১৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৮, ২০২৫
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটের ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনায় গঠিত জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও রোববার সময়সীমা শেষ হলেও কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এ অবস্থায় তদন্তের স্বার্থে আবারও তিন দিনের সময় বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) পদ্মাসেন সিংহ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। বিস্তারিত যাচাইয়ের স্বার্থে আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। তাই জেলা প্রশাসকের কাছে তিন দিনের সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এবং সংলগ্ন রেলওয়ে বাঙ্কারে ভয়াবহ লুটপাট চলে আসছে। প্রথমে রাতের আঁধারে হলেও পরে দিনের আলোতেও প্রকাশ্যে এই লুট চলে।
স্থানীয়দের দাবি, এ পর্যন্ত অন্তত দেড় কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ২০০ কোটির বেশি।
একসময় দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকা এখন প্রায় পাথরশূন্য। আর রেলওয়ে বাঙ্কার ধসে পড়েছে খানাখন্দে। দেশজুড়ে এই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠার পর জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ১২ আগস্ট তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান করা হয় পদ্মাসেন সিংহকে। আর সদস্য হিসেবে রাখা হয়- কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক আফজারুল ইসলাম।
এ তদন্ত কমিটি নিয়েই বিতর্ক দেখা দেয়। অভিযোগ রয়েছে, যাদের দায়িত্বকালে লুটপাট বেড়েছে, তারাই এখন কমিটির সদস্য।
ইউএনও আজিজুন্নাহার এ বছরের জানুয়ারিতে কোম্পানীগঞ্জে যোগদান করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাঁর দায়িত্বকালে লোকদেখানো অভিযান আরও শিথিল হয়ে গেছে, এবং সেই সুযোগে লুটপাটকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া প্রতিদিন পাথর কোয়ারি থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের নামে টাকা উত্তোলন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, এই টাকা উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা তাজুল ইসলাম মোল্লাকে সবাই ‘পরিবেশ মোল্লা’ নামে চেনে। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তাকেও রাখা হয়েছে কমিটিতে।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, যাদের গাফিলতিতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট হয়েছে, তাদের দিয়ে তদন্ত করলে সত্য উদঘাটন সম্ভব নয়।
পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, ‘যার ব্যর্থতায় লুট হলো, তাকেই আবার তদন্তে বসানো জনগণের সঙ্গে তামাশা ছাড়া কিছু নয়।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক কাশমীর রেজা বলেন, ‘প্রশাসনের নাকের ডগায় লুটপাট হয়েছে। যোগসাজশ ছাড়া দিনের পর দিন এমন লুটপাট সম্ভব নয়।’
জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, ইউএনও এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে সাচিবিক দায়িত্ব পালনের জন্য।
জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত আছে, যা তদন্তে কাজে দেবে। যদি কারও গাফিলতি প্রমাণিত হয়, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কমিটির প্রধান পদ্মাসেন সিংহও ইউএনওর উপস্থিতিকে সমর্থন করে বলেন, ‘তিনি বহু অভিযান পরিচালনা করেছেন, সাজা দিয়েছেন। তাঁর উপস্থিতি তদন্তে কাজে দেবে।’
তবে সাধারণ মানুষ ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো মনে করছে, যাদের ব্যর্থতার কারণে কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট হয়েছে, তাদের দিয়ে তদন্ত করানো হলে প্রকৃত সত্য বের হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষায়, ‘ব্যর্থদের দিয়ে তদন্ত করানো মানেই সত্যকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা।’
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D