচ্ছে। কয়েকটি বাঁধে মাটির কাজে অগ্রগতি হলেও দুরমুজ দেওয়া হচ্ছেনা কোনটাতেই।

অনেকটাই গা ছাড়া ভাবে ভাড়াটে লোক বসিয়ে প্রকল্পের কাজ ঢিমেতালে চালানো হচ্ছে। অনেক বাঁধে পিআইসির কোন সদস্যকে পাওয়া যায়নি। শনির হাওর উপ-প্রকল্পের লালুর গোয়ালা নামক স্থানে ৭, ৮ ও ৯নং পিআইসিতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে সবেমাত্র এসকোভেটর মেশিন নামানো হয়েছে বাঁধে মাটি ফেলার জন্য। ৯নং পিআইসির সভাপতি দ্বীন ইসলামকে লাগোয়া ৭ ও ৮নং প্রকল্প স্থলে এসময় পাওয়া যায়। এলাকার সাধারণ লোকজন ও প্রান্তিক কৃষক কূলের দাবী জানিয়েছেন, প্রতি বছর চলে আসা হাওর বাঁধের এসব অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল