২০শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৪১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে না পারায় লিবিয়ায় অন্ধকার টর্চারসেলে বন্দি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার যুবক সামাজুল ইসলাম।
উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখে সহায়-সম্বল একটি সিএনজি বিক্রি ও ধার-কর্জ করে বিদেশ গিয়ে এখন অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি সামাজুল।
প্রায় ৪ মাস ধরে অন্ধকার টর্চারসেলে বন্দি রেখে ২০/২২ দিন পূর্বে দেশে তার ভাইয়ের কাছে ১০ লাখ মুক্তিপণ দাবি করেছে দালালচক্র। অন্যথায় তাকে ফেরত দেয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় কোনো উপায়ান্তর না দেখে পিতৃহীন সামাজুলের চাচা বাদী হয়ে হবিগঞ্জ মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান বাড়িতে চরম দুর্বিসহ দিনযাপন করছেন। তার স্ত্রী রীনা আক্তার শিশুদের নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি তার স্বামীকে ফেরত পেতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
উপজেলার তারাসুল গ্রামের মৃত আ. সালাম মিয়ার ছেলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবন চালাতেন। গরিব কৃষক পরিবারের এই সন্তানকেই টার্গেট করে একই উপজেলার গণেশপুর গ্রামের নূর আলীসহ একটি দালালচক্র।
দক্ষিণ আফ্রিকায় লক্ষাধিক টাকা বেতনে চাকরির সুযোগ রয়েছে বলে তাকে লোভ দেখায় মো. নূর আলী চক্র। সেই প্রলোভনে পা দেন সামাজুল। কথানুসারেই এক মাসের মধ্যে নগদ তিন লাখ টাকাসহ ভিসার জন্য পাসপোর্ট, ছবি নূর আলীর নিকট দেন তিনি।
গত ১৮ মে নূর আলী তাকে জানান, সাউথ আফ্রিকার ভিসা হয়েছে। পরদিন ফ্লাইট। দ্রুত আরও দেড় লাখ টাকা দিতে হবে। এবার তাড়াহুড়া করে নিজের শেষ সম্বল সিএনজি অটোরিকশা বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা তুলে দেন নূর আলীর হাতে।
১৯ মে বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি বিমানে তুলে দেয়া হয় সামাজুলকে। জানানো হয়, দুবাইয়ের শারজাহ বিমানবন্দরে দালালচক্রের লোকজন তাকে গ্রহণ করবে। সেখান থেকে স্থলপথে সাউথ আফ্রিকা পাঠানো হবে তাকে।
স্বজনরাও তাকে বিদায় জানালেন, দেশ ছেড়ে গেলেন। এরপর থেকে সামাজুলের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। দীর্ঘদিন তার কোনো হদিস নেই।
দালাল নূর আলী, এই চক্রের সদস্য রাসেল মিয়া, রাকিব হাসান কেউ কোনো সন্ধান দিতে পারে না। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান স্বজনরা। এভাবে প্রায় তিন মাস কেটে যায়। সামাজুল বেঁচে আছে কি না, তাও জানেন না তারা।
এ অবস্থায় বাড়িতে সামাজুলের এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার স্ত্রী অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটায় এবং কান্নাকাটি করেন।
গত ১৫ আগস্ট হঠাৎ করেই বড় ভাই তাজুল ইসলামের মোবাইলে কল দেয় সামাজুল। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সামাজুল। বলে উঠে ‘আমাকে বাঁচান। আমি এই জীবনে কখনও বিদেশের নাম নেব না। আমাকে এই জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। আমাকে ওরা মেরে ফেলবে।’
সামাজুল আরও বলেন, ভাই আমাকে ওরা অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি করে রেখেছে। মাঝে মাঝে টর্চাল সেলে নিয়ে টাকার জন্য মারধোর করে।
এভাবেই দেশে স্বজনদের কাছে বাঁচার আকুতি জানান বিদেশে দালালচক্রের হাতে জিম্মিরা। প্রায় চার মাস যাবৎ জিম্মি তারা।
এ জিম্মিদের রাখা হয়েছে টর্চার সেলে। এটি অন্ধকার ছোট একটি কক্ষ। সেখানে রাখা হয়েছে ১০ থেকে ১২ জনকে। রাত এলেই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে দালালরা। একেক জন করে ডেকে নেয় আলাদা কক্ষে। তারপর কান্নায় ভারি হয়ে উঠে বাতাস। বিদেশে এই কান্না চার দেয়ালেই আটকে থাকে। তবে দালালরা মাঝে মধ্যে কান্নার শব্দ শোনায় দেশে থাকা স্বজনদের। কান্নার শব্দ শুনিয়ে দাবি করে টাকা। দাবিকৃত টাকা না দিলে হত্যা করার হুমকি দেয়।
এখানেই শেষ নয় অত্যাচারের। মারধর ছাড়াও খাবার বন্ধ করে দেয়া হয়। খাবার নেই, পানি নেই। দিনে একবার, কখনও কখনও একদিন পরপর নামমাত্র খাবার ও পানি দেয়া হয়। খেয়ে না খেয়ে শরীর শুকিয়ে হাড্ডিসার।
এ ব্যাপারে সামাজুলের চাচা আ. কদ্দুছ মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে দালাল মো. নূর আলী, ট্রাভেলসের মালিক রাকিব হাসান ও রাসেল মিয়াসহ অজ্ঞাত ৩/৪ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
আ. কদ্দুছ জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার কথা বলে তাকে লিবিয়ায় আটকে রাখা হয়েছে। প্রতি রাতেই বেদম প্রহার করা হয় তাদের। চক্রের সদস্যদের দাবি একটাই, টাকা চাই। দেশ থেকে টাকা নিতে চাপ দিচ্ছে তারা। সামাজুলের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি। সামাজুল হাতে-পায়ে ধরে অনুনয়-বিনয় করেন।
সামাজুল জানান, তিনি গরিব। তার মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন। সেটিও বিক্রি করে দিয়েছেন বিদেশে যাওয়ার জন্য। এখন তার কিছুই নেই। তারপরও মন গলেনি দালাল চক্রের সদস্যদের। বরং টাকা না পেয়ে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। আগুন দিয়ে রড গরম করে ছ্যাঁকা দেয়া হয়। লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করা হয় তাকে। নামমাত্র খাবার দেয়া হয়। কোনোভাবে বেঁচে আছেন তিনি।
এ খবর পেয়ে সামাজুলের বড় ভাই দরিদ্র তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। সামাজুল তার শেষ সম্বল বিক্রি করে সাউথ আফ্রিকা যেতে চেয়েছিল। দালালরা প্রতারণা করে তাকে লিবিয়া নিয়ে বন্দি করে নির্যাতন করছে। তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এই অবস্থায় আমার চাচা মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন।
তিনি বলেন, মামলা দায়েরের পর দালালরা আমার ভাইকে ছেড়ে দেবে বলে বারবার তারিখ করছে। কিন্তু এখনও সামাজুলকে ছাড়েনি।
এ বিষয়ে সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে আটক সামাজুলের স্ত্রী রীনা আক্তার। তিনি বলেন, আমার কোনো অর্থ-সম্পদ নেই, আমি আমার দুটি শিশু ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যাপন করছি। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই, আমি আর কিছু চাই না।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D