যে কথা হয়নি বলা

প্রকাশিত: ১১:৫০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২০

যে কথা হয়নি বলা

উজ্জ্বল চৌধুরী :: বাস্তবতা কিংবা ব্যস্ততার বেড়াজালে অনেক সময় অনেক কথাই অন্তরে অন্তঃস্থ রয়ে যায় । অব্যক্ত বা অপ্রকাশিত সেই কথাগুলো পরবর্তীতে যথা সময়ে উপস্থাপিত না হওয়ার বেদনা ব্যক্তি কে বিষাদগ্রস্ত অথবা ক্ষেত্রবিশেষে বিভ্রান্ত ও বিব্রত করে তুলতে পারে ; আর তাই আমাদের সময়ের গান সময়েই গাওয়া উচিত বলে বিজ্ঞদের বক্তব্য ।

অনেকের মতো আমিও এই ব্যাধিতে আক্রান্ত । কিন্তু ইদানিং তা থেকে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টায় আছি । হয়তো এ কারণেই নুরুল আর পাবেল ভাইয়ের উৎসাহে দুই কলম লিখার প্রত্যয়ে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস । আজকের লিখায় প্রথম যে ঘটনাটি আমার স্মৃতির ক্যানভাসে প্রতিচ্ছবি আকারে ভেসে ওঠছে , তা হলো আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে পাঠ কার্যক্রমের প্রথম দিনের কথা ।

আমি গ্রামের মেঠো পথে পায়ে হেঁটে দলবেঁধে স্কুলে যাওয়া ছেলে। এখনকার ফেসবুক, ভিডিও গেমিং কিংবা প্রযুক্তির উৎকর্ষে অতি উদ্যমী আমরা ছিলাম না হয়তো !

আলিফ লায়লার জ্বিন পরীদের সিরিয়াল দেখে রাতে কিংবা এশার নামাজে একা মসজিদে যেতে ভয় পাওয়াদের তালিকায় ছিল আমাদের নাম । চাচাতো বোন তাপসী , বাল্যবন্ধু জজ আর মুরাদের হাতে হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার আনন্দটা নিমিষেই হারিয়ে যেতো আমাদের শৈশবের বিদ্যাপীঠ ঢাকা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মুহিব আলী স্যারের চেহারা দেখলেই । ৯০ দশকের সেই সময়ে দাঁত না মেজে স্কুলে আসা ছাত্রদের গোবর দিয়ে দাঁত পরিষ্কারে বাধ্য করার রেকর্ড রাখা স্যারের ক্লাসে রাত জেগে মুখস্থ করা পড়াটা ভুলে যেতাম প্রায়ই । যাই হোক , মূল কথায় আসি ; প্রথম দিনে অগ্রজদের মুখে স্যারের অতীত রেকর্ডের কাহিনী শুনে ধুরু ধুরু বুকে শিশু ওয়ানের ক্লাসে বসতেই প্রস্রাবের বেগ অনুভব করলেও সাহস করে স্যার কে বলা হয়ে উঠেনি ।

দীর্ঘক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর আমার নাম পরিচয় জানার জন্য স্যার যখন আমার দিকে ইশারা করলেন ততক্ষণে বড় বোনের পরিয়ে দেয়া নতুন হাফ প্যান্টটির তলদেশ থেকে টপ টপ করে নির্গত হওয়া জলের উৎস দেখে স্যারের মৃদু হাসি বাংলা সিনেমার শেষ দৃশ্যে ভিলেন হুমায়ুন ফরিদির নায়কের বাবা-মা কে শিকলে বন্দী করার পর প্রকাশিত অভিব্যক্তির মতো মনে হলেও পরক্ষণেই দেখলাম আমার মাথায় স্নেহের পরশ মাখা হাত । পিঠে স্কুল ব্যাগটা তুলে দিয়ে আজকের মতো তোমার ছুটি বলার সাথে সাথে অলিম্পিকে মরিস গ্রিনের রেকর্ড ভাঙা দৌড় দৌড়ে নদীর তীরে শোয়েব আখতারের ক্ষিপ্র গতিতে জল বিয়োগ করার পরের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার আজও হয়নি । বাড়ি থেকে আম্মা আর খালার অগোচরে ব্যাগ ভর্তি সুপারি নিয়ে এসে ওয়াইর দোকানে বিক্রি করে সেই টাকায় আইসক্রিম আর আলু সিদ্ধ কিনে খাওয়ানো বর্তমান সুইডেনে উচ্চপদস্থ কর্মরত আমার চাচাতো বোন তাপসীকে ধন্যবাদ জানানোটা আজও হয়ে উঠেনি ।

স্কুল থেকে ফেরার পথে আজকের সফল ব্যবসায়ী লতিফ ট্রাভেলসের সফল পরিচালক শিরু ভাইদের বাড়ির পেয়ারা চুরি করতে সাহস যোগানো আরেক চাচাতো বোন আলোর মরিচের গুঁড়োর সাথে লবণ মিশিয়ে উৎসব করা দিনগুলি খুব মিস করি । যদিও দুঃসাহসিক সেই অভিযানগুলোর রাজসাক্ষী বোনটিকে শুকরিয়া জানানো হয়নি আজও । কিংবা বাড়ির উঠোনে বাপ্পি ভাই , সায়েম , রিজন ডালিমকে সাথে নিয়ে ধারাবাহিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে গিয়ে বড় চাচীর মাটির ঘরের বেড়া ভাঙা পরবর্তী বিড়ালের তওবা পড়ার মতো ‘ আর হবেনা ’ ওয়াদা দিয়ে পার পাওয়া দিনগুলো কি আর ফিরে পাব ?

সন্ধ্যা রাতে ঘুম পাড়াতে “ বতাই ” আসলো বলে আম্মা কিংবা বড়দের সেই হুংকার শুনে লক্ষী ছেলে হয়ে ঘুমাতে যাওয়া এই আমার কাছে বড়ই অবাক লাগে যখন দেখি , আমার ৪ বছরের ছেলে হরর মুভি দেখে বলে বাবা ভূত আমার সাথে খেলতে আসেনা কেন ?

 

চলবে…….

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল