২২শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:০৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০
অনলাইন ডেস্ক ::
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর জানাজায় অংশ নিয়ে ইসলামী আন্দোলনে তার অবদান ও ত্যাগের কথা স্মরণ করেছেন সংগঠনটির আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বাবুনগরী বলেন, আমার সঙ্গে অনেক আন্তরিক সম্পর্ক ছিল উনার (কাসেমি)। উনাকে হারিয়ে কত যে ক্ষতিগ্রস্ত হলাম…।
উনি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। হুমকি-ধমকির কাছে কখনও মাথা নোয়াননি।
কাসেমীর সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল জানিয়ে হেফাজতের আমির বলেন, নূর হোসাইন কাসেমীর সঙ্গে আমার হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল। তাকে হারিয়ে আমরা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হলাম তা বলা যাবে না।’
জুনাইদ বাবুনগরী আরও বলেন, আল্লামা কাসেমী দেশের সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ছিলেন। পরে তিনি মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন। উনি বাতিলের সঙ্গে আপস করেননি। আমরা তার কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করব ইনশাল্লাহ।
এ সময় মরহুমের ছোট ভাই মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস তার বড় ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, জাতি আজ তার এক সুসন্তানকে হারিয়েছে। আপনারা সবাই তার রুহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন।
সোমবার সকাল সোয়া ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে কাসেমীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বরেণ্য এই আলেমের জানাজায় হাজার হাজার মুসল্লির ঢল নামে।
জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের ছোট ছেলে মুফতি জাবের কাসেমী। দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখ ও রাজনীতিবিদরা এতে অংশ নেন।
জানাজা উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিপুল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। জানাজার আগে বায়তুল মোকাররমের আশপাশের রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। ভোরেই লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে বায়তুল মোকাররম এলাকা।
জানাজায় অংশ নিতে হেফাজতকর্মীরা দূরদূরান্ত থেকে ঢাকায় আসেন। ফজরের নামাজে অংশ নিয়েছেন বিপুলসংখ্যক মুসল্লি। তাদের অনেকেই গতকালই ঢাকায় চলে আসেন। হেফাজত নেতাকর্মীদের দাবি, স্মরণকালের অন্যতম বৃহৎ জানাজা এটি।
জানাজার আগে কাসেমীর রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া চান হেফাজতের আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী, নিজ দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা জিয়াউদ্দিন, কওমি শিক্ষা বোর্ড বেফাক ও আল-হাইআর পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা মাহমুদুল হাসান ও পরিবারের পক্ষ থেকে আল্লামা কাসেমীর ছোট ভাই মাওলানা আবদুল কুদ্দুস। তারা স্মৃতিচারণ করে আল্লামা কাসেমীর কর্মবহুল জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন।
জানাজায় আরও অংশ নেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মহাসচিব অ্যাডভোকেট ফারুক রহমান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমান, মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মাওলানা জুনাইদ আল হাবীব, মুফতি হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী, খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামাসহ লাখো মানুষ অংশ নেন।
আজ আশুলিয়া বেড়িবাঁধসংলগ্ন ধউর গ্রামে অবস্থিত সুবহানিয়া মাদ্রাসায় তাকে দাফন করা হবে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি … রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। আল্লামা কাসেমী বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ছিলেন।
ঠাণ্ডা ও শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা হওয়ায় ১ ডিসেম্বর তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহে তার নমুনা পরীক্ষা করা হলেও ফল নেগেটিভ আসে।
হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে নূর হোসাইন কাসেমী সংগঠনটির ঢাকা মহানগর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সংগঠনের আমির আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর ১৫ নভেম্বর নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। আল্লামা কাসেমী বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি, আল-হাইয়া বোর্ডের কো-চেয়ারম্যান এবং জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী ১৯৪৫ সালের ১০ জানুয়ারি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার চড্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি শেষ করে চড্ডার কাশিপুর মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তার পর তিনি বড়ুরার মাদ্রাসায় হেদায়াতুন্নাহু জামাত শেষ করেন। এর পর ভারতের সাহারানপুর জেলার বেড়িতাজপুর মাদ্রাসায় জালালাইন জামাত পড়েন।
শিক্ষাজীবন শেষে কাসেমী দারুল উলুম দেওবন্দসহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় অধ্যাপনা করেন। নূর হোসাইন কাসেমী ১৯৭৫ সালে জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসেন। ২০১৫ সাল থেকে জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি খতমে নবুয়ত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D