২৯শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৪, ২০২০
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলাকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি গণ ভবন থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা করেছিলেন। তবে বন বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগের রশি টানাটানিতে শতভাগ বিদ্যুতের আওতাভুক্ত হতে পারেনি কমলগঞ্জের আদমপুর বনবিট এলাকায় কালেঞ্জী খাসিয়াপুঞ্জি ও পুঞ্জির বাহিরের কালেঞ্জী গ্রাম। নতুন করে কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি ও গ্রামে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু হলে শনিবার দুপুর ১২টায় কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জির প্রবেশ পথে পুঞ্জি ও গ্রামের নারী পুরুষ মিলে দুই শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জির বিদ্যুতায়নে বন বিভাগের বাঁধা ও বিদ্যুতের দাবিতে মানবন্ধন কর্মসূচি শুনে শনিবার (৪ জুলাই) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৫শ’ ফুট উপরে পাহাড়ি টিলার স্তরে স্তরে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসতঘর। আঁকা বাঁকা পথে ১৫২টি সিড়ি বেঁয়ে টিলার উপরে পুঞ্জির হেডম্যানসহ অন্যদের বাসায় পৌঁছতে হয়। খাসিয়া পুঞ্জির ৯৫ পরিবারে প্রায় ৬শ’ লোকসংখ্যা। তাদের আয়ের প্রধান উৎস জুমের খাসিয়া পান ও লেবু। পুঞ্জির পার্শ্ববর্তী কালেঞ্জী গ্রামেরও ৫০টি পরিবারে প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক লোকের বসবাস। তবে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগেও বিদ্যুতায়ন পৌঁছেনি এ দু’টি গ্রামে। রাস্তারও বেহাল দশা।
খাসিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা বলেন, মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ঘোষণা করেছে। অথচ এই দু’টি গ্রাম এখনও বিদ্যুতায়নের আওতায় আসেনি। কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জির ৯৫ পরিবারের দৈনন্দিন নানা সমস্যায় জর্জরিত পুঞ্জির সদস্যরা। বন বিভাগের আপত্তির কারণে এ দু’টি গ্রামে বিদ্যুতায়ন সম্ভব হচ্ছে না। পুঞ্জির নারী পুরুষ সদস্যরা টিলার নিচের কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে টিলার উপরে তুলে নিয়ে আসেন। বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্ত হলে বৈদ্যুতিক পাম্প বসিয়ে নিচ থেকে টিলার উপরে ঘরে ঘরে পানি তোলা যেতো।
পুঞ্জি হেডম্যান রিটেঙেন খেরিয়াম বলেন, বিদ্যুৎ ও রাস্তাঘাটের সমস্যার কারণে আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও বন বিভাগ অহেতুক কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জির বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনে বাঁধা দিয়েছে। কমলগঞ্জ সরকারিভাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিলেও কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি ও তৎসংলগ্ন গ্রাম বিদ্যূতায়নের বাহিরে রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর আবারও বনবিভাগ জরিপ কাজ করে। এ জরিপ কাজ শেষে শনিবার (৪ জুলাই) সকাল থেকে আবারও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কালেঞ্জ পুঞ্জিতে নতুন করে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করেন। আর তখনও বন বিভাগের লোকজন এ কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে। আর তার প্রতিবাদে দুপুরে কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জির ৯৫ পরিবারের সদস্য ও সাথের গ্রামের ৫০ পরিবারের সদস্য মিলে দুই শতাধিক নারী পুরুষের অংশ গ্রহনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
পুঞ্জির হেডম্যান রিটেঙেন খেরিয়াম-এর সভাপত্বিতে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন,পুঞ্জির সহকারী হেডম্যান উয়াংবর সুটিং ,সাবেক হেডম্যান নাইট খেরিয়েম,সামায়েরখেরিয়াম প্রমুখ। এসময় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি কমলগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুয়ায়িত ঘোষনা করা হলে ও আমরা কমলগঞ্জের বাসিন্দার বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি। তাই অতিশ্রীঘই আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার দাবী জানাচ্ছি। অন্যতায় আমরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবো।
আদমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি ও তার সাথের গ্রাম বিদ্যুতায়নের আওতায় আসতে হবে। গত মার্চ মাসে বন বিভাগ সর্ব শেষ সরেজমিন তদন্ত করেছে। শনিবার বিদ্যুৎ বিভাগ আবার কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি ও সাথের গ্রামে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু বন বিভাগ বাঁধা সৃষ্টি করে। যাহা সম্পূর্ণরুপে অযোক্তিক। তিনি আরও বলেন বনাঞ্চলে অন্যান্য খাসিয়া পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও কেন বন বিভাগ কালেঞ্জী পুঞ্জিতে বাঁধা সৃষ্টি করছে তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
আদমপুর বনবিট কর্মকর্তা শ্যামল রায় বলেন, কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জিও গ্রামে বিদ্যুতায়নের জন্য ইতিপূর্বে বন বিভাগ একটি জরিপ সম্পন্ন করলে বিদ্যুতায়ন কাজ শুরুর করার সম্পর্কে তার কাছে বন বিভাগের কোন নির্দেশনা আসেনি। তাই তিনি আপাতত কাজটি বন্ধ রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলেছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী আশেকুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় কমলগঞ্জে শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত হলেও কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি ও একটি গ্রাম বিদূৎ সুবিধার বাহিরে রয়েছে। বন বিভাগের বাঁধা তা হচ্ছে উল্লেখ্য করে তিনি বলে বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র দাশ বলেন, কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি ও কালেঞ্জী গ্রামকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে কাজ শুরু হয়েছিল। ঠিকাদারের লোকজনও খাসিয়া পুঞ্জি এলাকায় বৈদ্যুতিক খুটিও এনে রাখে। শুধুমাত্র বন বিভাগের আপত্তির কারণে এ দুটি গ্রামকে এখনও বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা যায়নি। এ নিয়ে মাস ৩ আগে বন বিভাগ জরুরীভাবে জরিপও করেছে। তা হলে কেন তারা এখনও বাঁধা প্রত্যাহার করছে না তা বোঝা যাচ্ছে না। শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চত করতেই শনিবার থেকে আবারও ঠিকাদারের লোকজন বিদ্যুতায়নের কাজে বাঁধা দেয়।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
(পরিচালক)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D