১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২১
সিলেটের দিনকাল ডেক্স:
প্রেমময়ের প্রেম কানন মাটির দুনিয়া। এখানকার রঙ–রূপ, ছন্দ–গন্ধ সবই উপভোগ করেন আমাদের মাবুদ রাব্বানা। তিনিই এখানে রঙ ঢালেন, রূপ ধরান, ছন্দের তালে তালে প্রবাহিত করেন আমাদের জীবনধারা। মাটির মানুষের সিজদায় তিনি পুলকিত হন।
মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে ঈর্ষাপরায়ণ নূরের ফেরেশতাদের গর্ব করে বলেন– আমি যা জানি তোমরা তা জান না। মাটির মানুষ যখন মাটিতে মাথালুটায় তখন মালিক ডাক দিয়ে বলেন, ও ফেরেশতাগণ! আমার এ গোলাম কী করছে? ফেরেশতাগণ বলেন, সে তো আপনার কুদরতি কদমেসেজদা করছে। সে কী চায়?
ফেরেশতাগণ বলেন, আপনার প্রেমের এ পাগল তো শুধু আপনারই নৈকট্য চায়। অফুরান দয়ার আধার রহিম খোদা তখন বলেন, সাক্ষী থাক হেফেরেশতার দল! আমি আমার এ প্রেমিককে ক্ষমা করে দিলাম। ক্ষমা আর করুণার ডালি সাজিয়ে কখনও সখনও মাবুদ নিজেই চলে আসেন তারআশিক ও মাহবুবদের কাছে। নানা উপহার আর উপঢৌকনে ভরে দেন বান্দার দু’হাত। বান্দার সব চাওয়া পূর্ণ করে দিয়ে দেখিয়ে দেন সরল ওসঠিক পথ। মাটির মানুষ তখন পরিণত হয় সোনার মানুষে।
মানবাত্মা আলোকিত হয়ে ওঠে খোদার নূরের পরশে। এ রকম একটি রাত হল শবেবরাত বা ভাগ্যের রাত।
নবীজি (সা.) বলেন, এ রাতের সন্ধ্যা থেকেই রাব্বুল আলামিন দুনিয়ার নিকটতম আকাশের প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি বুলান এবং তার প্রেম আরভাবসাগরে ভাসমান প্রেমিকদের উদ্দেশে বলেন, আছো কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আমি তাকে ক্ষমা করব, আছ কি কোনো অসুস্থ–রোগী আমি তাকেসুস্থ করে দেব, আছ কি কোনো অসচ্ছল অভাবি আমি তার অভাব–অনটন দূর করে দেব, আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত আমি তার বিপদ দূর করেদেব। এভাবে তিনি শেষ রাতে পশ্চিমাকাশে লাল আভা দেখা যাওয়া পর্যন্ত ডাকতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ শরিফ)।
যাদের আত্মার দরজা খোলা থাকে, যাদের ভাগ্যে হেদায়াত থাকে, যারা সঠিক পথের সন্ধান করেন– শবেবরাত তাদের দিয়ে যায় আলোর ঠিকানা।তারা পেয়ে যান দিদারে এলাহির টিকিট। জান্নাতের সার্টিফিকেট। ক্ষমা আর মুক্তির পদকে ভূষিত হন তারা। বান্দার আবেদন–নিবেদনের ভিত্তিতেমাওলা এ রাতে নির্ধারণ করেন তার জীবন–জীবিকা, হায়াত–মৌত, কর্ম–ক্রিয়া।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) একবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আয়েশা তুমি কি জান, এ রাতে অর্থাৎ শাবানের ১৫তম রাতে কীহয়? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনি বলুন কী হয়। তিনি বললেন, আগামী এক বছরে যারা জš§ নেবে এবং মৃত্যুবরণ করবে এরাতে তাদের নাম লেখা হয়। এ রাতে আদম সন্তানদের আমলনামা উঠানো হয় এবং তাদের রিজিক অবতীর্ণ হয়। (বায়হাকি)।
এ রাতটি মূলত নফল ইবাদত বা নির্জনে মাবুদের সান্নিধ্যে কাটানোর রাত। আগত রমজানকে স্বাগত জানিয়ে মাসব্যাপী সিয়ামব্রত পালনেরপ্রস্তুতি নেওয়ার রাত। রমজানের বেজোড় রাতে আগত হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রাত শবেকদর তালাশের এক প্রকার প্রশিক্ষণও দেয় শবেবরাত।শবেবরাত প্রেমময়ের সঙ্গে প্রেমিক বান্দাদের কথা বলার রাত। হৃদয়ের সব ভালোবাসা মিশিয়ে কুদরতি কদমে লুটিয়ে পড়ে মাবুদকে কিছু বলাররাত।
চালাও সে পথে যে পথে
তোমার প্রিয়জন গেছে চলি
শবেবরাত একটি ধর্মীয় দিবস হলেও বাংলাদেশি সংস্কৃতিতে শবেবরাত ধর্মের বৃত্তকে অতিক্রম করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হালুয়া–রুটি, শিরনি–তাবারকসহ নানা অনুসঙ্গ এসে মিশেছে শবেবরাতের সঙ্গে। নির্জনে চুপিসারে যে রাতে মাবুদের সঙ্গ দেওয়ার কথা সে রাতে ঢাক–ঢোল পিঠিয়ে, হইহুল্লোড় করে, বিশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টির পরামর্শ কে দিল সরল বাংলাদেশি মুসলমানদের?
হে মুসলমান! চোখ খুলে দেখুন অগ্রসর পৃথিবীর এগিয়ে চলা মুসলমানদের দিকে! নফল ইবাদতের মাধ্যমে তারা নির্জনে মাবুদের সঙ্গ নিচ্ছে।উম্মতের দরদি নবী এ রাতে একবার গিয়েছিলেন পরপারে চলে যাওয়া উম্মতের খোঁজে, কবরের পাশে। দু’হাত তুলে উম্মতের জন্য করুণা ভিক্ষাচেয়েছেন মাবুদের কাছে। ফিরে এসে মাওলার প্রেমে ডুব দিয়েছেন। রাত কাটিয়েছেন নিরালায় রুকু–সিজদায়। মোনাজাত করেছেন মানুষের কল্যাণকামনায়। প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রেমের মাস রমজানের সিয়াম সাধনার। এটাই শবেবরাতের আমল।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি এক রাতে ঘুম ভেঙে দেখলাম আল্লাহর রাসূল (সা.) ঘরে নেই। আমি তাকে খুঁজে পেলাম মদিনার কবরস্থানজান্নাতুল বাকিতে। তিনি বললেন, (এ রাতটি দোয়া করার রাত) নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালা শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে পৃথিবীর নিকটতমআসমানের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং এই রাতে বনু কালব গোত্রের ছাগলের পশমের চেয়েও অধিক লোককে ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজিশরিফ)।
মোবারক এ রজনীতে মৃতপ্রায় ঈমান বৃক্ষে পানি ঢেলে নিন। পুড়ে যাওয়া ঈমানের সলতায় তেল দিয়ে নিন। অনাচার–পাপাচারের আবর্জনায়দুর্গন্ধময় আত্মায় নূরের খুশবু ছড়িয়ে নিন।
সাধারণ একজন মানুষের আগমনকে কেন্দ্র করেও তো কত কত তোরণ নির্মাণ করা হয়, ফুলেল অভ্যর্থনা জানানো হয়, সাধারণ একটিঅনুষ্ঠানের জন্যও তো কত প্রস্তুতি নেওয়া হয়, আর মাহে রমজান আসবে অথচ কোনো প্রস্তুতি থাকবে না এটা কেমন কথা!
রমজানের জন্য তাই আমাদের প্রস্তুত করে দেয় শবেবরাত। রমজানকে অভ্যর্থনা জানায় শবেবরাত। শবেবরাত বলে– আজ যেভাবে তুমি রাতভরমাবুদের উপাসনায় কাটালে কাল রমজানেও তোমাকে সারারাত কিয়ামুল্লাইল–তারাবিহ আদায় করতে হবে, তাহাজ্জুদ পড়তে হবে, সেহরি খেতেহবে, বুঝে বুঝে কুরআন পড়তে হবে।
কীভাবে কাটাবেন শবেবরাত
মাগরিবের আগেই দুনিয়ার ঝামেলা সেরে নিন। মনে মনে সারা রাত আমলের একটি রুটিন তৈরি করে নিন।
মাগরিবের নামাজের পরপরই কুরআন শরিফ তেলাওয়াতে বসে পড়ুন। সম্ভব হলে বুঝে বুঝে কুরআন পড়ুন। মনে রাখবেন সর্বোত্তম জিকির হলকুরআন তেলাওয়াত করা। কুরআন পড়তে না পারলে বেশি বেশি তাওবা–ইস্তিগফার দোয়া–দুরূদ পড়তে থাকুন।
সাধ্যমতো দু’রাকাত দু’রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করুন। রাতের কোনো এক অংশে মৃত আত্মীয় স্বজনের কবর জিয়ারত করলে পুণ্যমেলে। নিজের জন্য দেশ ও মানুষের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি কান্নাকাটি করুন।
আগত রমজানের সিয়ামব্রত যাতে সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারেন, মাবুদের কাছে সেই তাওফিক চেয়ে নিন।
আল্লাহ আমাদের সিয়ামব্রত পর্যন্ত হায়াত দান করুন।
SR/
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D