বড়লেখায় টিলা কাটার মহোৎসব, হুমকিতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র

প্রকাশিত: ৮:৪৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২০

বড়লেখায় টিলা কাটার মহোৎসব, হুমকিতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র

বড়লেখা সংবাদদাতা:
বড়লেখায় পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারী-বেসরকারী প্রাকৃতিক টিলা কাটার মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট নির্বিচারে টিলা ধংস ও গাছপালা উজাড় করে মাটি বিক্রি করছে। সরকারী অবকাঠামো উন্নয়নে বিট বালু ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠিকাদাররা প্রশাসনের নাকের ডগায় রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন কাজে প্রাকৃতিক টিলার মাটি ব্যবহার করছে। অবাধে পাহাড়-টিলা কাটায় হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র।

জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার প্রান্তিক উপজেলা বড়লেখা। এ উপজেলার পূর্বদিকের পাথারিয়া পাহাড় ঘেঁষা জনপদে অসংখ্য প্রাকৃতিক টিলা রয়েছে। এসব টিলায় রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি। টিলার বনাঞ্চলে নানা কীটপতঙ্গ ও বিভিন্ন বন্যপ্রাণী বসবাস করে। মাটি বিক্রি করে অল্পদিনে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে প্রভাবশালী মহলের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে এসব প্রাকৃতিক টিলার ওপর। নির্বিচারে তারা টিলা ধংস করতে থাকে।

অথচ পরিবেশ আইনে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে সরকারী কিংবা বেসরকারী মালিকানাধীন কোন ধরণেরই টিলা কাটা যাবে না। কিন্তু প্রভাবশালী মহলটি অবাধে পাহাড় টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেলেও তাদের ক্ষেত্রে পরিবেশ আইনের কোন প্রয়োগ হচ্ছে না। মাঝে মাঝে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ২-৪ জন ট্রাক্টর চালক ও মাটি শ্রমিককে আটক করে জরিমানা আদায় করেই দায় সারে। টিলাখেকো মুল হোতারা বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে থামছে না পাহাড়-টিলা ধংসের কাজ কারবার।

সরেজমিনে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপির মোহাম্মদ নগর, পূর্ব চন্ডিনগর, ইসলাম নগর, লেচুবাগানের আব্দুস সবুরের বাড়ি, রহমানিয়া চা বাগানের একটি টিলা (ছোটলেখা চা বাগানের গেইট সংলগ্ন), উত্তর শাহবাজপুর ইউপির আতুয়া, কুমারশাইল, পুর্বদৌলতপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে অবাধে টিলা কাটা চলছে। একেকটি টিলায় প্রতিদিন ৪-৫টি ট্রাক্টর লাগিয়ে মাটি পাচার করা হচ্ছে। আতুয়া গ্রামের মৃত তরিক আলীর ছেলে বাহার মিয়ার বিশাল টিলায় ৪টি ট্রাক্টর ও ১০-১৫ জন মাটি শ্রমিককে নির্বিচারে টিলা কাটতে দেখা যায়। ট্রাক্টর চালক সারুক আহমদ, বছন মিয়া, আব্দুস সত্তার, ফজলু মিয়া জানান, সাবেক ইউপি মেম্বার আব্দুস সহিদ ছানু টিলার মালিক বাহার মিয়ার নিকট থেকে টিলা কাটার টিকা নিয়েছেন।

তিনি বিভিন্ন জায়গায় মাটি বিক্রি করছেন। গত ৪-৫ মাস ধরে এ টিলা কাটা চলছে বলে স্থানীয়রা জানান। ট্রাক্টর/ট্রাকে টিলার মাটি পরিবহনের কারণে গ্রামীণ রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। ধুলোবালি উড়ে সমস্থ গ্রামে ছড়িয়ে মারাত্মক দুর্ভোগের সৃষ্টি করলেও টিলা খেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলেন না।

ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান জানান, টিলা কাটা রোধে তিনি প্রায়ই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছেন এবং তা অব্যাহত রয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই জড়িতরা সটকে পড়ে। সরকারী রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন কাজে টিলার মাটি ব্যবহার না করতে ঠিকাদারদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছেন। টিলা কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকেও তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।