আমার প্রয়াত আব্বার বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবন নিয়ে এক গুনী জনের লেখা..

প্রকাশিত: ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২

আমার প্রয়াত আব্বার বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবন নিয়ে এক গুনী জনের লেখা..

আমার প্রয়াত আব্বার বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবন নিয়ে এক গুনী জনের লেখা..

সাইফুল আলম রোকন

সামছুল ইসলাম নাদির হোসেন। হবিগঞ্জ মহকুমার ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্টাতা সভাপতি, একজন বাম রাজনীতিবিদ, একজন শিক্ষক,প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতা, কৃষক আন্দোলনের নেতা,একজন সমাজসেবক।
১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার করাব গ্রামে সামছুল ইসলাম নাদির হোসেন জন্ম গ্রহন করেন। নাদির হোসেন নামে পরিচিত ছিলেন। পিতার নাম মোঃ ছদর হোসেন।
১৯৫০ সালে রাঢ়িশাল করাব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন। ভর্তি হন হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে।
১৯৫২ সালে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন।
১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল পুর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্টিত হয়। সেই সময় কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক হন মোহাম্মদ ইলিয়াছ। কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন কমরেড বারীন দত্ত। মোহাম্মদ ইলিয়াছের বাড়ী কমলগঞ্জ এবং কমরেড বারীন দত্তের বাড়ী ছিল লাখাই। কমরেড বারীন দত্ত ও মোহাম্মদ ইলিয়াছের অনুপ্রেরণায় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে নাদির হোসেন যোগ দেন। হবিগঞ্জ মহকুমার প্রতিষ্টাকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হন।
১৯৫৫ সালে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।
১৯৫৭ সালে লাখাই থানার ন্যাপের সভাপতি হন।
১৯৫৮ সালে ন্যাপের হবিগঞ্জ মহকুমার সহসভাপতি হন।
১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে যোগদান করেন।
১৯৭০ সালে নাগুরা ফার্ম উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে চাকুরীতে যোগদান করেন।
১৯৭০ সালে পুর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ সদর- লাখাই আসনে ন্যাপ মোজাফফর থেকে কুড়েঘড় মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেন। সেই সময় বৃহত্তর সিলেট জেলায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, নাদির হোসেন, মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী কুড়েঘর মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। একমাত্র কুড়েঘর মার্কা নিয়ে সুনামগঞ্জের দিরাই- শাল্লা আসন থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিজয়ী হন।
নাদির হোসেন আওয়ামীলীগের ডাঃ আবুল হাশেমের নৌকা প্রতীকের কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এই ডাঃ আবুল হাসেম মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেন। রেডিও তে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন।
১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাধবপুর আসনে মাহবুব উদ্দিন চৌধুরীর কুড়েঘর মার্কা প্রতীকের পক্ষে প্রচারে নামেন।
১৯৮৬ সালে হবিগঞ্জ সদর- লাখাই আসনে এডভোকেট চৌধুরী আব্দুল হাই ৮ দলীয় জোটের প্রার্থী হলে নির্বাচন পরিচালনার প্রধান দায়িত্ব পালন করেন নাদির হোসেন। সেই সময় চৌধুরী আব্দুল হাই এমপি নির্বাচিত হন।
১৯৮৮ সালে স্বৈরাচার প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। বামৈ ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে এরশাদ বিরোধী সমাবেশ করেন। সেই সমাবেশে নাদির হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পংকজ ভট্রাচার্য, পীর হাবিবুর রহমান,এডভোকেট চৌধুরী আব্দুল হাই,মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী।
১৯৯২ সালের ২৪ জুন হবিগঞ্জ জেলার প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতা সামছুল ইসলাম নাদির হোসেন মৃত্যুবরন করেন।
নাদির হোসেন ছিলেন একজন সৎ রাজনীতিবিদ। অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ,পংকজ ভট্রাচার্য,সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, চৌধুরী হারুনুর রশীদ,পীর হাবিবুর রহমান,কমরেড বরুন রায়, মতিয়া চৌধুরী এদের সাথে রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলেন।
নাদির হোসেন ছয়পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। বড় ছেলে এডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ লাখাই উপজেলার দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। দুই ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা, এক ছেলে আমেরিকা প্রবাসী,বাকী দুই ছেলে ব্যবসায়ী।
নাদির হোসেনের চিন্তাভাবনা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে সব অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল গনতান্ত্রিক দল ও শক্তির একটি বৃহত্তর র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করবে। শোষিত মানুষের মুক্তি ও শোষনমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের দিকে বাংলাদেশকে অগ্রসর করে নেয়া। আজীবন সংগ্রামী শ্রমিক, কৃষক,ক্ষেতমজুরসহ মেহনতি মানুষের পক্ষে কাজ করেছেন।
নাদির হোসেন সৎ কর্মের জন্য হবিগঞ্জ জেলার কৃষক শ্রেণির কাছে অমর হয়ে থাকবেন। এমন অসাম্প্রদায়িক মানুষ লাখাই থানায় আর জন্ম গ্রহন করবেন না।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল