ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি বৃটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার

প্রকাশিত: ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি বৃটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি বৃটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার

ডেস্ক রিপোট

 

এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে বৃটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিলো। তাদের এই সিদ্ধান্তে বিশ্ব জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইল যখন গণহত্যা ও ধ্বংসলীলার মধ্যদিয়ে গাজা তথা গোটা ফিলিস্তিনকে দখল করে নেয়ার চেষ্টা করছে তখন পরিস্থিতি বিবেচনায় ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার। গতকাল এ বিষয়ে তিনি এক্সে একটি বিবৃতি দেন। তাতে বলেন, ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের মধ্যে শান্তির প্রত্যাশা করেন তিনি। একই সঙ্গে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের আশা ব্যক্ত করেন। তার এই স্বীকৃতির পর একে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করেছে ফিলিস্তিন। পক্ষান্তরে ক্ষুব্ধ হয়েছে গণহত্যা চালানো ইসরাইল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃটেনের এই সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেনগাভির তাৎক্ষণিকভাবে এই স্বীকৃতির পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে কি পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই বলেননি। বৃটেন, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার এই স্বীকৃতির মধ্যে দিয়ে জাতিসংঘের কমপক্ষে ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলো। জাতিসংঘের এত বিপুল সংখ্যক দেশের স্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার পরও ইসরাইল নৃশংসভাবে গাজায় ধ্বংসলীলা অব্যাহত রেখেছে। উল্টো তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে।

বেলফোর ঘোষণার ১০৮ বছর পর রোববার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিলো বৃটেন। তবে গতকাল প্রথমে এই স্বীকৃতি দেয় কানাডা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেন, কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং আমরা ফিলিস্তিন ও ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্য শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গঠনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কানাডার দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে দৃঢ় অবস্থান ছিল, কিন্তু এই সম্ভাবনা এখন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বীকৃতি প্রদানে দ্বিতীয় দেশ হলো অস্ট্রেলিয়া। কানাডা এবং বৃটেনের সঙ্গে সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তটি একটি আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ, যা শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে নিয়ে যাবে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে বৃটেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী এই পদক্ষেপের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মুখে আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে জীবিত রাখতে এবং দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এই সিদ্ধান্তকে হামাসের প্রতি কোনো পুরস্কার হিসেবে দেখা যাবে না বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। স্টারমার বলেন, হামাসের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, এবং তাদের কোনো সরকারি বা নিরাপত্তা ভূমিকা থাকবে না। হামাসের বিরুদ্ধে আগের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে সামনে নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে এই প্রক্রিয়ায় আরও আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এই স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন। বিশেষ করে বৃটেনের স্বীকৃতিকে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলে দেশটিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে লন্ডনে নিযুক্ত হাইকমিশন। এক বিবৃতিতে হাইকমিশন বলেছে, বহুল প্রত্যাশিত এই স্বীকৃতি আমাদের মাতৃভূমি ফিলিস্তিনের জনগণকে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীনতার অধিকার অস্বীকৃতির অবসান ঘটিয়েছে। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার, শান্তি এবং ঐতিহাসিক ভুল সংশোধনের বৃহৎ পদক্ষেপ বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বৃটেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হুসেম জোমলত। বৃটেনের সিদ্ধান্তকে ‘নতুন অধ্যায়ের’ সূচনা বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
এদিকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়াকে ‘অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু। ইউরোপ রাজনৈতিক প্রয়োজনে এই স্বীকৃতি দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বলেছেন, এই স্বীকৃতির প্রভাবে আত্মহত্যা করবে না ইসরাইল। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের এমন বিরোধিতা নতুন কিছু নয়। এর আগেও বৃটেন এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মতামত জানিয়েছে দেশটি। জাতিসংঘের এবারের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আরও কিছু দেশ স্বীকৃতি দেয়ার কথা রয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল