সিলেট ৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৪২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
কলকাতায় অবস্থিত ভারতীয় জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি প্রদর্শিত আছে। সেখানে জিয়াউর রহমানের পরিচয় বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।
সেখানে আরো লেখা রয়েছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তিনি। তিনিই জাতির উদ্দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা প্রথম ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছাড়া আর কোনো পরিচিত মুখের মুক্তিযোদ্ধার ছবি ওই জাদুঘরে নেই। তবে যুদ্ধের একটি ছবি আছে যেখানে এই প্রতিবেদকের পরিচিত কেউ নেই। তবে জিয়াউর রহমানের ছবিও সেখানে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়ে নেই। আছে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে। জিয়াউর রহমানের ছবিটি যোদ্ধার নয়, সামরিক পোশাকেও নয়, সিভিল পোশাকে। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম এর ঠিকানা : ২৭ জওহরলাল নেহেরু রোড, কলোটলা, নিউমার্কেট এরিয়া, ধর্মতলা, সুলতানা, কলকাতা-৭০০০১৬]।
শুধু ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়ামেই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখা বিভিন্ন বইতেও তারেক রহমানের বক্তব্যের সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, ২৭ মার্চ কিংবা ২৮ মার্চ যেভাবেই যতবার জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিবারই তিনি ঘোষণাটি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের রাজনৈতিক সচিব মাঈদুল হাসান তরফদার লিখেছেন, ২৭ শে মার্চ সন্ধ্যায় ৮-ইবির বিদ্রোহী নেতা মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেন। মেজর জিয়া তাঁর প্রথম বেতার বক্তৃতায় নিজেকে ‘রাষ্ট্রপ্রধান’ হিসাবে ঘোষণা করলেও, পরদিন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পরামর্শক্রমে তিনি শেখ মুজিবের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা প্রকাশ করেন। (মূলধারা:৭১, পৃষ্ঠা ৫)। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, মেজর জিয়া শেখ মুজিবের নির্দেশে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা বললেও নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে আগেকার ঘোষণার সংশোধন করেননি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর রফিক-উল ইসলাম বীরউত্তম; তার লেখা “এ্যা টেল অব এ মিলিয়ন্স” বইয়ের ১০৫-১০৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন : ‘২৭ মার্চের বিকেলে তিনি (মেজর জিয়া) আসেন মদনাঘাটে এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। প্রথমে তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান রূপে ঘোষণা করেন। পরে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে জিয়াউর রহমান কেন প্রথম ঘোষণা একটু পরিবর্তন করেছেন তারও একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মেজর রফিক-উল ইসলাম।
তিনি লিখেন একজন সামরিক কর্মকর্তা নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান রূপে ঘোষণা দিলে এই আন্দোলনের রাজনৈতিক চরিত্র ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এবং স্বাধীনতার জন্য এই গণ-অভ্যুত্থান সামরিক অভ্যুত্থান রূপে চিত্রিত হতে পারে, এই ভাবনায় মেজর জিয়া পুনরায় স্বাধীনতার ঘেষণা দেন শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে। এই ঘোষণা শোনা যায় ২৮ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত,।
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি, বর্তমানে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ বীরউত্তম, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তিনি তার লেখা ‘বাংলাদেশ এট ওয়ার’ বইয়ের ৪৩-৪৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, মেজর জিয়া ২৫ মার্চের রাত্রিতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সদলবলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন, তার কমান্ডিং অফিসার জানজুয়া ও অন্যদেরও প্রথমে গ্রেফতার এবং পরে হত্যা করেন, পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। পরে ২৬ মার্চে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মোকাবিলার জন্য সবাইকে আহ্বান করেন। এই ঘোষণায় তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান রূপে ঘোষণা করেন।
আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মেজর জেনারেল সুবিদ আলী ভূঁইয়া, ‘মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস’ (প্রথম প্রকাশ জুন ১৯৭২) বইয়ের ৫৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, বেতার-কেন্দ্র থেকে যাঁরা সেদিন মেজর জিয়ার ভাষণ শুনেছিলেন তাঁদের নিশ্চয় মনে আছে, মেজর জিয়া তাঁর প্রথম দিনের ভাষণে নিজেকে “হেড অব দি স্টেট” অর্থাৎ রাষ্ট্রপ্রধানরূপেই ঘোষণা করেছিলেন। তিনি আরো লিখেন, …স্বাধীনতার ঘোষণা কার নামে প্রচারিত হয়েছিল সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা এই যে, জিয়াউর রহমান নিজে উদ্যোগ নিয়েই এই ঘোষণা প্রচার করেছিলেন।
এভাবে সকল তথ্য প্রমাণেই দেখা যায় জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণাটি দিয়েছিলেন নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করেই। কারণ জিয়াউর রহমান জানতেন একটি স্বাধীনতার ঘোষণা কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় দিলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে সেটি স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে স্বীকৃত হয় এবং গ্রহণ যোগ্যতা পায়।
বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক আব্দুল হাই শিকদার তার লেখা “তারেক রহমান এবং বাংলাদেশ” শীর্ষক বইতে “জিয়াউর রহমান প্রথম প্রেসিডেন্ট: ঐতিহাসিক বাস্তবতায় তারেক রহমানের বক্তব্য বিশ্লেষণ” শিরোনামে এক নিবন্ধে লিখেন, “এটা ঐতিহসিক সত্য যে, ২৬ মার্চ মেজর জিয়া চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জাতি ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের উদ্দেশ্যে ঘোষণায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং নিজেকে বাংলাদেশের কমান্ডার ইন চিফ ও প্রভিশনাল সরকারের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। ওই সময়কালে স্বাধীন বাংলাদেশে আর কোন ঘোষিত সরকার ছিল না। তবে জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা সত্ত্বেও যে কোন ভূল বোঝাবুঝি এড়াতে জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ তার স্বাধীনতার ঘোষণায় সে সময়কার প্রধান রাজনৈতিক শেখ মুজিবুর রহমান উল্লেখ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তবে মজার বিষয় হলো, ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণায় শেখ মুজিবুর রহমান উল্লেখ করলেও স্বাধীনতার সেই ঘোষণাটিও জিয়াউর রহমান দেন নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে।
ঐতিহাসিক বাস্তবতা হচ্ছে, জিয়াউর রহমানের ঘোষণা অনুযায়ীই ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ পাকিস্তানের শাসন থেকে ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের মধ্যে যারা আগরতলায় হাজির ছিলেন তারা ১৩ই এপ্রিল সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। স্বাধীনতা ঘোষণা করার ২২ দিন পরে ১৭ই এপ্রিল বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল কুষ্টিয়ার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথপুর গ্রামের আম্রকুঞ্জে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহন করে। দেশী বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি ও ১০ সহস্রাধিক জনতার উপস্থিতিতে ১৭ এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রেসিডেন্ট, তাঁর অবর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করা হয়। তাহলে ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে অস্থায়ী সরকার গঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ২২দিন কী বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ নেতৃত্বশূন্য ছিল?
দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমের রেকর্ড এবং মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের লেখা বইপত্র থেকে এটি প্রতিষ্ঠিত ও প্রমানিত হয় যে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনার দিন হতে ১৭ই এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে অস্থায়ী সরকার গঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই ২২ দিন মুক্তিযুদ্ধ বা বাংলাদেশ নেতৃত্বশূণ্য ছিল না। এ সময়কালে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রভিশনাল সরকারের প্রধান ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান এবং তিনিই এই ২২ দিন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সুতরাং ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণ এমনকি আইনগতভাবেও জিয়াউর রহমান ই বমুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
(পরিচালক)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি