সিলেটের আম-জনতার পাশে সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতাল-মাওলানা হাবিব

প্রকাশিত: ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৬, ২০২৫

সিলেটের আম-জনতার পাশে সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতাল-মাওলানা হাবিব

সিলেটের আম-জনতার পাশে সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতাল-মাওলানা হাবিব

মানবিক সহায়তা ও ফ্রি চিকিৎসায় অনন্য অবদান সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালের

অনলাইন ডেস্ক

 

আবদুল কাদের তাপাদার

সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র সোবহানিঘাটে অবস্থিত সিলেটের সবচেয়ে ব্যস্ত ও জনপ্রিয় বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিমিটেড চব্বিশের ৩৬ জুলাইয়ের রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানে আহত এবং পঙ্গু হয়ে পড়া সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ও শহীদ সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের ফ্রি চিকিৎসায় এক অনন্য ও যুগান্তকারী অবদান রেখেছে। সে সময় পুলিশ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের হাতে আহত ও পঙ্গু শিক্ষার্থীদের আশ্রয়ের, চিকিৎসার কোনো জায়গা ছিল না সিলেট শহরে। ফ্যাসিবাদী সরকার ও তার পেটোয়া বাহিনী গুলি করে, বুলেট ছুঁড়ে অসংখ্য আন্দোলনকারীদের আহত করে। তাদের বেশির ভাগই ভর্তি হন ইবনে সিনা হাসপাতালে। সরকার ও পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রবল বাধা ও চরম প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আন্দোলনে আহত ও পঙ্গুদের চিকিৎসা চালিয়ে নেন। নয়া দিগন্তের তৎকালীন সিলেট প্রতিনিধি ও দৈনিক জালালাবাদের রিপোর্টার সাংবাদিক এ টি এম তুরাব পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে ভর্তি হন ইবনে সিনা হাসপাতালে। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়। তখন পুলিশ জোর করে লাশ নিয়ে গুম করতে চাইলে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন এই হাসপাতালের চেয়ারম্যান, সিলেটের সুপরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজসেবক মাওলানা হাবিবুর রহমান। নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে আন্দোলনের শেষ দিকে হাসপাতালে আসা আহত ও পঙ্গু শিক্ষার্থীদের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির বর্ণনা দেন। তিনি জানান, হাসপাতালের পোস্ট অপারেটিভে হাজার খানেক আহত রোগী ভর্তি হয়। এক দিকে পুলিশের বাধা, সরকারের অসহযোগিতা, অন্য দিকে পর্যাপ্ত জায়গা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছিলাম।

গণ-অভ্যুত্থানে ইবনে সিনা হাসপাতাল আহত পঙ্গু ও নিহতের চিকিৎসা বাবত এক কোটি টাকারও বেশি খরচ করে। তিনি আরো বলেন, ইবনে সিনায় আহত ও পঙ্গু হিসেবে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের একটা বড় তালিকা পেয়েছে জেলা প্রশাসন। তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

২০০৯ সালের ১০ এপ্রিল চালু হওয়ার পর থেকেই মাওলানা হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একদল মানবদরদী পরিচালক ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সিলেট জনপ্রিয় হয়ে উঠে ইবনে সিনা হাসপাতাল। চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের মানবিক দিক বিবেচনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয় হাসপাতালটি।

হাসপাতালের এ জি এম অ্যান্ড হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মোহাম্মদ ওবায়দুল হক নয়া দিগন্তকে জানান, আড়াই শ’ বেডের এই হাসপাতাল সবসময়ই রোগীতে পরিপূর্ণ থাকে। প্রায় ১০০ জন নামি-দামি চিকিৎসকের সেবায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক অনন্য ও অসাধারণ হয়ে উঠেছে ইবনে সিনা হাসপাতাল। প্রতিদিন চিকিৎসক দেখাতে আসেন প্রায় ৪ হাজার লোক। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৬০০ রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এই হাসপাতালে আসেন। প্রতি মাসে রোগী ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো ছাড় দেন।

তিনি হাসপাতালের চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমানকে একজন অসাধারণ মানবদরদি, মানবিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, হাসপাতাল কেবল ব্যবসা নয়, এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের তথা সমাজের মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার আবশ্যকতাকেও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখেন। এ কারণে সিলেটে সাম্প্রতিক বন্যায় বিশুদ্ধ খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়েছে ইবনে সিনার পক্ষ থেকে। এ ছাড়া শীত মওসুমে শীতের কাপড় বিতরণ করা হয়েছে বিভিন্ন এলাকার গরিব মানুষের মধ্যে। এতে হাসপাতালের প্রায় কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

৬ হাজার ঠোঁটকাটা ও তালুকাটা রোগীর ফ্রি চিকিৎসা

ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেটের উদ্যোগে প্রতি মাসে সমাজের চরম অবহেলার শিকার ঠোঁটকাটা ও তালুকাটা রোগীর ফ্রি চিকিৎসা করা হয়। তাদের জীবন আলোকিত করতে, মুখে হাসি ফোটাতে এক যুগান্তকারী মানবিক ভূমিকা পালন করছে এই হাসপাতাল।

সিলেট নগরীতে ইবনে সিনা হাসপাতালের আরেকটি শাখা রয়েছে রিকাবীবাজার। সেটা চালু হয়েছে ২০১৮ সালে। তবে সেখানে শুধু ডায়াগনস্টিক ও ডাক্তারের পরামর্শ পাওয়া যায়। রিকাবীবাজার ইবনে সিনায় প্রতিদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান ৪০০ রোগী। আর চিকিৎসক দেখিয়ে ব্যবস্থাপত্র সংগ্রহ করেন গড়ে দেড় হাজার রোগী।

সিলেট প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক জালালাবাদের সম্পাদক মুকতাবিস উন নূর সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালের চিকিৎসার ভূয়সী প্রশংসা করে নয়া দিগন্তকে বলেন, বেসরকারি চিকিৎসাব্যবস্থায় সিলেটে সত্যি বিপ্লব ঘটিয়েছে ইবনে সিনা। চিকিৎসার পাশাপাশি মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিতে তাদের নজর দেয়া একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা।

সচরাচর আমরা কোনো বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে এমন দেখি না। সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জুবায়ের বখত জুবের নয়া দিগন্তকে জানান, ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা অতুলনীয়। তাদের সামাজিক ও মানবিক অবদান সবার দৃষ্টি কেড়েছে। এই সেবা ও মানবিক অবদান দিন দিন বাড়তে থাকুক এই কামনা করি।

সুত্র : নয়া দিগন্ত

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল