মুরুবির এত পা ও য়া র ছিল ,জানলো না তো কেউ !

প্রকাশিত: ১:৫৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২৫

মুরুবির এত পা ও য়া র ছিল ,জানলো না তো কেউ !

 

মুরুবির এত পাওয়ার ছিল ,জানলো না তো কেউ !
বাজেট লোপাটেও সিলেটের সেই ডিসি!

অনলাইন ডেস্ক

 

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং। দেশজুড়ে পর্যটন পরিচিতি থাকলেও স্থানীয়ভাবে এটিকে পাথর রাজ্য বলা হয়। পাথর রাজ্যে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ব্যাপক লুটপাট হয়। লুটপাটের ক্ষত কাটাতে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন গত বছরের ডিসেম্বরে একটি সাড়ম্বরপূর্ণ ‘ফুটবল ফেস্ট’ আয়োজন করে। তিন দিনব্যাপী নানা আনুষ্ঠানিকতার শেষ দিন জাফলং-পিয়াইনকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট হয় জাফলংয়ের জিরোপয়েন্টের বালুতটে।

গত বছরের ১৯ থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফুটবল ফেস্ট অনুষ্ঠানে খরচ হওয়া ১৭ লাখ টাকার মধ্যে ১৪ লাখ টাকা এখনো বাকি রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, বাজেটের এ টাকা লোপাট করেছেন আলোচিত সাদা পাথর লুটকাণ্ডে ওএসডি হয়ে সিলেট থেকে বিদায় নেওয়া সাবেক ডিসি (জেলা প্রশাসক) শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ। এ বিষয়টিকে সাবেক ডিসির বাকি-ফাঁকি বলছেন সংশ্লিষ্টরা। পুরো অনুষ্ঠানের আর্থিক ব্যয় বাকিতে সম্পন্ন করে পাওনা প্রায় আট মাস ধরে ঝুলিয়ে রাখার প্রমাণাদি খবরের কাগজে হস্তগত করেছেন খোদ পাওনাদাররা।

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের নথিতে (স্মারক নম্বর: ৭৫৮) বকেয়া পরিশোধসংক্রান্ত পত্রে এ বিষয়ে সর্বশেষ ১০ জুলাই জেলা প্রশাসনকে অবহিত করার বিষয়টি জানা গেছে। মোট পাওনা টাকা ১৪ লাখ ৮ হাজার ৪২৩ টাকা। আগে লুকোছাপা করলেও এখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর সূত্র পাওনা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গতকাল মঙ্গলবার যোগাযোগ করলে বর্তমান ইউএনও খবরের কাগজকে বলেছেন, শিগগির টাকা পরিশোধ করা হবে। তবে টাকা সাবেক ডিসি পকেটস্থ করেছেন কি না, এ বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

উপজেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, জাফলং জিরো পয়েন্টে পাহাড়ি ঢলে জমা হয় সাদা পাথরের স্তর। সেটি করোনাকালে তৎকালীন ইউএনও নাজমুস সাকিব সংরক্ষণে একটি প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। সম্পূর্ণ বিনা খরচায় সেই ফুটবল টুর্নামেন্টটি পর্যটকদের কাছে বেশ সমাদৃত হয়। জল-পাথর-বালুকাময় জাফলং জিরোপয়েন্ট ময়দানে সেই আয়োজনটি ছিল অনেকটা গ্রামীণ মেলার মতো। এতে কোনো সরকারি অর্থ ব্যয় ছিল না।

 

জাফলংয়ের পাথর সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ার মূলে রয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। কিন্তু এই প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন বিপন্ন। বিষয়টি গত প্রায় এক দশক ধরে নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। পরিবেশবাদীদের দৃষ্টিতে জাফলং বাংলাদেশের পরিবেশ-প্রতিবেশে সংকটাপন্ন একটি এলাকা। ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর এই স্থানকে ‘পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)’ ঘোষণা করে গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত সরকারকে ইসিএ ঘোষণার রুল জারি করেন। এরপর থেকে কয়েক ধাপে জাফলং থেকে বালু ও পাথরমহালের ইজারা কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রতি বছর এখানকার পাথর সম্পদ মজুতের বিষয়টি পরিমাপ করে উপজেলা প্রশাসন। সর্বশেষ গত বছরের ২৬ জুলাইয়ের পরিমাপ অনুযায়ী জাফলংয়ে পাথর মজুতের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৭৪ লাখ ঘনফুট। সরকারি হিসেবে মজুত পাথর থেকে ৫ আগস্ট রাতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। এ নিয়ে গত বছরের ৫ অক্টোবর খবরের কাগজে ‘এক রাতের লুটতরাজে ১ কোটি ঘনফুট পাথর লুট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর ১৬ অক্টোবর লুটে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরানের পদ কেন্দ্রীয় বিএনপি স্থগিত করলে পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট লুট-পরবর্তী অবস্থায় জাফলং পর্যটকদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় উপজেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসনে করোনা-পরবর্তী সময়ের সেই ফুটবল টুর্নামেন্টের সঙ্গে পর্যটন আকর্ষণের ফটো ফেস্ট আয়োজনের প্রস্তাব দেয়। তখন সিলেটে ৫ আগস্ট-পরবর্তী প্রশাসন প্রধান হিসেবে নতুন যোগ দেন বিদায়ী ডিসি শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ। তার ইচ্ছাতে ব্যয়বহুল করা হয় ফুটবল টুর্নামেন্টটি। আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ফুটবলের ঐতিহ্যে প্রকৃতির নতুন বেশ, জাফলংয়ের রংতুলিতে নতুন বাংলাদেশ’। ফুটবল টুর্নামেন্ট, ট্যুরিজম ফটো ফেস্ট ও পর্যটন উন্নয়নে বালুতটে নানা আয়োজনের মধ্যে আকর্ষণীয় ছিল ‘ফটো ফেস্ট’। এতে জাফলংয়ের প্রকৃতির শতাধিক আলোকচিত্রের প্রদর্শন হয়। টানা তিন দিনের আয়োজন শেষে ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণের দিন অনুষ্ঠানটির ব্যয় মেটানোর বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলে থেকে ডিসি মুরাদ বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখেন। এর মধ্যে অনুষ্ঠান বাস্তবায়নকারী গোয়াইনঘাটের ইউএনও তৌহিদুল বদলি হলে অনুষ্ঠানের ব্যয় মেটানোর বিষয়টি ডিসিকে ফের অবহিত করেন পাওনাদাররা। তখন ডিসি চাঁদা তুলে ব্যয় মেটানোর নির্দেশ দেন। ইউএনও তখন নিজ থেকে মোট ব্যয়ের মাত্র ২ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। বাকি ১৪ লাখ টাকা এখনো অনাদায়ী।

অনুষ্ঠানের প্রসপেকটাস, লোগো ও নিমন্ত্রণপত্রে দেখা যায়, পুরো অনুষ্ঠানটির একক আয়োজক জেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন ছিল বাস্তবায়নকারী। সহযোগিতায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের নাম থাকলেও এ প্রতিষ্ঠানের কেউ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।

পর্যটনসংশ্লিষ্ট একটি সংস্থা সূত্র জানায়, আয়োজনটির পুরোটা চাঁদা তুলে সম্পন্ন করার তাগাদা দিয়েছিলেন তখনকার ডিসি মুরাদ। চাঁদা প্রদানকারীর তালিকায় ছিলেন ৫ আগস্ট রাতে জাফলং ইসিএর পাথর লুটে অভিযুক্ত হয়ে পদ হারানো বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম শাহরানসহ মামলায় জড়িত পাথরখেকোরা। তারা জেলা প্রশাসনের প্রোগ্রামে চাঁদা দেওয়ার তাগাদা পেয়ে ফের জাফলংয়ের মজুত পাথর লুটের চেষ্টা চালায়। ১৯ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ ইউএনওর কাছে হস্তগত হয়। উপজেলা প্রশাসনের নথিতে (স্মারক নম্বর: ১১৯৩) সংরক্ষিত এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তখন ডিসি মুরাদ অনুষ্ঠান বাজেট থেকে ব্যয়ভার পরিশোধ বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখেন।

এ ব্যাপারে সাবেক ডিসি মুরাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে গোয়াইনঘাটের বর্তমান ইউএনও রতন কুমার অধিকারী পাওনার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকালে যোগাযোগ করলে ইউএনও খবরের কাগজকে বলেন, ‘ওই টুর্নামেন্টের ১৪ লাখের মতো টাকা বকেয়া আছে। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা চিঠি দিয়েছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করি শিগগিরই আমরা বকেয়া পেয়ে যাব।’ তবে বকেয়া টাকা পেতে চিঠি কাকে দেওয়া হয়েছে, টাকা পাওয়া কোথায় প্রক্রিয়াধীন—এসব বিষয় খোলাসা করেননি ইউএনও।

খবরের কাগজ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল