১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২৫
ভ্যাপসা গরমে সিলেটে বিদ্যুৎ ভো গা ন্তি চরমে
এহিয়া আহমদ
ক্যালেন্ডারে চলছে আষাঢ় মাস। কিন্তু সিলেটবাসী এখনো ভালো বৃষ্টির স্বস্তি পায়নি। ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা পুরো অঞ্চলজুড়ে। তারপর ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট জনদুর্ভোগকে আরও প্রকট করে তুলেছে। গত সপ্তাহখানেক ধরে সিলেট মহানগর থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দিনে ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে। তীব্র গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের এ লুকোচুরিতে নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ। দিনভর কর্মব্যস্ত মানুষের দুর্ভোগ তো আছেই, সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে শিশু, বৃদ্ধরা এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। দিনে ও রাতে মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে ঘুম হারাম হয়ে গেছে নগরবাসীর।
জানা গেছে, সিলেট নগরীর উপশহর, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, বালুচর, ঈদগাহ, সাপ্লাই, চৌখিদেখি, মদিনামার্কেট, আখালিয়া, শেখঘাট, কুয়ারপাড়, তালতলা, বন্দরবাজারসহ প্রায় সব এলাকায় চলছে চরম বিদ্যুৎ বিভ্রাট। গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও খারাপ। জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জসহ অনেক উপজেলায় দিনে চার-পাঁচবার করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে, কোনো কোনো দিন টানা চার-পাঁচ ঘণ্টা, কখনোবা তার চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ না থাকার ঘটনাও ঘটছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব এবং উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটি কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। এদিকে, সাধারণ মানুষ দ্রুত সমাধান চেয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রাতের লোডশেডিং সীমিত করা, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করাসহ একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। আষাঢ়ের এমন অস্বস্তিকর গরমে যদি শিগগিরই বৃষ্টির দেখা না মেলে এবং বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, তাহলে জনজীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে—এ নিয়ে সংশয় নেই কারো।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগে ২২০ মেগাওয়াট এবং সিলেট জেলাতে রয়েছে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা । অন্যদিকে চাহিদা অনুপাতে ৬৬ মেগাওয়াট বা বর্তমানে ৩০ শতাংশ লোডশেডিং হচ্ছে।
সিলেট নগরীর তালতলা এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ আলী ঝিনুক বলেন, ‘দিনে গরমে কাজ করা যায় না, আর রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় ঘুমানো যায় না। ফ্রিজ, ফ্যান, এমনকি পানির পাম্পও চলে না। বাচ্ছারা অস্বস্তিতে কান্নাকাটি করে।’
সারওয়ার হোসেন নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জানান, ‘এক তো অসহনীয় গরম তারমাঝে আবার বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে রাতে ঘুমাতে পারি না, সকালে ক্লাসে মন বসে না। ল্যাপটপ, মোবাইল চার্জ দেওয়া যায় না, পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের সময়টা না জানায় প্ল্যান করাও যায় না।’
মুক্তার আলী নামের রিকশাচালক বলেন, ‘দিনে রোদে পুড়ে কাম করি, রাতে ঘরে গিয়া যদি বিদ্যুৎ না থাকে তাইলে বিশ্রাম কই? ঘুম হয় না, আবার সকালে উঠেই রাস্তায় নামতে হয়। গরম আর লোডশেডিং একসাথে মাইরা ফেলতেছে।’
রিকাবীবাজার এলাকার ব্যবসায়ী মো.হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকলে ব্যবসা চালানো যায় না। ফ্রিজে রাখা জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দিনভর তিন-চারবার বিদ্যুৎ যায়, কখন আসবে তার ঠিক নেই। এতে বেচাকেনাও কমে গেছে।’
নগরীর প্রাইভেট ক্লিনিক চিকিৎসক ডা. ফারহানা ইসলাম সিলেট ভিউকে বলেন, ‘হাসপাতাল ও ক্লিনিকে লোডশেডিং বড় সমস্যা। রোগী ওয়ার্ডে গরমে কষ্ট পাচ্ছে, ইনভার্টার বা জেনারেটর দিয়েও সবসময় সামলানো যায় না। রোগীদের সেবায় সমস্যা হচ্ছে।’
এদিকে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, ‘সারাদেশে গ্যাস সঙ্কট ও উৎপাদন ঘাটতির কারণে সিলেটেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। তীব্র গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।’
এ বিষয়ে সিলেট বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রকৌশলী মু. তানভীর হায়দারসহ একাধিক কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেন নি।
সিলেট বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই-আরেফিন লোডশেডিংয়ের বিষয়ে বলেন,‘এইগুলো লোডশেডিং নয়। কাজের কারণে বা কোনো সমস্যার কারণে বন্ধ হয়েছিল।’
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D