সিলেটে এডভোকেসি সভা : ড্রামে খোলা ভোজ‍্যতেল জনস্বাস্থ্যের হু ম কী

প্রকাশিত: ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫

সিলেটে এডভোকেসি সভা : ড্রামে খোলা ভোজ‍্যতেল জনস্বাস্থ্যের হু ম কী

সিলেটে এডভোকেসি সভা : ড্রামে খোলা ভোজ‍্যতেল জনস্বাস্থ্যের হু ম কী

অনলাইন ডেস্ক : রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। খোলা তেল জনস্বাস্থ্য, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা উভয়ের জন্যই হুমকি। এই ধরনের তেল সাধারণত খাদ্য-গ্রেড নয় এমন রাসায়নিক ড্রামে পরিবহন করা হয়, যা পরিষ্কারভাবে সংরক্ষণ ও পরিবহন করা হয় না, যার ফলে তেল দূষিত হয় এবং ইঁদুর-বিড়াল বা ময়লার সংস্পর্শে আসে। এছাড়া এই তেলগুলি ভিটামিন-সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও একটি বড় বাধা, যা দেশের সুস্থ ও রোগমুক্ত প্রজন্ম গড়ার পথে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা হলো, দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম খোলা তেল ক্রয় করে সিলেটের মানুষ। সিলেটে খোলা তেল ব্যবহারীর হার মাত্র ১১ শতাংশ।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর উদ্যোগে ‘ভোজ্যতেল ক্রয়-বিক্রয়ে অনিরাপদ ড্রাম ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার লক্ষ্যে’ অংশীজনের অংশগ্রহণে বিভাগীয় এডভোকেসি সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। সিলেট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে বুধবার সকালে এই সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআই এর মহাপরিচালক গ্রেড-১ এস এম ফেরদৌস আলম। সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) জনাব খান মোঃ রেজাউন-নবী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জনাব মুঃ মাসুদ রানা এবং ডাঃ মোঃ আনিসুর রহমান, পরিচালক (স্বাস্থ্য)।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসটিআই এর মহাপরিচালক গ্রেড-১ জনাব এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ ও ডি সমৃদ্ধকরণ আইন ২০১৩ সালে পাস হয়েছে এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিএসটিআই ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এই আইন বাস্তবায়নে কাজ করছে। বর্তমানে বাজারে ড্রাম ও প্যাকেটজাত উভয় ধরনের ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে। ড্রামজাত তেলের গুণগত মান মানদ-ের নিচে এবং এতে ভিটামিন ‘এ’ এর ঘাটতি রয়েছে। অথচ ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ ও ডি সমৃদ্ধকরণ জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরী। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষায় সকলেই সচেতন হয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

বিএসটিআই এর বিশাল কর্মযজ্ঞ বিষয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক এস এম আবু সাঈদ। খোলা ভোজ্যতেলের ক্ষতিকর দিক ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধের লক্ষ্যে করণীয় বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের লার্জ স্কেল ফুড ফরটিফিকেশন প্রোগ্রামের, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডাঃ রীনা রানী পাল। ভোজ্যতেল পরিবহণ, সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক ড্রামের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি বর্তমানে একটি বড় উদ্বেগের বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। এসব নন-ফুড গ্রেড কেমিকেলের ড্রামগুলো অবিলম্বে বিকল্প প্যাকেজিংয়ে প্রতিস্থাপন করা উচিত। পাশাপাশি, ভিটামিন সমৃদ্ধ ভোজ্যতেলের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য স্বচ্ছ প্যাকেজিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি অভিহিত করেন। ভিটামিন এ ও ভিটামিন ডি ঘাটতি মোকাবেলা করার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ও সুশীল সমাজের সহায়তায় কেমিকেল ড্রামের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বিশেষত, ভিটামিন এ ও ডি এর অভাবের কারণে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে, এবং তাই আগামীতে ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ ও ডি মিশ্রণের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার জনাব খান মোঃ রেজাউন-নবী বলেন, ভোক্তা স্বার্থে খোলা সয়াবিন তেল বন্ধ করে প্যাকেজিং এর আওতায় এনে তাতে ভিটামিন এ ও ডি সমৃদ্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের চিন্তা-চেতনা, নৈতিকতা ও মননে উন্নয়ন করা প্রয়োজন।

কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআই, প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালকগণ ও সহকারী পরিচালকগণ, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ, সিলেট জেলার বিভিন্ন বাজার মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রতিনিধিবৃন্দ, জেলার বিভিন্ন তেল ব্যবসায়ীবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক।

এদিকে, ‘ভোজ্যতেল ক্রয়-বিক্রয়ে অনিরাপদ ড্রাম ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার লক্ষ্যে’ অংশীজনের অংশগ্রহণে বিকেলে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসটিআই এর মহাপরিচালক গ্রেড-১ এস এম ফেরদৌস আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন, সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, সিভিল সার্জন ড. মোধ নাসির উদ্দিন। সভাপতিত্ব্ করেন জেলা প্রশাসক মো: সারওয়ার আলম।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল