মেয়াদত্তীর্ণ হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ কুলাউড়া ছাত্রলীগ!

প্রকাশিত: ৪:৫০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯

মেয়াদত্তীর্ণ হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ কুলাউড়া ছাত্রলীগ!

শরীফ আহমেদ,মৌলভীবাজার:
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কুলাউড়া উপজেলা শাখার কমিটি গঠনের প্রায় ৩ বছর অতিবাহিত হওয়ার পথে। ইতিমধ্যে কমিটির একবছরের মেয়াদকাল শেষ হয়ে আরো দুই বছরে গড়িয়েছে। তবুও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি-সম্পাদক। এ নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের জোরালো দাবি জানিয়েছেন।

নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান রনি ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রনি স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে নিয়াজুল তায়েফকে সভাপতি ও আবু সায়হাম রুমেলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট এক বছরের কমিটি গঠন করা হয়। এরমধ্যে কমিটির একজন সহ-সভাপতি নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনায় সংগঠন থেকে বহিস্কার হয়েছেন এবং আরেকজন সহ-সভাপতি ইতিমধ্যে বিয়ে করেছেন। এছাড়া হাবিবুর রহমান জনিকে সভাপতি ও ইমন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬ সদস্যের কমিটি এবং জাকারিয়া আল জেবুকে সভাপতি ও আনোয়ার হোসেন বখসকে সাধারণ সম্পাদক করে কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজ কমিটি গঠন করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ৭ জুলাই জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি আমীরুল হোসেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত পত্রে নির্দেশনা দেয়া হয় ১৫ দিনের মধ্যে ছাত্রলীগের কমিটি যেন পূর্ণাঙ্গ করা হয়। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের নির্দেশনার ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি তায়েফ-রুমেল নেতৃত্বাধীন কুলাউড়া ছাত্রলীগের কমিটি। কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় পদস্ত ও পদবিহীন তৃণমূলের কর্মীরা হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা ব্যর্থতার জন্য শীর্ষ দুই নেতাকেই দায়ী করছেন। তারা ব্যর্থ নেতাদের নেতৃত্ব আর চান না। প্রকৃত ছাত্রদের নিয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন নতুন কমিটি অচিরেই দেখতে চান।

উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি করেছে বর্তমান কমিটি। বাকি রয়েছে ৬টি ইউনিয়ন কমিটি। গঠিত কমিটিতে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। সংগঠনের গঠনতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের কথা থাকলেও সম্মেলন ছাড়াই শুধু প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটিগুলো ঘোষনা করা হয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সায়হাম রুমেল ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার মত করে ৩৩ বছর বয়সী দুবাই প্রবাসী ফেরত মোবারক শাহকে উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি পদ দিতে হয়েছে। বিনিময়ে তার কাছ থেকে একটি (মোবাইল) আইফোন ও মোটা অংকের টাকা তিনি উৎকোচ নিয়েছেন। বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গঠিত কমিটিতে সহ-সভাপতি পদের দায়িত্ব দেয়া হয়।

ওই কমিটিতে প্রবাসী মোবারক শাহ ও মিজান আহমদ রুকসান নামে এক শিবির নেতাকে স্থান দেয়ার প্রতিবাদ করেন কমিটির সহ-সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন। প্রতিবাদের কারণে কমিটি সংশোধিত করে প্রবাসী মোবারক শাহকে বহাল রেখে শিবির নেতা মিজান আহমদ রুকসানকে বাদ দেয়া হয়। এবং প্রতিবাদকারী মিসবাহ উদ্দিনকে কোন কারণ ছাড়াই সহ-সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

অব্যাহতি প্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতা মিসবাহ উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রতিবাদ করায় আমাকে কোন কারণ ছাড়াই সহ-সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এটা আমার সাথে চরম অবিচার করা হয়েছে। বিষয়টি আমি জেলা কমিটিকে অবহিত করি। জেলার নেতারা আমাকে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দেন।

তৃণমূল পর্যায়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা জানান, সভাপতি সম্পাদকের কোন ছাত্রত্ব নেই তারপরও তারা কমিটিতে শীর্ষ পদে রয়েছেন। তাদের অদক্ষতা ও ব্যর্থতার কারণেই আজও অবধি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।

পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান জনি জানান, জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ মত ৮১ সদস্য বিশিষ্ট পৌর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছি। এখনও অনুমোদন পাইনি।

এসব বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সায়হাম রুমেল জানান, পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জেলা দপ্তরে জমা দিয়েছি। জেলা সভাপতি-সম্পাদক এখনো কমিটি অনুমোদন দেননি। যেসব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। যারা অভিযোগ করছে তারা আওয়ামীলীগ পরিবারের লোক নয়। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে তবে স্বেচ্ছায় আমি ছাত্রলীগের পদ থেকে পদত্যাগ করবো।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজুল তায়েফ জানান, সমন্বয় না থাকার কারণে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছেনা। কমিটিতে সিনিয়র-জুনিয়রদের সমন্বয় করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমীরুল হোসেন চৌধুরী জানান, উপজেলা কমিটিকে সমন্বয় করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জেলায় পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছি। কুলাউড়া ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক সমন্বয় করে যে কমিটি আমাদের কাছে পাঠাবে সেটা আমরা গ্রহণ করবো। আশা করছি খুব শীঘ্রই সুন্দর একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

সুবেদ/১৪/১২/১৯