১৩ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৫৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০১৬
১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা দখল করে জাহাজভর্তি করে নিয়ে আসে অভিবাসী শ্রমিক। তাদের অনেকেই সেসময় ফিরে গেলে ও অনেকেই আবার থেকে যান ব্রিটেনে। এর আগে কালপানি পাড়ি দিয়ে বাঙালীরা বিলেতে আসার ইতিহাস জানা যায় না। সেই হিসাবে প্রায় ২৫৮ বছরের ইতিহাস। ১৮৬০ সালে জ্ঞানেন্দ্র মোহন ঠাকুর লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে পড়াতে আসার ইতিহাসও যানা যায়। রাজা রামমোহন রায় দ্বারকানাথ ঠাকুরের শেষ ঠিকানাও হয়েছিলো ব্রিটেনের মাটিতে। মূলত ৬০ এর দশকে এদেশে স্থায়ীভাবে থাকা শুরু করেন বাঙালীরা। কিন্তু দূরপরবাসে ভিন্ন ভাষায় কি মন ভরে? মানুষ ও বৃক্ষের মতো যেখানে স্থিত হয় শিকড় গজায়। তাইতো সাত সাগর তের নদী পাড়ি দিয়েও ব্রিটেনে গড়েছে তাদের স্থায়ী আবাস। ছড়িয়ে দিয়েছে তাদের ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে। আর সেইক্ষত্রে সংবাদপত্রের ছিলো বিশাল ভূমিকা। ব্রিটেনের প্রান্তিক শ্রেণী থেকে এখন নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে অবস্থান অভিবাসী তৃতীয় প্রজন্মের। সেই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন পূর্বসূরিরা, তাদের শ্রমে ঘামে ভিত্তি গড়েছেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। সেই কঠিন সময়ে নিজেদের সুখ-দুঃখ, অর্জন পাওয়া না পাওয়া, বলার জায়গা হাজার হাজার মাইল দূরে নিজের মাতৃভাষায় পত্রিকা তাও আজ থেকে শত বছর পূর্বে অকল্পনীয়ই বটে। সেই কঠিন কাজটাই করে গেছেন তারা।
‘নানান দেশের নানান ভাষা। বিনে স্বদেশীয় ভাষা, পুরে কি আশা? কত নদী সরোবর কিবা ফল চাতকীর ধারাজল বিনা কভু ঘুচে কি তৃষা ?’ ( রামনিধি গুপ্ত) কবির সেই পংতিমালা মানুষের জন্য সত্যের চেয়েও বেশি সত্য।
১৯১৬ সালের ১নভেম্বর পাক্ষিক ‘সত্যবাণী’ পত্রিকার মধ্য দিয়ে ব্রিটেনে বাংলা পত্রিকার শুভযাত্রা। লন্ডন স্ট্রান্ডের মিলফোর্ড লেন থেকে প্রকাশিত হতো পত্রিকাটি। বাংলা হিন্দি ও ইংরেজিতে পত্রিকার নামের লোগো ব্যবহার করা হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের বীরত্বগাঁথা প্রচার করতো পত্রিকাটি। এর ধারাবাহিকতায় ১০০-এর অধিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটেন থেকে। সাপ্তাহিক জগত বার্তা ১৯৪০ সালের ১৮ অক্টোবর আধাপেন্স মূল্যের ৪ পৃষ্ঠার পত্রিকার পথচলা শুরু।
১৯৫০ সালের ১লা এপ্রিল পাকিস্তানী খবর নামে পাকিস্তান হাই কমিশনের উদ্যোগে বিনামূল্যে বিতরণ করা হতো পাকিস্তান সরকারের সাফল্য গাঁথা প্রচার করা হলেও পূর্ব পাকিস্তানের খবরা খবর ও জাহাজি জাহান নামে আলাদা বিভাগ ছিলো পূর্ব বাংলার জন্য, যদিও সেখানে সিলেট অঞ্চলের সংবাদই বেশি ছাপা হতো।
বিলেতে বাংলা সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের ঐতিহাসিক পরিবর্তন আসে ১৯৫৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সাংবাদিক তাসাদ্দুক আহমদের সম্পাদনায় হাতে লিখে প্রকাশিত হয় মাসিক পত্রিকা দেশের ডাক। ফটোকপি করে পত্রিকাটির ১০০ কপি বিলি করা হতো। সে সময় লন্ডনের কোথাও বাংলা টাইপ রাইটার না পেয়ে তারা হাতে লিখেই শুরু করেছিলেন। তাসাদ্দুক আহামেদ এক স্মৃতিচারণায় লিখে গেছেন ‘১৯৫৪ সালে লন্ডনের কোন কোম্পানিতে আমরা বাংলা টাইপ রাইটারের সন্ধান না পেয়ে রেমিংটনের আমেরিকান শাখার শরণাপন্ন হই। রেমিংটন আমাদের ভরসা দিয়ে জানালো যে, জাহাজ যোগে আমাদের জন্য একটি টাইপ-রাইটার মেশিন পাঠাবে। টাইপ রাইটার আসার অপেক্ষা না করেই আমরা হাতের লেখা ‘দেশের ডাক’ বের করলাম। আমরা তখন দু’একজন। তখন মান্নান সাহেবের কেন্সংটন ২৯ নং সেন্ট মেরী এব্যাটস টেরাসের বাড়িতে থাকতাম। এই ঠিকানা থেকেই প্রথম ‘দেশের ডাক’ ১৯৫৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। মুলত ১৯৬১ সালের ১৪ আগস্ট মাসিক দেশের ডাক তৃতীয় পর্যায়ে নিয়মিত প্রকাশনার জগতে প্রবেশ করে। তবে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারির পর আর পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় নাই বলে সাংবাদিক ও গবেষক নুরুল ইসলাম তার ‘প্রবাসীর কথা’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন।
১৯৬০ সালের জানুয়ারি মাসে ব্যারিস্টার আলী মোহাম্মদ আব্বাস কর্তৃক হাতে লিখা আরেকটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যার নাম ছিলো মাসিক ‘আমার দেশ’। বাংলা, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত একটি ত্রিভাষিক পত্রিকা। ‘আমার দেশ’ প্রথম থেকেই কখনো তিন ভাষায় একসঙ্গে আবার কখনো আলাদাভাবে বাংলায় সম্পাদনা করতেন যুগ্মভাবে আবুল হায়াত ও ব্যারিস্টার আলী মোহাম্মদ আযহার। ইংরেজিতে ‘আওয়ার হোম’ সম্পাদনা করতেন ব্যারিস্টার আলী মোহাম্মদ আব্বাস। উর্দুতে ‘হামারা ওয়াতন’ সম্পাদনা করতেন আব্দুল ওয়াহিদ। কাগজটির অন্যতম সহযোগী আবুল হায়াত এমনটাই বলেছেন। পক্ষান্তরে সিলেট থেকে প্রকাশিত প্রাচীনতম বাংলা সাপ্তাহিক ‘যুগভেরী’ পত্রিকার এক কালীন সম্পাদক মো. জহুর আলীর মতে কাগজটি ১৯৫৪ সালের মধ্যভাগে প্রকাশিত হয়েছিলো। তিনি ‘শিরোনাম’ পত্রিকার এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘আমি ১৯৫৯ সালের ৪ অক্টোবর এদেশে আসি এবং ব্যারিস্টার আলী মোহাম্মদ আব্বাসের সঙ্গে পাকিস্তান হাই কমিশন অফিসে দেখা হয়। তিনিই ‘আমার দেশ’পত্রিকাটি আমাকে দেন এবং একজন বাঙালী হিসাবে আমি তা গ্রহণ করি। বলা বাহুল্য আবুল হায়াতও ঠিক একই সালে বিলেতে আসেন। এবং ১৯৬০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হতে থাকে, আবুল হায়াত তখন পত্রিকাটির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬০ সালে আরো দুটি পত্রিকার নাম পাওয়া যায় একটি ত্রৈমাসিক ‘দেশ বিদেশ’ ও মাসিক সংবাদ। ১৯৬৩ সালে বের হয় মাসিক ‘মুসলিম’ মাসিক ‘চলের পথে’।
১৯৬৪ সালে এসে মোড় নেয় অন্যদিকে মে মাসে প্রকাশিত হয় মাসিক ‘পূর্ব বাংলা’। এটি প্রকাশনার পূর্ব প্রস্তুতিতে মূলত বাঙালীদের একতাবদ্ধ হবারও ইতিহাস রয়েছে। ১৯৫৩ সাল থেকে ‘পাকিস্তান ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন’ গঠনের মাধ্যমে সংগঠিত হবার ইতিহাস শুরু। এর পিছনে তাসাদ্দুক আহমদ, নুরুল ইসলাম, নাসিম আহমদ, নিসার আলী, বশির উদ্দিন আহমেদ, সিকন্দর আলী, ফকর উদ্দিন আহমদ, আব্দুল মান্নান ( ছানু মিয়া), কে.এ. মজিদ প্রমুখ সে সময় পাকিস্তানী সমিতিগুলোর সমন্বয়ে একটি জাতীয় ফেডারেশন গড়ার প্রচেষ্টা করেন।
১৯৬৮ সালে মে মাসে মো. সুলতানের সম্পাদনায় বের হয় ত্রৈমাসিক ‘দর্পণ’। তাদের প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয়তে লিখে; ‘প্রবাসে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম বাংলার বাংলা- ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের কোন মুখপত্র না থাকায় ‘দর্পণ’ তার অভাব দূর করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
দর্পণের ২য় সংখ্যা ১৯৬৮ সালের আগস্টে বের হবার পর কলকাতায় সাপ্তাহিক ‘দেশ’ আনন্দবাজার পত্রিকা, ও কলকাতা বেতারে এই প্রকাশনাকে একটি যুগান্তকারী প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করে।
১৯৬৮ সালের এপ্রিলে প্রাকশিত হয় প্রগতিশীল বামধারার পত্রিকা ‘শিখা’। যতদূর জানা যায় পাকিস্তানি নাগরিক নাদির হোসেন খানের আর্থিক সহযোগিতায় সাংবাদিক এ.টি.এম ওয়ালী আশরাফের সম্পাদনায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিলো। নাদির হোসেনের সঙ্গে মতের মিল না হওয়াতে তিন মাস পরেই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।
ব্রিটেনের লন্ডন কেন্দ্রিকই ছিলো সব প্রকাশনা। ১৯৬৮ সালে লন্ডনের বাইরে ম্যানচেস্টার থেকে সাপ্তাহিক ‘জাগরণ’ নামে ব্রিটেনের দ্বিতীয় সাপ্তাহিক হিসাবে যাত্রা শুরু করে। মূলত ১০ জন ডাইরেক্টর মিলে ‘The Jagoron’ নামে কোম্পানি গঠন করে এর কার্যক্রম শুরু করেন। ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ছিলেন আব্দুল মতিন এবং সেক্রেটারি এম বখত । ডাইরেক্টর ছিলেন সাঈদা নুরুন নাহার, আব্দুল মতিন, মো. ইউসুফ, এ. কালাম, বসারত আলী, এ.রহমান চৌধুরী, এম. বখত, নূরুল ইসলাম, এম.এ. কাইয়ুম ও এস ইউ আহমেদ।
১৯৬৮ সালেই পাকিস্তানি নাগরিক নাদির হোসেনের ‘শিখা’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বের করেন মাসিক ‘মশাল’ শেখ আব্দুল মান্নান ছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদক। ১৯৭০ সালে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৬৯ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বিলেতের বাঙালি ইতিহাসের আরেক গৌরবময় এক দিন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং ভারতের পশ্চিম বাংলার বাইরে লন্ডন থেকে বাণিজ্যিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে ব্রিটেনের প্রাচীনতম ও জনপ্রিয় এবং সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা সাপ্তাহিক জনমত, যা আর কিছুদিন পরেই উদযাপন করবে সুবর্ণ জয়ন্তী ( ৫০ বছর পূর্তি)। যা বাংলা সংবাদ পত্রের ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। ১৮ গ্যালভেস্টন রোড পূর্ব পাটনি থেকে প্রথম ‘আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে’ সংবাদ শিরোনাম দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল জনমত পত্রিকা। ১৯৬৯ সালের শিরোনামের সেই অগ্নিশিখা আজ আলো ছড়াচ্ছে বাংলা সংবাদপত্রের পথের দিশারী হয়ে। ভিন দেশে, ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি আবহে থেকে সম্পূর্ণভাবে নিজের ভাষা, ইতিহাস,সাহিত্য সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে, একটি দেশের জন্মযুদ্ধ্বে, জনমত গঠন, দাবি আদায়ের জোরালো কণ্ঠস্বর হয়ে প্রবাসে ঐতিহাসিক সংগ্রামী ভূমিকা রেখেছে জনমত পত্রিকা। ভারতীয় উপমহাদেশের বাহিরে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত সবচেয়ে দীর্ঘজীবী বাঙলা পত্রিকা হচ্ছে সাপ্তাহিক জনমত। সাংবাদিক এ.টি.এম ওয়ালী আশরাফ, ফজলে রাব্বী মাহমুদ হাসান, আনিস আহমদ ও এস.জেড.শাহ( ফিজির নাগরিক) ফজলে রাব্বী মাহামুদ হাসানের সম্পাদনায় ২০ পৃষ্ঠার পত্রিকাটি বাজারে আসে।
১৯৬৯ সালের অক্টোবর মাসে ইসলামিক মিশন থেকে ব্যারিস্টার কোরবান আলীর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত হয় মাসিক ‘দিশারী’ । এবং ধারনা করা হয় লন্ডন থেকে প্রকাশিত প্রথম ইসলামী পত্রিকা ‘দিশারী’। ১৯৬৯ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত হয় মাসিক ‘পদ্মা’, পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক ছিলেন শেখ আব্দুল মান্নান এবং সম্পাদক ছিলেন মো. গোলাম মোস্তফা।
১৯৭০ সালে ৩১ শে মে প্রকাশিত হয় সাহিত্য পত্রিকা ‘সাগর পাড়ে’ সম্পাদক ছিলেন হিরন্ময় ভট্টাচার্য্য।
১৯৭১ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে প্রকাশিত হয় পাক্ষিক ‘বিদ্রোহী বাংলা’ সম্পাদনায় ছিলেন সেলিম আহমদ, এ. ইসমাইল ও দীপু, ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন তারা। আসল নাম ছিলো আজিজুল হক ভূইয়া, সেলিম আহমদ ও আল মোজাহিদ নামে, ইসমাইল আজাদ এ.ইসমাইল, মোস্তাফিজুর রহমান দীপু, দিপু ছদ্মনামে লিখতেন। তৃতীয় সংখ্যার সম্পাদকীয়তে তাদের শিরোনাম ছিলো ‘আপোষ না সংগ্রাম’ । মূলত ‘ইষ্ট পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট’ এর উদ্যোগে বার্মিংহাম থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট’ কর্তৃক প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক ‘ জয়বাংলা’ সম্পাদক ছিলেন খায়রুল বাসার ও মোঃ নুরুল হুদা। বিচারপতি সাঈদ চৌধুরী তার ‘প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধে দিনগুলো’ গ্রন্থে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন কাগজটির। ১৯৭১ সালে ৩ এপ্রিল মঙ্গলবার মিডল্যান্ডস একশন কমিটির বুলেটিন ‘স্বাধীন বাংলা’র প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। দায়িত্বে ছিলেন এম.এ.এইচ.ভূইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান দীপু, ও ইসমাইল আজাদ প্রমুখ।
এর পর একে একে প্রচারিত হয় ‘রণাঙ্গন’ মাসিক ‘বাংলার কথা’ সাপ্তাহিক ‘মুক্তি’ ‘জয়বাংলা’ পাক্ষিক ‘গণযুদ্ধ’ সাপ্তাহিক ‘ জন্মভূমি’ সাপ্তাহিক ‘প্রলয়’ সাপ্তাহিক ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ সংবাদ পরিক্রমা’ ‘ মুক্তিযুদ্ধ’ সহ বহু পত্রিকা। ব্যবসা সফল পত্রিকা হিসাবে ধরা হয় ‘সুরমা’ পত্রিকাকে। ১৯৭৮ সালে ২০ মে ডা. বসির আহমেদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক ‘সুরমা’। ডা. বসির আহমেদের স্ত্রী আয়েশা আহমেদ ও তাদের ছেলেমেয়েরাই শুরুতে এর সহযোগী হিসাবে জড়িত ছিলেন।
১৯৮৭ সালে প্রখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর সম্পাদনায় বের হয় ‘নতুন দিন’ এছাড়া ভিলেজ ডাইজেস্ট, স্পাইস বিজনেস জাতীয় পত্রিকা ও বের হয়। ১৯৯৭ সালে ব্রডশীট পেপারে আসে সাপ্তাহিক ‘পত্রিকা’ সম্পাদক ছিলেন আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী।
পাক্ষিক সত্যবাণীর পথ বেঁয়ে ১০০ বছরের যাত্রাপথে বিলেতের বাংলা সংবাদ পত্র । লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের বয়স ২২ বছর সর্বশেষ তথ্যমতে ১৯০ জন সদস্য আছেন ‘লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের’ এর বাইরে ও ইউকে বাংলা প্রেসক্লাব নামে অন্য আরেকটা সংগঠন কয়েক বছর ধরে কাজ করেছে। এর বাইরে ও অনেক সাংবাদিক হিসাবে কাজ করছেন যারা এর কোনটার সঙ্গেই জড়িত নন। জনমত, সুরমা, পত্রিকা, ছাড়াও বাংলা পোষ্ট, বাংলা টাইমস, দেশ, পাক্ষিক ব্রিকলেন ইউরোবাংলা, বাংলা সংলাপ, বাংলা নিউজ, নতুন দিন, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, লন্ডন বাংলা, লন্ডনের বাইরে বার্মিংহাম থেকে বাংলা কাগজ, বাংলা ভয়েজ। ওল্ডহ্যাম থেকে জনসেবা ও কাগজ নামে বাংলা পত্রিকা সমূহ নিয়মিত অনিয়মিতভাবে বের হচ্ছে। বাংলা মিরর, দ্যা মুসলিম। ইষ্ট লন্ডন নিউজ নামে রয়েছে তিনিটি ইংরেজি সাপ্তাহিক। এ ছাড়া কারী লাইফ, স্পাইস বিজনেস নামে দুইটি রেষ্টুরেন্ট ফুড বিজনেস সম্পর্কিত ম্যাগাজিন নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
এছাড়া দর্পন, মিলেনিয়াম, নারী, তৃতীয় ধারা নামে ম্যাগাজিনও প্রকাশিত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইউকে বেঙ্গলী, ইউকে বিডি নিউজ, ব্রিটবাংলা ২৪, জিবি নিউজ ২৪, লন্ডন বিডিনিউজ, বিশ্ববাংলা২৪ সহ ১০টির অধিক অনলাইন নিউজ পোর্টালও আছে ব্রিটেনে।
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরে স্যাটেলাইট চ্যানেল হিসাবে বাংলাটিভি ব্রিটেন থেকে সম্প্রচার শুরু করে। এর পর চ্যানেল এসসহ চ্যানেল আই, এনটিভি, এটিএন বাংলা, ইকরা বাংলা ও ওয়ান টিভি নামে দুইটা ইসলামি চ্যানেল তাদের সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আছে বেতার বাংলা, স্পাকট্রাম রেডিও, বিবিসি বাংলা সর্বশেষ হিসাব মতে নিয়মিত অনিয়মিতভাবে ২২ টি পত্রিকা, ৭টি ম্যাগাজিন, ৩টি রেডিও, ৫টি টিভি চ্যানেল, ও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ জড়িত আছেন এসবের সঙ্গে। কিন্তু এখনো হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কেউই সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে নিতে পারেননি। বাংলাদেশে যেভাবে সংবাদমাধ্যম একটি শিল্প হিসাবে দাঁড়িয়েছে, সেই সংস্কৃতি আধুনিক ব্রিটেনে এখনো গড়ে উঠেনি। তাই অন্য পেশার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছেন সবাই। অনেকটা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতোই।
টেমসের জলে বয়ে গেছে কাল, মহাকালের দিকে ধাবমান সময়, ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির ধাবমান কালকে ধারণ করেছে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকগণ।
(তথ্যসূত্র: বিলেতে বাংলা সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা- ফারুক আহমদ, বিলেতে বাঙালি সংগ্রাম ও সাফল্যের কাহিনী- ঊর্মি রহমান ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব ওয়েবসাইট)
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D