২৫শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০২৫
৩৬ বছর থেকে ছাতকের হাদা টিলা কেটে পাথর উত্তোলন ! প্রশাসন ঘুমে!অপেক্ষায় পৌরবাসী!
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের হাদা টিলা এখন এক ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের নাম। প্রায় ৭৬০ একর সরকারি টিলা থেকে অবাধে মাটি কেটে পাথর উত্তোলন করছে
বিএনপি,জামায়াত ও আওয়ামীলীগেরপ্রভাবশালী সিন্ডিকেট। বন বিভাগ ও প্রশাসনের একাধিক অভিযান, মামলা, জব্দ কার্যক্রম—সবই যেন ব্যর্থ হয়ে পড়েছে এ সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্যের কাছে। ফলশ্রুতিতে ধ্বংস হচ্ছে বনায়ন প্রকল্পের গাছপালা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য, আর সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দেড় শতাধিক দিনমজুরকে কাজে লাগিয়ে টিলা কেটে পাথর উত্তোলন করা হয়। দৈনিক উত্তোলন হয় ৫-৬শ ঘনফুট পাথর, যা স্থানীয় বাজারে প্রতি ঘনফুট ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, টিলা কাটার সময় বনায়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত গাছপালাও নির্বিচারে কেটে বিক্রি করছে তারা। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা ও বনরক্ষীরা বিষয়টি জানলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বরং কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে প্রকাশ্যে। অবৈধ পাথর উত্তোলনের ঘটনায় প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও মূল হোতারা অদৃশ্য থেকে যায়।
গত ২২ আগষ্ট গভীর রাতে উপজেলা ইসলামপুর ইউনিয়নের হাদা-পান্ডব এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের বিশেষ অভিযানে ড্রেজার বালু নৌকা জব্দ করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম।
কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের এ ধরনের অভিযানে শ্রমিকরা গ্রেপ্তার হলেও সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী নেতারা আইনের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে অভিযান শেষ হলেই আবারও টিলা কেটে পাথর উত্তোলন শুরু হয়।
২০০৬-০৭ অর্থবছরে বন বিভাগের উদ্যোগে ইসলামপুর ইউনিয়নের হাদা টিলায় প্রায় ১৭৫ একর ভূমিতে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল বনজ ও ফলজ বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ, মাটি ক্ষয় রোধ ও স্থানীয়দের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ তৈরি করা। কিন্তু অবৈধ পাথর উত্তোলনের কারণে এসব গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে নির্বিচারে। ইতোমধ্যেই অনেক জায়গায় টিলা সমতল হয়ে পড়েছে, যা প্রকল্পটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।ফরেষ্ট বিভাগ নিরব রয়েছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এভাবে টিলা কেটে পাথর উত্তোলন চলতে থাকলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে। সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলের টিলা-নির্ভর ইকোসিস্টেম ভেঙে পড়বে। বনাঞ্চল ও গাছপালা ধ্বংসের কারণে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। মাটি ক্ষয়ের ফলে উর্বরতা হারাচ্ছে জমি, যা স্থানীয় কৃষিকে হুমকির মুখে ফেলবে। এক পরিবেশ গবেষক বলেন,“টিলা কাটার ফলে ভূ-প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। যদি এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, অচিরেই এ অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে।”
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, টিলা ধ্বংসের কারণে পাশের জমিতে বালুমাটির স্তর জমছে। ফলে আবাদি জমি দিন দিন চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। তাছাড়া টিলা কাটায় গ্রামীণ সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে,পরিবহন খরচ বাড়ছে।
গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস এসব কথার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,আমাদের গ্রামের ফসলি জমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে, কিন্তু যারা সবকিছু লুটে নিচ্ছে তাদের ধরা হচ্ছে না।”
বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়রা মনে করছেন, হাদা টিলা রক্ষায় কেবল ভ্রাম্যমাণ আদালত যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, কড়াকড়ি নজরদারি এবং প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনানুগ ব্যবস্থা। তাছাড়া সামাজিক বনায়ন প্রকল্প পুনরুদ্ধার ও স্থানীয়দের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও জরুরি হয়ে পড়েছে।
বন বিভাগের কর্মকর্তা আইযূব আলী এসব
লুটপাট ও টিলা কাটার অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “অবৈধ পাথর উত্তোলনের বিষয়ে আমরা নিয়মিত অভিযোগ করছি। কিন্তু সিন্ডিকেট এত শক্তিশালী যে, স্থানীয় পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের বিরুদ্ধে টেকসই ব্যবস্থা নিতে পারছে না।”অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা অভিযানে গিয়ে পাথর জব্দ করি, মামলা দিই। কিন্তু মূল চক্রকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”
এব্যাপারে উপজেলার নিবাহী কর্মকতা মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন হাদা টিলায় যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, তা শুধুমাত্র একটি টিলা বা বনায়ন প্রকল্পের ক্ষতি নয়—এটি একটি অঞ্চলের পরিবেশ, কৃষি ও অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এ ধ্বংসের ফল ভোগ করতে হবে।এব্যাপারে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।###
আনোয়ার হোসেন রনি
২৪,৮,২৫
০১৭১১৪৪৭৬৮৬
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D