১৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক ::
প্রতিমা রিকমন। দশম শ্রেণীতে পড়ে। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকার চা বাগান পালকিছড়া। অবহেলিত নৃগোষ্ঠীর তালিকায় তাদের জাতিসত্তার নাম থাকলেও তাদেরকে কেউ খবর রাখে না। প্রতিদিন স্কুলে প্রায় চার কিলোমিটার মনু নদীর পাড়ে হেটে যায় হেটেই আসে। বেশীরভাগ সময় বিদ্যালয়ে পৌছতে পারে না সে। আর অবহেলাতো আছেই।
সে জানায় বাবা-মায়ের কাছে বাইসাইকেল চেয়েছিল কয়েকবার কিন্তু ১২০ টাকা মজুরির চা শ্রমিক বাবা বাদল রিকমন ও ফুলকুমারী রিকমনে সাদ্য নেই একটি সাইকেল কিনে দেওয়ার। এজন্য করোনার পর স্কুল খুললে কিভাবে স্কুলে যাবে। সেটা নিয়েই ছিল বড় দুশ্চিন্তা। বড় নিরাশায় দিন কাটে। কিন্তু বিদ্যালয় খোলার আগেই সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সরকারের কাছ থেকে একটি বাইসাইকেল পাওয়ায় তার স্কুলে যাতায়াতের কষ্ট লাঘব হয়।
প্রতিমা বলে, প্রতিদিন সকালে চা শ্রমিক মা-বাবার জন্য রান্না করতে হয়। তাই প্রতিদিন স্কুলে যেতে দেরি হয়। রাতে স্কুল থেকে ফিরে ক্লান্ত হয়ে যেতাম। না খেয়েই বেশীরভাগ সময় ঘুমিয়ে যেতাম। অন্যদিকে ছেলেরা রাস্তায় বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলতো। এখন আর কেউ পাত্তা পাবে না। এখন আমি আমার পাশের বাড়ির বোনকে নিয়ে সহজে বিদ্যালয়ে চলে যেতে পারবো। মনে মনে খুব ভালো লাগছে। সে বলে, শুধু আমি না আমার মাবাবাও খুশি। এখন আমিও ক্রিং ক্রিং বাজিয়ে দ্রুত গতিতে স্কুলে পৌঁছে যাবো।
একই রকম কথা বললেন শ্রাবনি খাড়িয়া, গংগামনি উরাং, আরতি মাহালিসহ অনেকে।
তাদের মতো ৩০ জন ছাত্রী এখন রোজ বাইসাইকেল নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা–যাওয়া করবে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে তারা এই বাইসাইকেল পেয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা চত্বরে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ টি এম ফরহাদ চৌধুরীর উপস্থাপনায় ছাত্রীদের হাতে ওই সাইকেল গুলো তুলে দেন প্রধান অতিথি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান এনডিসি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, মেয়েদের সাহসী হতে হবে। তাদের স্বপ্ন দেখতে হবে। শিক্ষিত হতে হবে তবেই যে কোন রকমের বাধা অতিক্রম করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, তারা যে সমাজ নির্মাণে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে সেটি সহজেই বোঝা যায় এই স্কুলের ছাত্রীদের দেখলে। নারীদের শিক্ষা গ্রহণ করেই কিন্তু শেষ নয়। নিজেদের যোগ্য হিসেবে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে, চাকুরি ছাড়াও যেকোনো ক্ষেত্রে তারা নিজেদের যোগ্যতা বলে স্থান করে নিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নারীদের এগিয়ে নেয়ার পেছনে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। দুর্গম এলাকার মেয়েরা যাতে স্কুলে যেতে পারে সহজে, সেই বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের বাইসাইকেল দিচ্ছেন। শুধু সাইকেল নিলেই চলবে না, এর মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারলে তবেই প্রধানমন্ত্রীর এই প্রচেষ্টা সফলতার মুখ দেখবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন,উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান রুমন প্রমুখ।
চাতলাপুর চা বাগানে নৃগোষ্ঠী অভিভাবক অভিরাম বেক বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তালিকা অনুযায়ী ৫০টি জনগোষ্ঠী থাকলেও চা বাগানের বসবাসরত প্রায় ২৫টি চা-বাগানে বসবাস করে। তাদের খবর কেউ রাখে না। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগের ফলে আমরাও সেই সুযোগগুলো পেলাম। যা আগে পেতাম না।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, যেন কেউ বঞ্চিত না হয়। কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে সে বিষয়ে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D