শাকিব এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী

প্রকাশিত: ৬:০১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২১

শাকিব এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী

বিনোদন ডেস্ক:
করোনাকালে অন্য সবার মতো প্রায় সাত মাস কর্মহীন ছিলেন এ মুহূর্তের দেশসেরা নায়ক শাকিব খানও। ঠিক সে মুহূর্তে চিত্রপরিচালক অনন্য মামুন দুঃসাহসী একটি সিদ্ধান্ত নিলেন। দেশের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া তারকা শাকিব খানকে নিয়েই শুরু করলেন ‘নবাব এলএলবি’ নামে নতুন ছবির কাজ। করোনাকালেই মুক্তি দিলেন ছবিটি। সেটিও ছিল একটি দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত। কারণ অনলাইন প্ল্যাটফরমে একটি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক নতুন পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছবি এ পর্যন্ত কেউ মুক্তি দেওয়ার মতো সাহস কিংবা সিদ্ধান্ত কোনোটিই নিতে পারেননি। মামুন নিয়েছেন। তাও আবার শাকিব খান অভিনীত ছবি। যদিও এ ছবির একটি দৃশ্যের জন্য তাকে জেলও খাটতে হয়েছে। সেটি অন্য হিসাব। কিন্তু করোনাকালে যেখানে একটি বিগ বাজেটের ছবি মুক্তি দেওয়া আসলেই দুঃসাহসী কাজ। এ ছবির মধ্য দিয়ে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর আবারও পর্দায় ফিরলেন শাকিব। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন একেবারে নতুন গেটআপ। দেশের গত এক যুগের সিনেমাহলের হিসাবের মতো ওটিটি প্ল্যাটফরমেও শাকিব ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তর্কবিতর্ক যাই থাকুক না কেন, করোনাকালে শাকিবের ফিরতি যাত্রাটা ভিন্ন আঙ্গিকের হওয়াটা খুব দরকার ছিল। হয়েছেও তাই। কথা হচ্ছিল শাকিবের ভিন্ন লুক কিংবা গেটআপ নিয়ে। ‘নবাব এলএলবি’ সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযোজনার ছবি। নির্মাতা অনন্য মামুন জানে, কীভাবে শাকিবের মতো একজন নায়ককে ছবিতে ব্যবহার করতে হয়। সংলাপ, দৃশ্য ও গল্প তো বটেই, বাহ্যিক অবয়বেও। তাই তো ‘নবাব এলএলবি’ ছবিতে প্রতিবাদী আইনজীবী শাকিবকে তার ভক্ত-দর্শকরা দেখামাত্রই লুফে নিয়েছেন। যদিও তার এই লুক পরিবর্তনটা শুরু হয়েছে কলকাতা থেকে। ২০১৬ সালে যখন বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবিতে অভিনয় করতে কলকাতায় যান শাকিব, তখনই সেখানকার নির্মাতারা তাকে আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তারা দেখিয়ে দিয়েছেন, শাকিব শুধু একজন জাত অভিনেতাই নন, লুকেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী; যদি তাকে সেভাবে তৈরি করা যায়। এরপর আরও একটি যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘নবাব’-এ শাকিব খান এলেন নতুন একটি লুকে। এ ছবিতেও বাজিমাত। তারপর কলকাতার প্রযোজনার ছবি ‘ভাইজান এল রে’। বলা যায়, শাকিব বন্দনায় তখন মেতে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গের দর্শকও। মুখে স্বীকার না করলেও সেখানকার সুপারহিট তারকা দেব ও জিৎরাও যে শাকিব খানকে নিয়ে টেনশনে ছিলেন, সেটি ওই ইন্ডাস্ট্রির পরবর্তী কিছু কার্যক্রমে বোঝা গিয়েছিল। টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি চলনে, বলনে ও গেটআপে শাকিবের মধ্যে যে পরিবর্তন এনে দিয়েছিলেন, সেটি ব্যবহার করতে শুরু করলেন ঢাকার নির্মাতারা। এর মধ্যে শাকিব খান নিজের প্রযোজনায় মালেক আফসারিকে দিয়ে বানালেন ‘পাসওয়ার্ড’। ছবিটি ব্যবসায় সফলতা পেলেও এতে শাকিবের গেটআপে যে আহামরি কোনো পরিবর্তন আনতে পেরেছেন পরিচালক, তা মনে হয়নি। তবে কাজী হায়াৎ শাকিব খানকে নিয়ে ‘বীর’ ছবিতে কিছুটা এক্সপেরিমেন্ট করতে চেয়েছিলেন। ছবিটির ব্যবসায়িক সফলতা আহামরি না হলেও এতে যে নায়ককে একেবারেই ভিন্ন লুকে হাজির করেছেন পরিচালক, সেটি ছিল স্পষ্ট। সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘নবাব এলএলবি’তেও শাকিবের পরিবর্তন ছিল স্পষ্ট। তবে বাস্তব জীবনে নিজের শরীরের প্রতি অবহেলার কিছু ছাপও এ ছবিতে তার গেটআপে লক্ষ করা গেছে। নবাব এলএলবির পর তিন মাসের বিরতি। এবার ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত নতুন ছবি ‘অন্তরাত্মা’য় নতুন গেটআপে হাজির হচ্ছেন বলে জানা গেছে ফেসবুকে ছবি সংশ্লিষ্টদের প্রকাশ করা ‘লুক’-এর বদৌলতে। শাকিব খানও তার পেজে এ সংক্রান্ত কিছু ছবি পোস্ট করেছেন। দেখে মনে হয়েছে, ‘এবার বোধহয় কিছু একটা হবে!’ কিন্তু ভালো করে লক্ষ করলে বোঝা যাবে, অন্তরাত্মার এই লুকেও কিন্তু সেই কলকাতার নির্মাতাদের তৈরি করা লুকটার স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। অর্থাৎ ওপারের নির্মাতারা যে শাকিবকে তৈরি করে দিয়েছেন, সেই শাকিবকেই কিন্তু এখানকার নির্মাতারা ভেঙেচুরে খাচ্ছেন। নিজেদের কোনো আহামরি কেরামতি তারা দেখাতে পারেননি। তারপরও শাকিব নিজের প্রচেষ্টায় যেভাবে নিজেকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন, সেটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী বলতেই হবে। কারণ, কাগজে-কলমে তো বটে, বাস্তবতার নিরিখে যদি হিসাব করা হয়, শাকিব খানের পর ইন্ডাস্ট্রিতে আর কোনো নায়ক আছে, তাহলে দুই থেকে দশ বাদ দিয়ে, এগারো থেকেই তাদের গুনতে হবে। গত দশ বছরের ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসায়িক হিসাব কিন্তু এ সংখ্যাতত্ত্বেরই সাক্ষ্য দেয়।

 

 

দৈনিক সিলেটের দিনকাল:pd