১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২৫
সিলেটে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আশার আলো
নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো। এ নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম কম হয়নি। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই। নিষেধাজ্ঞা বহাল। তবে সাম্প্রতিক আন্দোলন আর পরিবহন মালিক শ্রমিকদের ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটের পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন পরিবহন মালিক শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। তারা মঙ্গলবার ( ৮ জুলাই) থেকে সিলেট জেলাজুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের পরিবহনে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। পরে ৭ ঘন্টা কর্মসূচি পালনের পর তারা তাদের কর্মসূচি দু’দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন।
এরমধ্যে বিকেলে সিলেটের রাজনৈতিক ও পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো, রেজা-উন-নবী। এ সভায় পরিবহন মালিক শ্রমিক ও পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ তাদের দাবি দাওয়া তুলে ধরেন।
সভায় পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় সিলেটের হাজার হাজার পাথর শ্রমিক ও মালিক এবং পরিবহন শ্রমিকদের জীবন এখন অসহায় হয়ে পড়েছে বলে জানান নেতৃবৃন্দ। তারা জানান, বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের পাথর কোয়ারি থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে পাথর উত্তোলন করা শুরু হলেও সিলেটের ক্ষেত্রে এখনো নিষেধাজ্ঞা বহাল। এটি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য চরম বৈষম্যমূলক আচরণ।
তারা জানান, সিলেটবাসী যখন আশায় বুক বাঁধছেন যে, অন্তত সনাতন পদ্ধতিতে হলেও সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হবে। ঠিক তখনই পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জাফলং এসে ঘোষণা দেন, সিলেটের আর কোনো পাথর কোয়ারি খোলে দেওয়া হবেনা। তার এমন ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়ে তাৎক্ষনিক তার গাড়িবহর অবরোধ করেন স্থানীয় জনতা। আর পরে আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া এবং বিভিন্নভাবে কর্মবিরতি পালনের পর তারা চূড়ান্তভাবে সিলেট জেলাজুড়ে পণ্য ও গণপরিবহনে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন।
তারা বলেন, সরকার অনুমতি না দিলেও সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ নয়। একদল লোক চুরি করে কোটি কোটি টাকার বালু-পাথর নিয়ে যাচ্ছে। তাদের ধরা হচ্ছেনা। সরকারও ট্যাক্স বঞ্চিত। কিন্তু অনুমতি দিলে সরকার ট্যাক্স পেতেন। সংশ্লিষ্টদেরও উপকার হতো।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার গভীর মনোযোগে সবার বক্তব্য শোনেন এবং নিজের বক্তব্যে আশার বাণী শোনান।
তিনি বলেন, জনগনের জন্য সরকার, সরকারের জন্য জনগন নয়। জনগনের সুবিধা অসুবিধা দেখাটাই সরকারের কাজ। জনগনই যদি না থাকে তাহলে দেশের সম্পদ আর পরিবেশ দিয়ে কি হবে? সরকারইবা কী করবে? মানুষতো পরিবেশেরই একটা অংশ। তাই সরকারের বিবেচনায় মানুষ আগে।
তিনি বলেন, অনেকে বলেন পাথর উত্তোলনে নদীর গতিপথ পাল্টে বিপর্যয় ডেকে আনে, আবার অনেকে বলেন, পাথর উত্তোলন না করায় নদীর গতিপথ পাল্টে যায়। আমরা মনে করি, বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক স্টাডির দরকার আছে। একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি করে তাদের স্টাডি রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা কাজ করবো।
তিনি বলেন, সিলেট বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন বা আলাদা কিছু নয়। এটি বাংলাদেশেরই একটা অংশ। দেশের অন্যান্য স্থানের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে সিলেটের হবেনা কেন? অবশ্যই সিলেটেরও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার যাতে হয় আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করবো। আপনাদের বক্তব্য লিখিতভাবে আমরা প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার নজরে আনবো। সিলেটের লাখ লাখ বালু ও পাথর শ্রমিকের দুঃখ দুর্দশার অবসান আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, একসময় সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের অনুমতি ছিল, কিন্তু তা বাতিল হলো কেন? নিশ্চয় অনিয়ম ছিল, বেলাসহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংগঠন রিট করেছে, তাই এ অবস্থা হয়েছে। আমরা যদি কঠোরভাবে আইন মেনে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করি, তাহলে আমি কোনো সমস্যা দেখছিনা।
তিনি আরও বলেন, নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে প্রয়োজনে উচ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়ে আমরা আইনের ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধান করতে চাই।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের এই বক্তব্যে আশার আলো দেখতে শুরু করেন পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। এ বিষয়ে খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাসহ উচ্চ পর্যায়ে আলাপ আলোচনার সুযোগ দিতে দুই দিনের জন্য তারা পরিবহনে কর্মবিরতি স্থগিত করেন।
তাদের ধারণা, বিভাগীয় কমিশনার যদি তার কথামতো কাজ করেন তাহলে অন্তত সনাতন পদ্ধতিতে হলেও সিলেটের পাঁচটি পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া হবে। এতে তাদের জীবনে কিছুটা হলেও স্বচ্ছলতা ফিরবে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার পাথর শ্রমিক আব্দুল হাই (৩২) বলেন, বিভাগীয় কমিশনারের বক্তব্যে আশার আলো দেখছি আমরা। অন্তত সনাতন পদ্ধতিতে হলেও পাথর কোয়ারি খোলে দেয়ার দাবি আমাদের।
পরিবহন শ্রমিক আশরাফ (২৫) বলেন, পাথর কোয়ারি খোলে দেওয়া হলে পরিবহন শ্রমিকদেরও কাজ জুটবে। আমরা ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবো।
উল্লেখ্য, বেলাসহ কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠনের রিটের প্রেক্ষিতে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে ২০১৮ সালে এসব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে সরকার। তবে চলতি বছরের গোড়ার দিকে অন্যান্য স্থানের কোয়ারিগুলোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে পাথর উত্তোলন শুরু হলেও সিলেটের কোয়রিগুলোর ক্ষেত্রে তা এখনো বহাল।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D