সিলেট-০৪: আরিফকে হাকিম সমর্থকদের ‘না’

প্রকাশিত: ৮:০০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২৫

সিলেট-০৪: আরিফকে হাকিম সমর্থকদের ‘না’

সিলেট-০৪: আরিফকে হাকিম সমর্থকদের ‘না’

জুনেদ আহমদ চৌধুরী

সিলেটে জনপ্রিয় এক বিএনপি নেতার নাম আরিফুল হক চৌধুরী। সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর থেকে আওয়ামীলীগ জমানায় সাবেক মেয়র প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে হারিয়ে দুই বার সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপার্সনের অন্যতম এ উপদেষ্টা চমক দেখিয়ে এবার সিলেট-০৪ (কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর)নির্বাচনী আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন!

কিন্তু এ আসনে বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থকরা মেনে নিতে পারছেন না আরিফুল হক চৌধুরীকে। স্থানীয়দের মধ্য থেকে এ আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়ার দাবিতে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় মশাল মিছিল বের করেছেন। সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কে মশাল মিছিলে অংশ গ্রহণকারীরা ‘লোকাল চাই, লোকাল চাই, হাকিম ভাইকে পার্থী চাই’ এমন শ্লোগান তুলেন হাজারো মানুষ। এছাড়া বৃহস্পতিবারও ৩ উপজেলার (জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) ১৫ জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্টিত হয়। তাদের একটাই বক্তব্য, এ আসনে বারবার ‘ভিন্ন জায়গা’ থেকে এনে প্রার্থী দেয়া হয়। এবার বাহিরের কাউকে মানতে নারাজ তারা।

 

গেল সোমবার (৩ নভেম্বর) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে সিলেট-০৪ ও সিলেট-০৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা দেয়নি দলটি। এরপর থেকেই সিলেট-০৪ আসন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। কে ছিনিয়ে আনছেন পর্যটনখ্যাত এ আসনের মনোনয়ন?

 

সিলেট-০১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পান বিএনপি চেয়ারপার্সনের অন্যতম উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। আরিফুল হক চৌধুরীও এ আসনের মনোনয়ন পেতে লবিং করেছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে তিনি পরদিনই চলে যান ঢাকায়। সেখানে গিয়ে চমক দেখালেন ক্যারিশম্যাটিক নেতা হিসেবে পরিচিত আরিফুল হক। বুধবার রাতে গণমাধ্যমকে তিনি জানান,দলের পক্ষ থেকে তাকে প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে।তিনি দাবি করেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাকে সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। দু’দিন ঢাকায় অবস্থান করে সিলেটে ফিরে শুক্রবার থেকে নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করেছেন। ঐদিন এ আসনের সাবেক সাংসদ প্রয়াত দিলদার হোসেন সেলিমের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে শুরু করেন নির্বাচনী প্রচারণা।যদিও বিএনপি আরিফকে শনিবার রাত পৌনে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়নি।

এদিকে আরিফুল হক এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁর সমর্থকদের মধ্যে উল্লাস করতে দেখা গেছে। তারা বলছেন, আরিফুল হক কাজের মানুষ। সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম.সাইফুর রহমানের হাত ধরে উন্নয়ন করতে শিখেছেন। যার কারণে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে দুই বার মেয়র নির্বাচিত হয়ে উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছেন যা আগের মেয়র দ্বারা সম্ভব হয়নি। তিনি সিলেট-০৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে অবহেলিত এ জনপদে উন্নয়নে অতিথের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে যাবে।

 

কিন্তু সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সাবেক দুইবারের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান এবং সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরীর অনুসারীরা কোনভাবেই আরিফকে মানতে নারাজ। তারা বলছেন, দুর্যোগে, দুর্বিপাকে আমরা সবসময় হাকিম চৌধুরীকেই পেয়েছি। প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে থাকা হাকিম চৌধুরীর বাড়ি ওই নির্বাচনী এলাকায়। আরিফুল হক এখানকার বাসিন্দা নন। যে কারনে নির্বাচনী এলাকায় তারা ‘অতিথি প্রার্থী’ কাউকে চায় না। স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে হাকিম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলের হাই কমান্ডের প্রতি জোর দাবি তাদের।

এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সামসুজ্জামান জামান, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দীন ও সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী এডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল