১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:২০ অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০১৯
নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা (মৌলভীবাজার) থেকে: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় সুরুজ আলী (২৫) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ উদ্ধারের জেরে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তির বাড়িতে হামলা, মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার (৫ জুন) দিবাগত রাত ৮টার দিকে উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের মিহারী গ্রামের জিসু চন্দ্র দাসের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এরআগে বুধবার (৫ জুন) দুপুরে এলাকার এক নর্দমার ডুবা থেকে সুরুজ আলীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পরদিন বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরে মাদ্রাসা ছাত্র সুরুজ আলীর ভাই আয়াজ আলী বাদী হয়ে জিসু চন্দ্র দাসের ওপর একটি হত্যা মামলা করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৪ জুন) রাত থেকে মিহারী গ্রামের আয়াজ আলীর ছোট ভাই মাদ্রাসা ছাত্র সুরুজ আলীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন সকাল ১১টার দিকে তার লাশ বাড়ির পাশের নর্দমার ডুবায় দেখে স্থানীয়রা তার পরিবারে ও পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ দুপুরের দিকে তার লাশ উদ্ধার করে। এরপর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহেদুল ইসলাম। সুরতহাল শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদ্রাসার ছাত্ররা জড়ো হতে থাকেন। এরই মধ্যে গুজব ছড়ানো হয় এ ঘটনার সাথে মিহারী গ্রামের বাসিন্দা জিসু চন্দ্র দাস জড়িত। এ খবরে মাদ্রাসা ছাত্ররা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। ওইদিন (বুধবার) রাত ৮টার দিকে উত্তেজিত মাদ্রাসা ছাত্ররা জিসু চন্দ্র দাসের বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তারা মন্দিরে ভাঙচুর ও বাড়ির ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লোকজন ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় তারা ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। এ অবস্থায় ওই বাড়ি আগুনে ভস্মীভুত হয়ে যায়। এরইমধ্যে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে থাকে। এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়। এরপর তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বাসিন্দা জানিয়েছেন, আয়াজ আলীর সঙ্গে জিসু চন্দ্র দাসের পরিবারের বিরোধ চলছে দীর্ঘদিন থেকে। এরআগে আয়াজ আলী গংদের হামলায় জিসুর বাবা-মা মারা যান। আয়াজ আলীর ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর তার (আয়াজ আলী) ধারণা হয়তো এ ঘটনার সাথে জিসুর হাত থাকতে পারে। তাই গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের জিসুর বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়।
অপরদিকে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের জিসু চন্দ্র দাসের বাড়িতে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হিন্দু, বৌদ্ধ, ক্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিধান দাস, সাধারণ সম্পাদক প্রকৃতি চৌধুরীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় বলেন, ‘মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় তার ভাই জিসু চন্দ্র দাস নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।’ ওসি আরও বলেন, ‘মাদ্রসা ছাত্রের হত্যার সঙ্গে জিসু জড়িত এই প্রচারণা এলাকা চালিয়ে তার বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে বলে খবর পেয়েছি আমরা। পুরো ঘটনাটি পুলিশ সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে দেখছে। প্রকৃতপক্ষে মাদ্রাসা ছাত্র হত্যার সাথে কারা জড়িত। এছাড়া বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। হামলাকারীদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে। এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D