২৭শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৩৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২০
স্পোর্টস ডেস্ক ::
সময়টা ২০০৭ সাল। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে খেলতে গেছে বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম মিশনে প্রতিপক্ষ ছিল প্রবল শক্তিশালী ভারত। এই ম্যাচের আগেরদিন একজনের মৃত্যু সংবাদ স্তব্ধ করে দেয় দলের সবাইকে। শোকে বিপর্যস্ত টাইগাররা ঘোষণা দেয়, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি তাকে উৎসর্গ করেই খেলা হবে। শক্তির বিচারে আকাশ-পাতাল পার্থক্য থাকলেও ম্যাচটি জিতে যায় বাংলাদেশই। স্মরণীয় সেই জয়ের পিছনে অনুপ্রেরণা যোগানো নামটি ‘মানজারুল ইসলাম রানা।’
সেই দিনটি ছিল ১৬ মার্চ। আজ থেকে ঠিক ১৩ বছর আগে। পরের দিনই ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। দলের সবাই তখন ম্যাচকে ঘিরে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। হঠাৎ দেশ থেকে একটি ফোন এলো। মূহুর্তেই পিনপতন নীরবতা। কারণ সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন আদরের রানা!
২০০৭ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা পাননি মানজারুল ইসলাম রানা। তবে দলে সুযোগ না পেলেও নিজ শহর খুলনায় অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন এই বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার। ১৬ মার্চ অনুশীলন শেষে ভাবলেন শহরের এক প্রান্তে প্রিয় হোটেলে গিয়ে ভুরিভোজ করবেন। সঙ্গে নিলেন সতীর্থ সাজ্জাদুল হাসান সেতুকে। তখনও তারা জানতেন না আর একটু পরেই কি হতে চলেছে তাদের জীবনে।
প্রিয় বাইক নিয়ে রওনা দিলেন রানা। বেশ ভালোই চলছিলেন তারা। কিন্তু খুলনার বালিয়াখালি ব্রিজের কাছে আসতেই গুলিয়ে যায় সবকিছু। বিপরীত দিক থেকে আসা এক অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় রানাদের। ঘটনাস্থলেই মারা যান মানজারুল ইসলাম রানা। গুরুতর আহত অবস্থায় সেতুকে হাসপাতালে নেয়া হয়। তবে তিনিও কিছুক্ষণের মাঝেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।২০০৭ সালের স্কোয়াডে সুযোগ না পেলেও জাতীয় দলে প্রায় নিয়মিত মুখ ছিলেন রানা। না ফেরার দেশে যাওয়ার আগে টাইগারদের হয়ে ৬টি টেস্ট ও ২৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন তিনি। মাত্র ২২ বছর ৩১৬ দিন বয়সে ইন্তেকাল করেন এই অলরাউন্ডার। সর্বকণিষ্ঠ প্রয়াত টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে আজও জ্বলজ্বল করছে রানার নাম।
এমন খবর ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয় না। দ্রুতই ওয়েস্ট ইন্ডিজে অবস্থানরত দলের সবাই জেনে যান রানার অকালপ্রয়াণের সংবাদ। এ যেনো বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়ে আসে সবার সামনে। পুরো দলেই তখন শোকের ছায়া। এদিকে রানার অন্যতম কাছের বন্ধু মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার গায়ে তখন প্রচণ্ড জ্বর। কষ্ট চেপে রাখতে না পেরে এরই মাঝে কয়েকবার দরজা আটকে কেঁদে এসেছেন তিনি।দলের অন্যতম প্রধান অস্ত্র মাশরাফী তখন পরেরদিন খেলতে পারবেন কি না এ নিয়েই শঙ্কায় টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে নড়াইল এক্সপ্রেসের এক কথাতেই যেনো পরিষ্কার হয়ে যায় সব। দলপতি হাবিবুল বাশার যখন তাকে প্রশ্ন করেন পরের দিন খেলতে পারবে কি না, তখন মাশরাফী উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘খেলতি পারবো না কেন? রানার জন্যি খেলতি হবে।’
শুধু মাশরাফী নয়, দলের প্রতিটি সদস্যই যেনো রানার জন্য ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল। শরীরী ভাষায় আক্রমণাত্মক মানসিকতার ছাপ ছিল স্পষ্ট। শোককে শক্তিতে পরিণত করে ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় টাইগাররাই। আর এ ম্যাচে বল হাতে ৪ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল সেই মাশরাফিরই!ক্যারিয়ার খুব লম্বা না হলেও স্বল্প সময়ে সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন রানা। ২০০৩ সালে অভিষেক হওয়ার পর সময়ে ২৫টি ওয়ানডে ম্যাচে প্রায় ২১ গড়ে ৩৩১ রান করেন তিনি। শিকার করেছিলেন ২৩টি উইকেট। এছাড়া ২০০৪ সালে টেস্ট ফরম্যাটে অভিষেকের পর খেলা ৬ টেস্টে প্রায় ২৬ গড়ে ২৫৭ রান ও ৫ উইকেট লাভ করেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার।
রানাকে খুব ভালোবাসতেন সে সময়ের টাইগার কোচ ডেভ হোয়াটমোর। ভালোবাসতেন দলের সবাইই। তাকে মনে করা হতো দলের ভবিষ্যৎ। অথচ এমন একজনের স্মৃতি রক্ষায় দীর্ঘদিন কোনো উদ্যোগ নেয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।অনেক দাবি-দাওয়ার পর রানার শহর খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে একটি স্ট্যান্ডের নামকরণ করা হয় ‘মানজারুল ইসলাম রানা স্ট্যান্ড’। খুলনায় দীর্ঘদিন যাবৎ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে না বাংলাদেশ। কেমন অবস্থায় আছে সেই ‘স্ট্যান্ড’ তাও হয়তো কেউ জানে না। তবে রানাকে ভোলা অনেকটাই কঠিন।
কারণ বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে দেয়া সেই ম্যাচের শক্তি যে ছিলেন রানাই। হয়তো মাঠে ছিলেন না, কিন্তু উপর থেকে সতীর্থদের আবেগ ও খেলা দেখে নিশ্চয় মুচকি হেসেছেন তিনি! যতবার ভারতবধের সেই ম্যাচের কথা সামনে আসবে, চুপিসারে আলোচনায় উঠে আসবেন অকালে চলে যাওয়া, সদা হাস্যোজ্জ্বল ‘মানজারুল ইসলাম রানা’।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
(পরিচালক)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D