রাজস্ব ফাঁকিতে সহায়তা করছেন শুল্ক কর্মকর্তারা!

প্রকাশিত: ৩:১৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০১৬

রাজস্ব ফাঁকিতে সহায়তা করছেন শুল্ক কর্মকর্তারা!

দীর্ঘদিন ধরেই আমদানি নথিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশাল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে আমদানিকারক ও খালাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কয়েকজন শুল্ক কর্মকর্তা সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন জালিয়াতির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে এসব কর্মকর্তা ও সিঅ্যান্ডএফ কর্মীদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ব্যাংক নথিসহ বিভিন্ন আমদানি নথি জালিয়াতি করে প্রসাধনী পণ্যের সাতটি চালান খালাসের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন শুল্ক কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি নভেম্বরের মাঝামাঝিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রসাধনী পণ্যের সাতটি চালান খালাস করে ঢাকার পাঁচ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— হোযায়েফা এন্টারপ্রাইজ, প্লানেট ইন্টারন্যাশনাল, রেজুয়ানা এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ট্রেডিং ও ইউনিফাইড ট্রেডিং পয়েন্ট। আমদানি নথিসহ ব্যাংকের যাবতীয় নথি জাল করে আমদানিমূল্য ও পণ্যের নাম পরিবর্তন করে এসব পণ্য খালাস করে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান প্রদ্বীপ ইন্টারন্যাশনাল।

অভিযোগ রয়েছে, চালানটি সংশ্লিষ্ট শাখায় শুল্কায়ন না করে ভিন্ন শাখায় শুল্কায়নে সহায়তা করেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা বেনজির আহম্মদ, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা অরবিন্দ মালী ও মিজানুর রহমান। এ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চালানগুলোর নমুনা যাচাই, খালাস পর্যায়ে কায়িক পরীক্ষাসহ শুল্কায়নের বিভিন্ন ধাপে জালিয়াতিতে সহায়তা করার তথ্য পেয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

আমদানি নথির তথ্যানুযায়ী, ১৩ আগস্ট থাইল্যান্ড থেকে বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্যের তিনটি চালান আমদানি করে ঢাকার প্রতিষ্ঠান হোযায়েফা এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানের তিনটি চালানই খালাসের দায়িত্ব পায় চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান প্রদ্বীপ ইন্টারন্যাশনাল। এসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর আইজিএমে (ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানুফেস্ট) দাখিলের সময় প্রসাধনী পণ্য উল্লেখ করা হলেও চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে পণ্য ছাড় করার সময় (আগামপত্র বা বিল অব এন্ট্রি) বলা হয়েছে চক পাউডার।

একইভাবে মিথ্যা তথ্য দেয়ার মাধ্যমে আইজিএমে উল্লিখিত তথ্যের সঙ্গে আগামপত্রে দাখিলকৃত তথ্যে মিল পাওয়া যায়নি প্লানেট ইন্টারন্যাশনাল, রেজুয়ানা এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ট্রেডিং ও ইউনিফাইড ট্রেডিং পয়েন্টের চালানে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলতি মাসের ১৩ তারিখে প্লানেট ইন্টারন্যাশনালের ৯ লাখ টাকা মূল্যের কাপড়ের হ্যাংগারের চালানে কয়েক কোটি টাকার প্রসাধনী আমদানির প্রমাণ পেয়েছেন শুল্ক কর্মকর্তারা। ব্যাংক নথি জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্যের নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি আমদানিমূল্যও কম দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। একইভাবে রেজুয়ানা এন্টারপ্রাইজ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩৪ শতাংশ ‘পেপার কোর’-এর শুল্ক পরিশোধ করে ১০৫ শতাংশ থেকে ১৪৫ শতাংশ শুল্কযুক্ত বডি স্প্রে ও লোশন আমদানি করেছে। ১৩ নভেম্বর চালানটি আমদানি করা হয়।

চলতি মাসের ১৪ নভেম্বর ন্যাশনাল ট্রেডিং হংকং থেকে ‘কর্ক শিট’ আমদানির নামে আগামপত্রে (নং-১৩০৫৭০৮) মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লিপস্টিক, পাউডার, স্নো, বডি স্প্রে আমদানি করে। একইভাবে এ প্রতিষ্ঠানও বিশাল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

ইউনিফাইড ট্রেডিং পয়েন্ট (আগামপত্র-১৩২৮৬৩১) নামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের চালান খালাসেও অনিয়ম পেয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার এএফএম আবদুল্লাহ খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সাতটি চালানে প্রসাধনী পণ্য আমদানি করা হলেও রাজস্ব ফাঁকি দিতে আগামপত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল খালাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান। একটি প্রতিষ্ঠানের তিনটি চালানসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মোট সাতটি চালানই শুল্কায়নে অনিয়ম হয়েছে। খালাস নেয়া এসব চালানে কাস্টমসের তিন কর্মকর্তার জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা কিংবা দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। গতকাল (রোববার) সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে বহিষ্কার ও অন্য দুই কর্মকর্তা বেনজির আহম্মদ (রাজস্ব কর্মকর্তা) ও অরবিন্দ মালীকে (সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা) বর্তমান কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান প্রদ্বীপ ইন্টারন্যাশনালের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।’

কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা কাস্টমসের এআইআর শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা অরবিন্দ মালীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘ভুলবশত’ এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন। বর্তমান এআইআর শাখা থেকে বদলি করে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করার বিষয়টি এ সময় স্বীকার করেন তিনি।