১৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:২৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০২২
স্বাধীনতার ৫১ বছর পূর্তি, উন্নয়ন-অগ্রগতির বিস্ময় বাংলাদেশ,মহাউৎসবে মেতে উঠবে গোটা দেশ
মস্তাক আহমেদ পলাশ (সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক সিলেটের দিনকাল)
একাত্তর সালের ২৫ মার্চ কৃষ্ণপক্ষের রাত। উত্তাল দিন শেষে নেমেছে সন্ধ্যা। গভীর হতে শুরু করেছে রাত। তখনও কেউ জানে না কী ভয়ঙ্কর, নৃশংস ও বিভীষিকাময় রাত আসছে বাঙালীর জীবনে। ব্যস্ত শহর ঢাকা প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘুমের। ঘরে ঘরে অনেকে তখন ঘুমিয়েও পড়েছে। হঠাতই যেন খুলে গেল নরকের সবকটি দরজা।
রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হলো হনন-উদ্যত নরঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ছড়িয়ে পড়ল শহরময়। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’- এ নাম নিয়েই মৃত্যুক্ষুধা নিয়ে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক নেমে এলো। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠল অত্যাধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার। নিরীহ মানুষের আর্তনাদে ভারি হলো রাতের বাতাস। মানব ইতিহাসের পাতায় রচিত হলো কালিমালিপ্ত আরেকটি অধ্যায়। নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হলো বিশ্ববিবেক।
আজ সেই ভয়াল ও বীভৎস কালরাত্রির স্মৃতিবাহী ২৫ মার্চ। মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের ৫১ বছর পূর্তির দিন। বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক নৃশংস, ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় কালরাত্রি। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ঘটানো গণহত্যাকা-ের দিনটি জাতীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বাধীনতার প্রায় ৪৭ বছর পর ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে এ প্রস্তাব পাস হয়।
মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন-মুক্ত ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন।
সেই স্বাধীন-মুক্ত বাংলাদেশের বয়স এখন ৫১ বছর। স্বাধীনতার ৫১ বছরের এই পরিসরে দেশ ও জাতি অনেক ঘটন-অঘটন, চড়াই-উৎরাইয়ের সাক্ষী হয়েছে। সময়ে সময়ে এসব ঘটনা সমগ্র জাতিকে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়েছে, পাল্টে দিয়েছে এর গতিপথ। কখনো জাতির জীবনে এসেছে হতাশা-অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়। আবার সেই আঁধার ফুঁড়েই এগিয়ে গেছে দেশ। ৫০ বছর পেরিয়ে এসে আজ উন্নয়ন-অগ্রগতির এক নতুন বাংলাদেশ। সামনে আরও সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সাল থেকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরে আসে একাত্তর। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দাঁড়িয়ে জাতির পিতার সেই উদ্দাত্ত কণ্ঠের আহ্বান— ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’— জাতিকে দেখায় স্বাধীনতার পথ। ২৫ মার্চের সেই ভয়াল রাতে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণায় বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় নতুন এক দেশ। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদ ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আসে কাঙ্ক্ষিত বিজয়। দিনটি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। মিত্র বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। সেই বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির দিন আজ।
৫১ বছরের রাজনীতির ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী বহু ঘাত-প্রতিঘাত, সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ সামরিক শাসনে হত্যাকাণ্ড-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং নানা চড়াই-উতরাই ও অন্ধকারের যুগ পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন-সমৃদ্ধির মহাসোপানে। বিশ্ব দরবারে এক বিস্ময়। টানা মেয়াদে সরকার পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছেন। দেশ এগিয়ে চলেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের পথে। এই ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে অসম্ভব এক বন্ধুর ও কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করতে হয়েছে বাংলাদেশসহ দেশের মানুষকে।
৫১ বছর একটি জাতির জীবনে খুব বড় পরিসর নয়। তবু পরাধীনতার শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসা সহস্র বছরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ আত্মমর্যাদায় বলীয়ান একটি জাতির সামনে অর্ধ শতাব্দীর এই মাইলফলক অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। স্বাধীনতার পর যে দেশটিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছিল, সেই বাংলাদেশ আজ গোটা বিশ্বের সামনে এক বিস্ময়ের নাম। যে দলটির নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্থান পায় বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে, সেই দলটির হাত ধরেই গত এক যুগে বিস্ময়কর গতিতে ঘুরে দাঁড়ানো, উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃতি আদায়কারী দেশটির নাম এখন বাংলাদেশ।
বিজ্ঞাপন
স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশটির প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র যেমন দেখেছে এ ভূখণ্ডের মানুষ, তেমনি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের হাত ধরেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অর্থাৎ ৫০ বছর পূর্তির সময়ে জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জাতিসংঘের স্বীকৃতিও প্রত্যক্ষ করল জাতি।
১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই দেশটির জন্মের ইতিহাস, বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক প্রভাব এবং মানুষের রাজনীতিমনস্কতা কেন্দ্র করে আবর্তিত। একাত্তরে অস্থায়ী সরকার গঠন এবং সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা কমপক্ষে পাঁচ বার পরিবর্তিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী অবৈধভাবে সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল, জিয়া নিহত হওয়ার পর আরেক স্বৈরশাসক এরশাদের ক্ষমতা দখল, ক্যু-পাল্টা ক্যু’র নামে হাজার হাজার সামরিক বাহিনীর অফিসার-সৈনিককে নির্বিচারে হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ কার্যত এক ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
বিজ্ঞাপন
স্বাধীনতার এই ৫১ বছরের সময়ে কেমন ছিল বাংলাদেশের ইতিহাস? স্বল্প কথায় বিশ্লেষণ করলে মানসপটে ভেসে উঠে জাতির পিতার নেতৃত্বে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের চিত্র। যুদ্ধবিধ্বস্ত পাকিস্তানের একটি প্রদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণে জাতির পিতার ক্লান্তিহীন চেষ্টা, বিশ্বের সব দেশের স্বীকৃতি আদায়, বঙ্গবন্ধুর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে উন্নীত করা— সবই ইতিহাস। এরপরই কালো অধ্যায়। জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে দেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতির মিছিল থেকে হটিয়ে ফের ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার দীর্ঘ চেষ্টা করা হয়েছে। এরপর টানা ১৬ বছর চলেছে সামরিক শাসন। এরপর সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরলেও তিন মেয়াদের পরই আবার অনির্বাচিত সরকারের প্রত্যাবর্তন। সব মিলিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরের বড় একটি অংশই ছিল গণতন্ত্রের বাইরের যাত্রা।
স্বাধীনতার ৫১ বছরের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনা করে সাড়ে ২১ বছর। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতার বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়। জাতির পিতাকে হত্যার পরবর্তী দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকে পাঁচ বছর। মাঝে ৫ বছর বাদ দিয়ে ২০০৯ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত অর্থাৎ গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে টানা ক্ষমতায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট।
স্বাধীন বাংলাদেশের যত অর্জন, তার প্রায় সবকিছুই এসেছে এই ২১ বছরে, আওয়ামী লীগের হাত ধরে।
১৯৯৬ সালে প্রথমবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে দীর্ঘ ২১ বছর পরিচয় পাওয়া বাংলাদেশ অর্জন করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার এক যুগ ধরে দেশের মানুষসহ গোটা বিশ্ব দেখছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সফলতার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ম্যাজিক। ৪০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থাকা শেখ হাসিনা শত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে, মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ পরিচালনা করছেন, অর্জন করেছেন বিশ্বের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময়ে নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ পরিচালনার রেকর্ড। সব মিলিয়ে আজ বাংলাদেশ গোটা বিশ্বে এক মর্যাদার নাম।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D