হকার বসবে না কিনব্রিজে, চলবেনা মোটরসাইকেলও : জেলা প্রশাসক

প্রকাশিত: ১:৫০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫

হকার বসবে না কিনব্রিজে, চলবেনা মোটরসাইকেলও : জেলা প্রশাসক

হকার বসবে না কিনব্রিজে, চলবেনা মোটরসাইকেলও : জেলা প্রশাসক

অনলাইন ডেস্ক : সিলেটের নবাগত জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেছেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম বলেছেন, সিলেটের কিনব্রিজে আর কোনো হকার বসতে দেওয়া হবে না। এখন মোটরসাইকেল চলাচল করে। ব্রিজে আর মোটরসাইকেলও উঠতে দেওয়া হবে না। এটি শুধু হাঁটাহাটির জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

তিনি বলেন, মোটরসাইকেল যাতে ব্রিজে উঠতে না পারে এ জন্য বিজ্রের দুই প্রবেশ মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। আগামী শনিবার থেকেই এ কাজ শুরু হবে।

তিনি মঙ্গলবার সিলেটে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একইসঙ্গে ভূঁইফোড় সাংবাদিকতা ও তদবির সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানান।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ডিসি সারওয়ার আলম বলেন, আমি ঘুষ খাইনি, ঘুষ খাই না এবং ভবিষ্যতেও খাবো না। কারো ব্যক্তিগত স্বার্থে কিংবা কোনো কমিউনিটির নাম ব্যবহার করে যদি আমার কাছে তদবির আসে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রশাসনকে পেশাদারভাবে পরিচালনা করতে হলে এসব অনৈতিক চাপ মোকাবেলা করতে হবে।

সভায় সিলেটে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও নিবন্ধিত অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সাংবাদিকদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও পেশাগত সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে মতামত প্রদান করেন। তারা সংবাদ সংগ্রহে প্রশাসনের সহযোগিতা এবং তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা ও গঠনমূলক মনোভাব প্রত্যাশা করেন।

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের বক্তব্যের জবাবে জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম জানান, পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন করা যাবে কি না তা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। তবে পাথর কোয়ারি এলাকায় শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা নিয়ে সরকার ভাবছে। পরিবেশ, প্রতিবেশ ঠিক রেখে তাদেরকে কিভাবে কাজ দেয়া যায় সেটা চিন্তা-ভাবনা চলছে। ঢাকা-সিলেট ছয় লেন মহাসড়কের সিলেট অংশে জমি অধিগ্রহণ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা সম্পন্ন করে কাজ এগিয়ে নিতে তিনি তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি বলেন- সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে তাকে পরিকল্পনা পাঠাতে বলা হয়েছে। এই হাসপাতালে ৯০০ বেড থাকলেও প্রতিদিন দুই-আড়াই হাজার রোগী ভর্তি হতে আসেন। ফলে এখানে সেরকম দেয়া সম্ভব হয় না।

শিক্ষায় সিলেটে নানা অনিয়ম রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকেরা একে অন্যের বিরুদ্ধে বলে, কিন্তু শিক্ষার মান নিয়ে কেউ কথা বলে না। স্বাস্থ্যখাতে নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও সেবা নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি কাজ বলে মনে করেন।

সিলেট নগরীর ঐতিহ্যের কিনব্রিজে এখন থেকে আর মোটরসাইকেলও চলাচল করতে দেয়া হবে না এবং দোকানপাট বসতে দেয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিনব্রিজে এখন শুধু মানুষ হাঁটবে। এর পাশে সার্কিট হাউসের সামনে ট্রাকস্ট্যান্ড সরানোর উদ্যাগ নেয়া হয়েছে। এই এলাকায় খাবারের দোকানপাট বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

জেলা প্রশাসক সুরমা ও কুশিয়ারা নদী খনন একেবারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে বলেন, নদী খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জমা থাকা ফাইলের খোঁজ-খবর নিয়ে উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নেবেন বলে তিনি জানান। এয়ারপোর্ট থেকে সিলেটের সড়ক চার লেন করা যায় কী না তারও চিন্তা-ভাবনা চলছে। সিলেট-চারখাই শেওলা চার লেন মহাসড়কের কাজও শুরু হবে বলেও তিনি আশ^স্ত করেন।

নগরীর ফুটপাত দখল ও যানজট নিরসনে সবাই মিলে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবৈধ পার্কিং ও অবৈধ যানবাহনের বিষয়ে কাজ চলছে। সাংবাদিকদের ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ ও কল্যাণকর দেশ গড়তে কাজ করতে হবে। দেশের আমূল সংস্কার ও পরিবর্তনে মিডিয়া সবচেয়ে বড় শক্তি।

তাকে ‘কখনো কখনো বজ্রের মতো কঠিন-রূঢ় আবার কখনো ফুলের মতো কোমল’ দেখা যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাউকে কাউকে এমন শাস্তি দেবো, মনে হবে বেশি করা হয়ে গেছে। কিন্তু সময়ে বুঝবেন এটা ঠিকই করেছি। কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগি প্রমাণিত হলে বরখাস্ত করবো। আর আমার মতো চলতে পারলে সারা জীবন মনে রাখবো। এখান থেকে চলে গেলেও তার জন্য কাজ করবো।

সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে সরকারি কর্মকর্তাদের সব সময় কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, মানুষের কাজ করে আমি এত বেশি ভালোবাসা পেয়েছি যে, আমার জীবনে এর চেয়ে বেশি কিছু আর চাই না। এটা আমার প্রত্যাশারও অতীত। এর আগে সিলেটের কমপক্ষে ৬০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের সামনে সাংবাদিকরা কথা বলেন।

সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। তবে এই পেশাকে যারা নিজের স্বার্থে অপব্যবহার করছেন, সাংবাদিক নামধারী হয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছেন- তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভূঁইফোড় সাংবাদিকদের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে থাকবো।

এসময় বক্তব্য রাখেন সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো চিফ ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি আবদুল কাদের তাপাদার, দৈনিক আমার দেশের সিলেট ব্যুরো চীফ ও সিলেট প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি খালেদ আহমদ, দৈনিক প্রভাতবেলা সম্পাদক ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ কবির আহমদ সোহেল, দৈনিক সংগ্রামের সিলেট ব্যুরো চিফ কবির আহমদ, বাসসের সিলেট ব্যুরো চিফ সেলিম আউয়াল, দৈনিক সিলেট বাণীর নির্বাহী সম্পাদক এম এ হান্নান, বাংলাদেশ ফটোসাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের বিভাগীয় সভাপতি নাজমুল কবির পাভেল, চ্যানেল আইয়ের সিলেট প্রতিনিধি সাদিকুর রহমান সাকী, দৈনিক আলোকিত সিলেটের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক গোলজার আহমদ হেলাল, দৈনিক নয়া দিগন্তের স্টাফ রিপোর্টার ও দৈনিক জালালাবাদের সিনিয়র রিপোর্টার এমজেএইচ জামিল, দেশ টিভির সিলেট প্রতিনিধি খালেদ আহমদ, দৈনিক দিনকালের সিলেট প্রতিনিধি সাইফুর রহমান তালুকদার, দৈনিক জালালাবাদের চীফ ফটোগ্রাফার হুমায়ুন কবির লিটন, মোহনা টেলিভিশনের সিলেট প্রতিনিধি আবদুল আউয়াল চৌধুরী শিপার, ৭১ টিভির সিলেট ব্যুরো প্রধান আব্দুল মুহিত দিদার, ইমজা’র সাধারণ সম্পাদক ও একাত্তর টিভির সিলেট প্রতিনিধি সাকিব আহমেদ মিটু, দৈনিক পূণ্যভূমি সম্পাদক আবু তালেব মুরাদ, দৈনিক আজকের পত্রিকার সিলেট ব্যুরো ইয়াহিয়া মারুফ, শ্যামল সিলেটের সিনিয়র রিপোর্টার নাসির উদ্দিন, খবরের কাগজের সিলেট প্রতিনিধি শাকিলা ববি, ঢাকা পোস্টের সিলেট জেলা প্রতিনিধি মাসুদ আহমদ রনি প্রমূখ।