১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:০৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯
সিলেটের দিনকাল ডেস্কঃঃ মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন গণমানুষের মহান সেবক। মানুষের কল্যাণে তিনি ছিলেন সদা নিবেদিতপ্রাণ। নবুয়তপ্রাপ্তির আগে থেকেই তিনি জনকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমৃত্যু তিনি মানুষের সেবায় কাজ করেছেন। মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। গ্রহণ করেছেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সাহাবাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন মানবসেবায় ব্রতী হতে। ধর্ম-বর্ণের বৃত্তের বাইরে গিয়ে নানা জনহিতকর কাজ করার মহান শিক্ষা তিনি প্রচার করেছেন।
.
নবুয়তপ্রাপ্তির আগে রাসুলের মানবসেবা
নবুয়তপ্রাপ্তির আগে থেকেই রাসুল (সা.) একজন নিঃস্বার্থ জনসেবক হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। যুগ যুগ ধরে চলে আসা আরবের হানাহানি, যুদ্ধবিগ্রহ ও অরাজকতা নিরসন করার লক্ষ্যে যখন জনকল্যাণ ও সমাজসেবামূলক সংগঠন ‘হিলফুল ফুজুল’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন রাসুল (সা.) তাতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। সেই সংগঠনের কর্মসূচি ছিল এ ধরনের—
.
ক. দেশ থেকে অশান্তি দূর করা। খ. বহিরাগতদের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান। গ. নিঃস্ব-অসহায়দের সাহায্য প্রদান। ঘ. দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর শক্তিমানদের জুলুম-নিপীড়ন প্রতিহত করা (ইবনে হিশাম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৩৪-১৪০)
.
নবুয়ত লাভের পর রাসুলের জনসেবা
নবুয়তের সুদীর্ঘ ২৩ বছরে রাসুল (সা.) মানুষের বহুমুখী সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। আর্তমানবতার সেবায় তাঁর গৃহীত পদক্ষেপগুলো অতি ব্যাপক ও বিস্মৃত। অভাবীদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা তিনি করেছেন। মানুষকে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন। বেকারদের কর্মসংস্থানে নিয়েছেন কার্যকর পদক্ষেপ।
.
দুস্থ-অসহায়দের চিকিৎসাসেবা প্রদান
আর্ত-পীড়িত মানুষের সেবার প্রতি রাসুল (সা.) গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা রোগীদের সেবা করো।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৫৯)
.
সাহাবি বারাআ (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) আমাদের সাতটি বিষয়ে বিশেষভাবে আদেশ দিয়েছেন। তার একটি হলো আমরা যেন রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করি।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৫০)
.
অসুস্থ ব্যক্তি যে-ই হোক, রাসুল (সা.) তার সেবায় এগিয়ে যেতেন। ধনী-গরিব, মুসলিম-অমুসলিম, আত্মীয়-অনাত্মীয়র পার্থক্য তিনি করতেন না। মদিনার এক ইহুদি ছেলের অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে রাসুল (সা.) তার বাড়িতে তাকে দেখতে যান। (রিয়াদুুস সালিহিন, হাদিস : ৯০৪)
.
দুস্থ-অভাবীদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা
মদিনার আনসাররা মুহাজিরদের খেদমতে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। রাসুল (সা.)-এর নির্দেশনার আলোকে মুহাজিরদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সব ব্যবস্থা তাঁরা করে দেন। নিজেদের সম্পদ ও সুখ-দুঃখের অংশীদার করে নেন মুহাজিরদের। সেই বিস্ময়কর ত্যাগের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তাদের জন্যও, যারা মুহাজিরদের আগমনের আগে এই নগরীতে বসবাস করেছে এবং ঈমান এনেছে। তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে এবং মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। আর তারা নিজেদের ওপর মুহাজিরদের প্রাধান্য দেয়, নিজেরা অভাবী হওয়া সত্ত্বেও। যারা কৃপণতা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখে তারাই সফলকাম।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ৯)
.
মসজিদ-ই-নববীর পাশে একটি স্থানে রাসুল (সা.) পরিজনহারা সহায়-সম্বলহীন মানুষের বসবাস ও পানাহারের জন্য সুফফা নামের একটি ছাউনি প্রতিষ্ঠা করেন। আশ্রয়হীন লোকজন সেখানে আশ্রয় নিত। রাসুল (সা.) নিজ তত্ত্বাবধানে তাদের খাদ্য, বস্ত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনের বন্দোবস্ত করতেন। রাসুল (সা.) নিজের দস্তরখানে বসিয়ে তাদের খাবার খাওয়াতেন। বাইতুল মাল থেকে যথাসম্ভব সাহায্য করতেন তাদের। এই আশ্রয়কেন্দ্রে আসহাবুস সুফফার সংখ্যা কখনো কখনো চার শতাধিকও হয়ে যেত। (সীরাত বিশ্বকোষ, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৪৮৩)
.
বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ
সমাজের প্রত্যেক কর্মক্ষম ব্যক্তিকে রাসুল (সা.) জীবিকা উপার্জনে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দাতার হাত গ্রহীতার হাতের চেয়ে উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪২৯)
নিজ পরিশ্রমে উপার্জন করে খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করে রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘নিজের হাতে কাজ করে খাওয়ার চেয়ে উত্তম খাবার কেউ কখনো খায়নি। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে কাজ করেই খেতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৭২)
.
তিনি নিজে ব্যবসা করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম ব্যবসা করেছেন। ইসলাম হালাল উপায়ে ব্যবসা করাকে সব সময় উৎসাহিত করেছে। ভিক্ষাবৃত্তিকে কখনোই প্রশ্রয় দেননি রাসুল (সা.)। বরং তিনি ভিক্ষাবৃত্তির বিভিন্ন শাস্তির কথা শুনিয়েছেন। ভিক্ষাবৃত্তি পরিহার করে মানুষকে শ্রম দিয়ে রোজগার করার প্রতি তিনি তাগিদ দিয়েছেন। এক বেকার আনসারি সাহাবি রাসুল (সা.)-এর কাছে সাহায্য চাইলেন। তখন তিনি তাঁর একটি বস্তু নিলামে বিক্রি করে তা দিয়ে উপার্জনের পরামর্শ দেন এবং বলে দেন, ‘তুমি ভিক্ষা করে বেড়াও আর কিয়ামতের দিন অপমানিত হও—তারচেয়ে এটা উত্তম।’ (মিশকাত, পৃষ্ঠা : ১৬৩)
.
দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সুদূরপ্রসারী কর্মসূচি বাস্তবায়ন
রাসুল (সা.)-এর আবির্ভাবকালে আরবে কড়া সুদের প্রচলন ছিল। নৈরাজ্যমূলক অর্থব্যবস্থায় সমাজ পরিচালিত ছিল। ভারসাম্যপূর্ণ ও সুখী-সমৃদ্ধ একটি সমাজ বিনির্মাণে তিনি কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এ লক্ষ্যে তিনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তা নিম্নরূপ :
.
ক. বিত্তশালীদের সম্পদের জাকাত প্রদান। খ. জাকাত ছাড়াও অতিরিক্ত দান-খয়রাতে উৎসাহ প্রদান। গ. বাইতুল মাল থেকে কর্জে হাসানা প্রদান। ঘ. ধনীদের কর্জে হাসানা প্রদানে উদ্বুদ্ধকরণ। ঙ. সুদি কারবার নিষিদ্ধকরণ। চ. জাকাত ছাড়াও রাষ্ট্রীয় অন্যান্য কর থেকে অভাবী জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দকরণ। ছ. অসহায়, অক্ষম, এতিম ও মুসাফিরদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান। জ. কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন
.
এই কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করার ফলে ক্রমেই দারিদ্র্য বিমোচন হয়। এমনকি খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.)-এর যুগে জাকাত দেওয়ার মতো দরিদ্র লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর ছিল। (সীরাত বিশ্বকোষ, খণ্ড : ১১, পৃষ্ঠা : ২৬)
.
মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বহুমুখী উদ্যোগ
.
গণমানুষের জীবনমান উন্নয়নে রাসুল (সা.) নানা উদ্যোগ নেন। যেমন—
.
ক. রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ। খ. যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা। গ. গোসল করে সুগন্ধি ব্যবহার করে জনসমাবেশে যাওয়ার নির্দেশ। ঘ. পরিবেশ রক্ষায় গাছপালা রোপণে উৎসাহদান। ঙ. খাবার পানির সুবন্দোবস্ত করতে উৎসাহ প্রদান। (সীরাত বিশ্বকোষ, খণ্ড : ১১, পৃষ্ঠা : ২৭)
.
এতিম, অসহায় ও অক্ষম প্রতিবন্ধীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিপালন
সমাজের এতিম, অক্ষম ও প্রতিবন্ধীদের রাসুল (সা.) রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিপালন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। বাইতুল মাল থেকে তাদের সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ সম্পদ রেখে মারা যায়, তা তার উত্তরাধিকারীর। আর যদি কেউ সহায়হীন, এতিম ও বিধবা রেখে যায়, তার ব্যবস্থাকারী আমি।’ (তিরমিজি, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২৯)
.
পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন আমাদের সর্বোত্তম আদর্শ। আর্থ-সামাজিক কাজে তিনি যেভাবে সম্পৃক্ত হয়ে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, প্রত্যেক মুসলমানকে সেভাবে সমাজসেবায় এগিয়ে আসা উচিত।
ইমা/১২/১২/১৯
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D