যে সমস্যায় পড়বেন হুয়াওয়ের ব্যবহারকারীরা

প্রকাশিত: ১১:২৩ অপরাহ্ণ, মে ২১, ২০১৯

যে সমস্যায় পড়বেন হুয়াওয়ের ব্যবহারকারীরা

তথ্য ও প্রযুক্তি ডেস্কঃঃ হুয়াওয়ের অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারের ওপর গুগলের বাধার কারণে চীনা প্রতিষ্ঠানটির পণ্যগুলোর গুলোর ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে অনেক হুয়াওয়ে ব্যবহারকারীই।

হুয়াওয়ে মঙ্গলবার একটি নতুন মোবাইল সেট বাজারে ছাড়তে যাচ্ছে। লন্ডনে অনার ২০ সিরিজ স্মার্টফোন উন্মোচন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার

ধারণা করা হচ্ছে, এই যন্ত্রটিতে অ্যান্ড্রয়েডের সকল কার্যকারিতাই অক্ষুণ্ন থাকবে, গুগলের নিজস্ব অ্যাপস্টোরও ব্যবহার করা যাবে এটি থেকে। কিন্তু মার্কিন সরকারের সাথে চীনা প্রতিষ্ঠানটির দ্বন্দ্ব না মিটলে হুয়াওয়ের ভবিষ্যত সেটগুলোতে অ্যান্ড্রয়েডের অনেক কম কার্যকারিতা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে গুগুল হুয়াওয়ের ওপর যেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা দীর্ঘমেয়াদি হবে কিনা, সেটিও এখনো পরিস্কার নয়।

ধারণা করা যেতেই পারে যে গুগল, স্যামসাংয়ের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইবে না।

হুয়াওয়ে সম্প্রতি জানিয়েছে যে বিশ্বব্যাপী ৫০ কোটি মানুষ তাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করে।

যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও নিরাপত্তা বুর‍্যো চাইলে গুগলকে একটি লাইসেন্স দিতে পারে, যার ফলে গুগল চাইলে হুয়াওয়ের সাথে তাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারে।

তবে যদি ধরে নেই যে শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, তাহলে এই সমস্যার ভবিষ্যত কী হতে পারে?

গুগল কী করছে?
মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি হুয়াওয়ের নন-পাবলিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত সকল হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার বাণিজ্যিক লেনদেন নিষিদ্ধ করেছে গুগল।

তবে এর মানে এই নয় যে হুয়াওয়ে অ্যান্ড্রয়েডের সকল সুবিধা ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হবে, কারণ মূল অপারেটিং সিস্টেমটি একটি ওপেন সোর্স প্রজেক্ট। যে কোনো প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এটি পরিবর্তন করতে এবং নিজেদের মোবাইল ফোনে অনুমতি ছাড়াই ইনস্টল করতে পারবে।

তবে কার্যত, সব মোবাইল তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানকেই অ্যান্ড্রয়েডের নানাবিধ সুবিধা ব্যবহারের জন্য গুগলের ওপরই নির্ভর করতে হয়।

পাশাপাশি, গুগল এই সফটওয়্যারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। যার মধ্যে রয়েছে:

এখনকার হুয়াওয়ে সেটে কী প্রভাব পড়বে?
হুয়াওয়ে বা অনার ফোনের মালিকরা যে হঠাৎ করে নতুন অ্যাপ ইনস্টল করা বা গুগলের সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে, এমনও নয়।

কম্প্যাটিবিলিটি টেস্ট স্যুট এবং ভেন্ডর টেস্ট স্যুটের অধীনে প্রত্যয়িত হওয়ায় গুগল এই হ্যান্ডসেটগুলোতে ব্যবহৃত সফটওয়্যার আপডেট ও ডাউনলোড অনুমোদন করে। তবে নিরাপত্তা বিষয়ক আপডেটের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো জটিল আকার ধারণ করে।

অ্যাপের আপডেটে পরিবর্তন সম্পর্কে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস প্রস্তুতকারকদের একমাস আগে থেকে বার্তা দিয়ে রাখে গুগল, যেন তারা তাদের ডিভাইসে ব্যবহার করা নিজস্ব সফটওয়্যারে যেন সমস্যা না হয় এবং সব পরিবর্তনগুলোকে একত্রিত করে ডাউনলোডের জন্য গ্রাহকদের কাছে উপস্থাপন করে।

তবে এখন অ্যান্ড্রয়েড ওপেন সোর্স প্রজেক্টে (এওএসপি) যেদিন আপডেট প্রকাশিত হবে সেদিনই হাতে পাবে হুয়াওয়ে।

অর্থাৎ নিজেদের গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে কিছুটা দেরীতে আপডেট হস্তান্তর করতে পারবে হুয়াওয়ে।

এর ফলে এমন হতে পারে যে, নতুন আপডেটে গুরুতর কোনো ত্রুটি পাওয়া গেলে হুয়াওয়ের ডিভাইসে সেটি বেশ কয়েকদিন ধরে থেকেই যাবে।

নতুন হ্যান্ডসেট গুলোর কী হবে?
হুয়াওয়ের নতুন ফোনগুলো আর নিবন্ধিত থাকবে না এবং এর ফলে গুগলের নিজস্ব কিছু সুবিধা তারা ব্যবহার করতে পারবে না। সেগুলো হল:

এসব সুবিধার মধ্যে কয়েকটি ওয়েবের মাধ্যমে ব্যবহার করা গেলেও তা অনেকের জন্যই অসুবিধা তৈরি করবে।

চীনে বসবাসরত ব্যবহারকারীদের অনেকেই এর ফলে খুব একটা বেশি প্রভাবিত হবেন না যেহেতু নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা এখনই গুগলের অনেক সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন না। কিন্তু অন্যান্য জায়গার হুয়াওয়ে ব্যবহারকারীদের ওপর এই পরিবর্তনটি ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

অ্যান্ড্রয়েডের ভবিষ্যত ভার্সনগুলোর ক্ষেত্রে কী হবে?
ধারণা করা হচ্ছে, হুয়াওয়ের ডিভাইসগুলো হয়তো অ্যান্ড্রয়েডের বর্তমান ভার্সনেই আটকে থাকবে।

এক্সডিএ ডেভেলপার্স নামের একটি প্রযুক্তি বিষয়ক খবরের ওয়েবসাইটের প্রধান সম্পাদক মিশাল রহমান বিবিসিকে বলেন, অ্যান্ড্রয়েডের পরবর্তী ভার্সন অ্যান্ড্রয়েড কিউ এর ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যা হবে না কারণ এরই মধ্যে গুগল হুয়াওয়ে সহ তাদের অন্যান্য সহযোগীদের সাথে এই ওপেন সোর্স ভার্সনের অধিকাংশ সোর্স কোড শেয়ার করেছে।

তবে ২০২০ সালে অ্যান্ড্রয়েডের পরবর্তী ভার্সন, অ্যান্ড্রয়েড আর’-এর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে বলে মন্তব্য করেন মি. রহমান।

বাজারে সোর্স কোড ছাড়ার অনেক আগেই গুগল তাদের শীর্ষস্থানীয় সহযোগীদের সাথে – যাদের মধ্যে স্যামসাং ও হুয়াওয়েও রয়েছে কোডের প্রিভিউ শেয়ার করে। যার ফলে ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সুবিধা পায়।

হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে গুগলের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকলে হুয়াওয়ে তাদের পণ্য বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যার মুখে পড়ব বলে মনে করেন রহমান।

বিকল্প পথ কী?
হুয়াওয়ে বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতেও অ্যান্ড্রয়েডের সাথে কাজ করার ইচ্ছাপোষণ করে কিন্তু বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে একটি নতুন অপারেটিং সিস্টেমও তৈরি করেছে।

যুক্তরাজ্যে হুয়াওয়ে’র নির্বাহী সহ সভাপতি জেরেমি থম্পসন জানান, একটি বিকল্প তৈরি করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি যা আমাদের ব্যবহারকারীদের অত্যন্ত পছন্দ হবে বলে আমার বিশ্বাস। আপাতদৃষ্টিতে এটিকে হুয়াওয়ের জন্য খারাপ সংবাদ হিসেবে মনে হলেও আমার মনে হয় আমরা সেটি ম্যানেজ করতে পারবো।

সিদি/২১মে ১৯/জুনেদ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল