১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
মুরাদ হোসেন :
অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই সহ সংখ্যালঘু নির্যাতনের।৫ই আগষ্ট দেশে ক্ষমতা পরিবর্তনের সাথে সাথে ফ্যাসিবাদীদের দোসর রা পালিয়ে কিংবা দেশত্যাগ করলেও তাদেরই স্থলাভিষিক্ত হতে দেখা যাচ্ছে নব্য বিভিন্ন দল ও সংঘটনের কিছু নেতাকর্মীদের। ঐতিহাসিক ছাত্রজনতার আন্দোলনে যেখানে মানুষ অতীতের জুলুম, লুটপাট থেকে অন্যরকম একটি সমাজ ব্যবস্হা দেখার স্বপ্নে বিভোর ঠিক সে সময়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুযোগ সন্ধানী কিছু নেতারা সাবেক ফ্যাসিবাদীদের অপকর্মের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে চলেছে।
এমনই এক অভিযোগ উঠেছে গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নলজুরী গ্রামের মৃত সামসুল হকের ছেলে আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে।
আবুল কাশেম সিলেট জেলা জাতিয়তাবাদী যুবদলের নবগঠিত কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নিয়োজিত রয়েছেন। স্হানীয় ভাবে অভিযোগ রয়েছে গত ৫ই আগষ্টের ছাত্রজনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী পট পরিবর্তনের পরে নিজ এলাকায় বেপোরয়া হয়ে উঠেন আবুল কাশেম। তার এ সকল সমস্ত কর্মকাণ্ডে সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে স্হানীয় আরেক চিন্হিত চোরাকারবারি কাশেমের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত শাহেদ আহমেদ লিটন।
বর্তমান সময়ে শুধু গোটা গোয়াইনঘাট উপজেলায় চোরাকারবারির লাইনম্যান হিসেবে নেতৃত্ব দেয়ার মধ্যে নিজেকে তিনি সীমাবদ্ধ রাখেন নি। বরং রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে তার স্হানীয় সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে হরিপুরের এক ব্যবসায়ীকে মারধর ও নগদ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত ৬ই নভেম্বর সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবির অভিযানে প্রতাপপুর বিওপির অন্তর্ভুক্ত রাধানগর এলাকা হতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ভারতীয় চোরাই পন্যের চালান আটক করা হয়েছিলো। যে চালানের বাজারমূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকার ও বেশী। পরের দিন বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় বিশাল ভারতীয় চোরাই পন্যের নেপথ্যে যে দুইজনের নাম প্রকাশিত হয়েছিলো তার মধ্য অন্যতম জেলা যুবদল নেতা আবুল কাশেম ও জাফলং শান্তিনগর এলাকার জয়দুল হোসেন অন্যতম।
এ ছাড়াও গত ২৪ শে অক্টোবর ভারতীয় চোরাই চিনি পাচারের সময় জৈন্তাপুর বিওপির সদস্যদের হাতে আটক হওয়া চিনিভর্তি একটি ট্রাক ( ঢাকা মেট্রো -ট- ২৪-০৬৭৫) যার মালিক আবুল কাশেম নিজে।
চোরাকারবারি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে গুরুতর আরেকটি অভিযোগ রয়েছে, তা হলো সংখ্যালঘু নির্যাতন। গত ৫ই আগষ্ট দেশের ঐতিহাসিক পটপরিবর্তনের দিন নলজুরী এলাকায় বেপোরয়া হয়ে উঠে আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ৩০/৩৫ জনের একটি সংবদ্ধ দল। ওইদিন বিকেলে স্হানীয় গোপেশ শর্মার ছেলে গোপাল শর্মার বাড়ীতে হামলা চালানো হয় আবুল কাশেমের নেতৃত্বে। সে সময় শুধু তার বাড়ীঘর ভাংচুর ও লুটপাটে তারা ক্ষ্রান্ত হয় নি বরং গোপাল শর্মার বাড়ীর উত্তরে দূর্গা মন্দিরে স্হায়ী ভাবে স্হাপিতর দেবতার উপর এলোপাতাড়ি আঘাত করে তারা। নলজুরী বাজারে গোপাল শর্মার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা করা হয় আবুল কাশেমের নেতৃত্বে। ভূক্তোভোগী গোপালশর্মা ১৯শে আগস্ট গোয়াইনঘাট থানায় আবুল কাশেমকে প্রধান ও অজ্ঞাতনামা ৩০/৩৫ জনকে আসামি করে সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন (ডায়েরি নং-৪৩৪)।
এদিকে চোরাকারবারি ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের মাঝেই আবুল কাশেম নিজেকে শুধু সীমাবদ্ধ রাখেন নি। নিজ এলাকায় ব্যবসায়ীর গাড়ী গতিরোধ করে মারধর ও নগদ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে ভূক্তোভোগী জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকার ব্যবসায়ী হাজী আব্দুল মালিকের পুত্র সুফিয়ান আহমদ জানান, গত ১লা নভেম্বর তিনি ব্যবসায়ীক অংশিদার রুমেল ও জুবেরকে নিয়ে তাদের তামাবিলস্হ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। এ সময় ফিসারী ব্যবসায় লিজের গৃহীত ২৫ লক্ষ টাকা তাদের সাথে ছিলো। পথিমধ্যে সারিঘাট এলাকায় পৌছামাত্র তারা লক্ষ্য করেন আবুল কাশেম ও শাহেদ আহমেদ লিটন তাদের অনুসরণ করে। মোকামবাড়ী এলাকায় পৌঁছামাত্র তারা সুফিয়ানের গাড়ীকে পাশ কাটিয়ে নলজুরী এলাকায় প্রবেশ করে তাদের গাড়ী গতিরোধ করে। এ সময় আবুল কাশেমের ডাকে স্হানীয় বেশকিছু যুবক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সুফিয়ানের উপর হামলা চালিয়ে তাদের সাথে থাকা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে ভূক্তোভোগী সুফিয়ান আহমদ জানান, মূলত আবুল কাশেমের এলাকায় ব্যবসা করার জন্যই তার ও তাদের সন্ত্রাসীগ্রুপের ক্ষোভ। তিনি উক্ত ঘটনার পর তিনি ও তার সহকর্মীরা সিলেট নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে গত ১১ই নভেম্বর সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ১ম ও দ্রুত বিচার আদালতে আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নের অপরাধে (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ ( সংশোধন -২০১৯) এর ৪/৫ ধারায় আবুল কাশেমকে প্রধান ও সাহেদ আহমেদ লিটনকে ২য় আসামি করে ১০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
নলজুরী মোকামবাড়ী এলাকার প্রবীন ব্যাক্তি সাবেক ইউপি সদস্য আবুল হাসিম সুন্দই বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এদেশে অতীতেও হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা অত্র এলাকাতে কোনদিন ছিলো না। আবুল কাশেম সম্প্রতি সময়ে যে সব কর্মকান্ড করছে তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য খুব বাজে ইংগিত। ইতিমধ্যে অত্র এলাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এলাকা তামাবিল স্হল বন্দরের অনেক ব্যবসায়ীকে সে জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের মত ঘটনা ঘটছে। হরিপুরের সুফিয়ানকে তার দলবল নিয়ে নলজুরী বাজারে মারধর করে লুটপাট করলো আবার সুফিয়ানকে প্রধান আসামি করে হয়রানি মুলক মামলাও করেছে। সেই মামলায় ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধাকে আসামি দিতেও সে কুন্ঠা বোধ করে নাই। একই মামলায় তিনি সহ তার ছেলেকেও মামলার আসামি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
জেলা যুবদল নেতা আবুল কাশেম বলেন, আমি কোন দিন চোরাচালান ব্যবসায় জড়িত নই। পেশাগত কারনে ব্যবসায়ীর চিনি গাড়ীতে লোড করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় বিজিবি আটক করে। তবে তিনি কোন ভাবে ব্যবসায় জড়ীত নন। এছাড়া একটি মহল জেলা যুবদলের সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় তারা আমার রাজনৈতিক ভাবে হেও পতিপন্ন করতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালোচ্ছে। আমি হিন্ধু সম্প্রদায়ের কারও কোন ক্ষতি সাধন করিনি। আইনি তদন্তে প্রকাশিত হবে। আপনারা সরজমিন তদন্ত করলে সত্যতা পাবেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D