বন্যা ও প্রতিকার

প্রকাশিত: ২:৫৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০২৪

বন্যা ও প্রতিকার

মুহাম্মদ আমিরুল হক সরকার
সহকারি শিক্ষক( ইংরেজি)
দশঘর নিজামুল উলূম উচ্চ বিদ্যালয়,
বিশ্বনাথ, সিলেট।

ছোটকালে পড়েছিলাম বাংলাদেশ কে নদীমাতৃক দেশ বলা হয় কেন?
উত্তর শিখেছিলাম বাংলাদেশের চারিদিকে শত শত নদী মাকড়শার জালের মতো ঘিরে আছে এবং এই নদীগুলি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাণ। তাই বাংলাদেশ কে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়।
তখন থেকেই মাথার ভিতরে একটা অজানা চিন্তা জাগ্রত হল, তা হল নদী আবার প্রাণ হয় কেমনে? প্রাণের কাজ হল কোন ব্যক্তি বা প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখা। আবার আরও একটি কথা শিখতে পারলাম মাছে ভাতে বাঙালি।এই দু’টি প্রশ্নের উত্তর খুজতে শুরু করলাম। এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলি না,কারণ পরে আবার আমাকে নিয়ে যদি হাসাহাসি করে।
যাক, প্রসঙ্গে চলে যাই। ছোটকালে যে জিনিস দেখতাম বর্ষাকাল আসলেই বাড়ির পাশে খালের মধ্য দিয়ে প্রবল বেগে পানি নদী কিংবা বিলে ছুটে যেত। সমবয়সী যারা ছিলাম একসাথে সাঁতার কাটতাম,লাফিয়ে পড়তাম কেউবা জাল (অথবা অন্যান্য উপকরণ) দিয়ে মাছ ধরতাম। যাদের বাড়ি ছিল নদীর পাশে তাদের আনন্দটা আরো বেশি হত। গাছে চড়ে নদীতে লাফিয়ে পড়ত।
সম্মানিত পাঠক, আমি মনে হয় আবেগ তাড়িত হয়ে অন্যদিকে চলে গিয়েছি। ফিরে আসছি নদী প্রসঙ্গে।
আগেরকার দিনে দেখতাম নদীতে পাল তুলে চলত কত রঙ- বেরঙের নৌকা।পানসী নৌকা,ডিঙি নৌকা( আঞ্চলিক নামে আরও অনেক ধরণের নৌকা) মালবাহী বড় বড় নৌকা,লঞ্চ,স্টিমার। লঞ্চ,স্টিমার ও বড় বড় নৌকার মাধ্যমে খুব সহজ ও কম খরচে মালপত্র আনা নেওয়া ও যাতায়াত করতে পারত। নদীর বুকে মাতামাতি করতো হাজারো ঢেউয়ের খেলা।নদীর দুুইধারে সুশোভিত ছিল নানারকম বৃক্ষ।পাল তোলা নৌকা নিয়ে গাঁয়ের বধূ বাপের বাড়ি বেড়াতে যেত। চলত নৌকা বাইচ খেলা। যাক, প্রসঙ্গে ফিরে যাই।
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বর্ষা ঋতু হলো দ্বিতীয় ঋতু। গ্রীষ্মের পরেই তার আবির্ভাব।গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ,মাঠ ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যায় ফসল নষ্ট হয়, তাদের জীবনে আশির্বাদ হয়ে আসে বর্ষা।বর্ষা কোন অভিশাপ নয় বরং আশির্বাদ। চারিদিকে থৈ থৈ করে পানি,দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। বর্ষাকে ভালোবাসে না এমন মানুষ নাই বললেই চলে। বর্ষা নিয়ে রচিত হয়েছে হাজারো কবির কবিতা, গান,লোকগীতি সহ নানা ধরণের গান। গাছে গাছে ফুটে কদম, কেয়া ফুল।সে যেনো এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।প্রকৃৃতি প্রেমীদের মনে জেগে উঠত নতুন প্রেমের জোয়ার।
বর্ষায় অবিরাম বৃষ্টির পানিতে ভরে যেত নদী, নালা, খাল,বিল।বৃষ্টির পানি নদী, খাল,বিলে পতিত হত।নদীগুলি তার বুকে ধারণ করত বর্ষার পানি।বর্ষার পানি কে আগলে রখতো তার বুকে।ভয়াবহ বন্যা থেকে রক্ষা করতো দেশের মানুষের প্রাণ, ঘর,বাড়ি,গাছপালা,রাস্তাঘাট,গবাদি পশু সহ অনেক কিছু।নতুন পানির খেলা দেখতে গ্রামের লোকেরা
নদীর ঘাটে যেত। কারো মনে কষ্ট থাকলে নদীর পাশে বসে নদীর পানির খেলা দেখে মনে আনন্দ পেত। নদী থেকে বহে যাওয়া বাতাস মনকে শীতল করে দিত।
ফিরে আসি হেমন্তকালে।নদীর পানি সেচ দিয়ে গ্রামের কৃষক তার ফসলের মাঠে উৎপাদন করতো হাজার হাজার টন সোনালি দান। আনন্দে ভরে যেত তাদের মন।গ্রামের লোকেরা দল বেধে ফলো(মাছ ধরার এক প্রকার উপকরণ) দিয়ে বড় বড় রুই,কাতল, আইড়, বোয়াল সহ বিভিন্ন প্রকার বড় বড় মাছ শিকার করত। বর্তমান প্রজন্মের কাছে আজ এই কথা গুলি হচ্ছে রূপকথা।কেননা এর প্রমাণ এখন বাস্তবে দেওয়া যায় না।
কারণঃ দেশের মধ্যে ছড়িয়ে আছে হাজার নদী।কিন্ত নদীতে আজ পাল তোলা নৌকা চলে না।চলে না পানসি নৌকা।হয়না দল বেধে মাছ ধরা। মন খারাপ হলে কেউ আজ নদীর কাছে যায় না।
যাদের বুকে ছিল হাজারো ঢেউয়ের মাতামাতি,তাদের কি হল আজ নদীগুলির কি অবস্থা?
নদীকে বানানো হচ্ছে ডাস্টবিন,দুই পাশে গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ ঘর,বাড়ি,দোকানপাট,শিল্প কারখানা।
ফলে হারিয়ে ফেলেছে তাদের নাব্যতা।হারিয়েছে গভীরতা,কমে যাচ্ছে তাদের প্রশস্থতা।কোথাও কোথাও নদীগুলি খালে পরিণত হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই নদীগুলি আগের মতো তার বুকে পানি ধারণ করতে পারেনা বলেই দেশে প্রতিবছর ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়,ধ্বংস হাজার ঘর বাড়ি, ফসল।
প্রতিকারঃ যে সমস্ত নদ-নদ ভরাট হয়ে গেছে এগুলিকে খনন করা এবং যে অংশে নদীগুলি বিভিন্নভাবে দখল হচ্ছে সেগুলি সরকারের পাশাপাশি দেশের সর্বস্তরের জনগণ একসাথে মিলে উদ্ধার করা,নদী খনন অব্যাহত রাখা,নদীর বুকে ময়লা ফেলা বন্ধ করা,যাতে নদী ফিরে পায় তার নাব্যতা, তাহলে হয়তো এই ভয়াবহ বন্যার হাত থেকে এদেশ শতভাগ রক্ষা না পেলেও সিংহভাগ রক্ষা পাবে।

বাঁচাও নদী,বাঁচাও দেশ
গড়বো সোনার বাংলাদেশ।