২১শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০২১
সিলেটের দিনকাল ডেস্ক ::
পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর আচরণের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তফাৎ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অতীত স্মরণ করে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রতি।
শুক্রবার (১১ মার্চ) রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চের মিলনায়তনে কৃষক দলের জাতীয় সম্মেলনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব।
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় বসে আছেন, দখল করে বসে আছেন। কি তফাত আপনাদের পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আমাকে বুঝাবেন একটু? আমি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে আপনাদের কোনো তফাত দেখি না। তারাও জোর করে বন্দুক দিয়ে মানুষকে মেরে ক্ষমতা দখল করে বসেছিল। আপনারা আজকে সেই একই কায়দায় মানুষকে হত্যা করে, নির্যাতন করে, জোর করে আপনারা ক্ষমতায় বসে আছেন।
তিনি বলেন, দয়া করে অতীতের কথা, যখন আপনারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, সেই কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগকে যদি বাঁচাতে চান তাহলে অবিলম্বে যা আপনারা করেছেন তার জন্য মাফ চেয়ে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেন। পদত্যাগ করেন, নির্বাচন দিন, নতুন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচনে নতুন সরকার আসুক, নতুন পার্লামেন্ট আসুক।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ দেশটাকে পৈত্রিক সম্পত্তি করে নিয়েছে। এই যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব; তিনি খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। চমৎকার আসনে বসে তিনি বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকেন। প্রতিদিন তিনি বিএনপিকে ছবক ও শিক্ষা দেন। আরে আগে আপনি নিজের ঘরে শিক্ষা দেন। আপনার ভাই কাদের মির্জা সাহেব যে সমস্ত কথা আপনার সম্পর্কে বলেন, আপনাদের নেতাদের সম্পর্কে বলেন, সেটার পরে তো আপনাদের থাকার কথা না, পদত্যাগ করা উচিত। আপনারা নিজের ঘরে নিজেরা মারামারি করে, দলাদলি করে ইতিমধ্যে দুইজনকে হত্যা করেছেন, একজন সাংবাদিক, একজন রাজনৈতিক কর্মী। কোনো বিচার নাই। এটাই সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি অসুস্থ। তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। কোথায় সাজা স্থগিত করছে? আপনারা তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চেয়েছেন সেটাও আপনারা দেন নাই। আপনারা তাকে বাংলাদেশে রেখেই চিকিৎসা করতে বলছেন। যেখানে তার চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিনে দিনে।
তিনি খালেদা জিয়াসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলেরও দাবি করেন তিনি।
খালেদা জিয়ার সময় কৃষিঋণ মওকুফ, জিয়ার সময় ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফসহ বিএনপির বিভিন্ন মেয়াদে কৃষকদের উন্নয়নে নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, এই সরকার এখন পর্যন্ত কৃষকদের জন্য এমন কিছু করেনি যা দিয়ে তারা বলতে পারবে আমরা কৃষকদের জন্য এই এই কাজগুলো করেছি। কোভিড-১৯ এর প্রণোদনা দিয়েছে বিভিন্ন সেক্টরে, কৃষি ক্ষেত্রেও দিয়েছে। কিন্তু কৃষি ক্ষেত্রের টাকাগুলো তাদের নেতারা পকেটে ভরে নিয়েছে। আড়াই হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ছিল, সেটাও তারা পকেটে ভরে নিয়েছে। এই সরকার লুটেরা সরকারে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনে আগে বলেছিল, বিনা পয়সায় সার দেবে, সেই সার কি এখন বিনা পয়সার দেয়? ১০ টাকা কেজির চাল, ১০ টাকা কেজির চাল কি পান? পান না।
উন্নয়নের নামে ‘মেগা লুট’ হচ্ছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আজকের পত্রিকায় দেখলাম দ্রুতগামী ট্রেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার জন্য দুইটা চীনা কোম্পানি সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিটে করে দিতে চায়। পয়সা দেবে কে? পয়সা ওরা এখন দেবে এবং সরকার আমাদের পকেট থেকে কেটে নেবে। আমাদের প্রশ্ন আপনারা যে উন্নয়ন উন্নয়ন বলে চিৎকার করছেন, এই উন্নয়নে লাভবান হচ্ছে কে? লাভবান হচ্ছে আপনাদের কিছু মানুষ, যারা কমিশন এজেন্সি করে, যারা দালালি করে, বখরা নেয়। শুধুমাত্র আপনাদের মানুষ উপকৃত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই উপকৃত হচ্ছে না।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, যারা জেলা ও উপজেলা থাকেন, তারা আমার চেয়ে ভালো বলতে পারবেন। জেলা ও উপজেলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের চেহারা বদলে গেছে না? সব সময় চক চক করে। তারা এখন গাড়িতে চড়ে বেড়ায়। তাদের এই পরিবর্তন হয়েছে ৫ বছরের মধ্যে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি অবশ্যই আশা করবো, আজকে সম্মেলনের পরে আপনাদের কাউন্সিল অধিবেশন হবে। সেখানে আজকে আপনাদের মনের মধ্যে শক্তি সঞ্চায় করবেন। শপথ নেবেন, সম্মেলন থেকে ফিরে গিয়ে কৃষকদের সংগঠিত করবেন। কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে আপনানা একটা গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করবেন।
আমরা একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছি মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই কঠিন সময় আমাদের জাতির জীবনে সব চেয়ে বড় সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি করেছে। এই কঠিন সময়টা কে তৈরি করেছে? একটি রাজনৈতিক দল এই কঠিন সময় তৈরি করেছে। যারা অতীতে পাকিন্তানের সঙ্গে গণতন্ত্র ভোটের অধিকার ও মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছিল। সেই দলটি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশের মানুষ কাছ থেকে গণতন্ত্র ও অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে।
গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে কৃষক দলের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে ২২ বছর পর। শেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ১৬ মে। সকাল ১০টায় মহানগর নাট্যমঞ্চের প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা ও দলীয় উত্তোলন, রঙিন বেলুন ও সাদা কবুতর উন্মুক্ত করে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব ও আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু। বিকাল তিনটায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হবে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব কাউন্সিল অধিবেশন।
সম্মেলনে সারাদেশ থেকে সংগঠনটির ৫৪৮ জন কাউন্সিলর অর্থাৎ ৭৯টি সাংগঠনিক জেলার ৩৯৫ জন এবং কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির ১৫৩ জন প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।
উদ্বোধনীর অনুষ্ঠানের বক্তব্যের পর সংগঠনের বিধান অনুযায়ী নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের আগে কৃষক দলের ১৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। বিকালে কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে ১৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বিএনপি।
কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে ও সদস্য এস কে সাদীর পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষক দলের সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন, নাজিমউদ্দিন, আফতাব উদ্দিন আহমেদ মণ্ডল, জামালউদ্দিন মিলন, এমএ হালিম, নাসির হায়দার, জিয়াউল হায়দার পলাশ, লুৎফুর রহমান, মাহমুদুল হক সানু, শরীফুল ইসলাম মোল্লা, মহসিন আহমেদ তুষার, আনোয়ারুল হক, এনায়েতুল্লাহ খোকন, রবিউল হাসান পলাশ, সালাহউদ্দিন খান মিলকী, নাসিরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, রফিকুল আলম রফিক, মাহবুবুর রহমান আউয়াল, আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন এবং শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন তকদির হোসেন জসিম।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদুল ইসলাম বাবুল, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, আবদুল খালেক, আমিরুজ্জামান শিমুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম ও ছাত্রদলের ইকবাল হোসেন শ্যামল উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D