১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
অলিউর রহমান. বিয়ানীবাজার::
প্রাকৃতিক প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে বহুকষ্টে টিকে থাকা অভাবী ঘরগুলোতে সোমত্ত মেয়েরা যেন আজ সময়ের অভিশাপ ! মৌলিক অন্যান্য চাহিদার তুলনায় শিক্ষা নামক বস্তুটি বরাবরি এদের অধরা। দুবেলা দু’মুঠো অন্নের সঠিক সদ্গতি করতে না পারায় অযতœ আর অবহেলায় বড় হওয়া মেয়েটিকে অপরিণত বয়সেই পরিণয়ের বেড়িতে হাত বেঁধে দিতে বাধ্য হচ্ছেন হতদরিদ্র বাবা মা। সংসার কী- এ বিষয়ে নুন্যতম ধারণা হবার আগেই মেয়েটিকে পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে অন্য একটি সংসারে। জামাই বাবুর আর্থিক স্বচ্ছলতা ও মেয়ের সুখময় ভবিষ্যৎ কামনায় অভাবী বাবা মা সংসারের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে কিংবা বন্ধক দিয়ে যৌতূক হিসেবে যৎসামান্য টাকা তুলে দেন বর পক্ষের দাবী অনুসারেই। কিন্তু এতেই কি শেষ গতি হচ্ছে ? হাতের মেহেদীর রঙ মুছতে না মুছতেই গ্রাম্য সহজ সরল মেয়েটির উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন।
যৌতূকের লোভে জামাই ব্যাটা হয়ে উঠে বেপরোয়া ! ভদ্রবেশী বরের পৈশাচিক রূপ এক সময় মেয়েকে ছাড়িয়ে তার বাবা মা’র উপরেও প্রতিফলিত হতে থাকে। অসহায়, নিঃসম্বল বাবা মা’র নিস্ফল কান্না উপেক্ষা করে বাড়তেই থাকে জামাইয়ের দাবী- টাকা চাই, আরো আরো টাকা চাই! দারিদ্র্যতার বলীকাষ্ঠ হতে মুক্তি লাভের প্রত্যাশায় কিশোরী মেয়েটিকে পরের হাতে তুলে দেবার যন্ত্রণা ভুলার আগেই যৌতূক নামক এ’ যন্ত্রণার শিকার হয়ে অনেক বাবা মা’র আত্মহননের ঘটনাও আজকাল বিরল নয়।
বিয়ানীবাজারের কয়েকটি বিষয় নিয়ে খতিয়ে দেখলে স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয় যে, কেবল অশিক্ষিত ও হতদরিদ্র অভিবাবকেরাই মেয়েকে বাল্যবিবাহ দিয়ে দায়মুক্ত হতে চাচ্ছেন তা নয়; বরং অনেক শিক্ষিত (?) ও ধনী পরিবারেও আজকাল এ বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেড়েই চলছে। বিয়ানীবাজার কিছু কিছু অসাধু কাজী (নিকাহ রেজিস্টার কারী), ধর্মান্ধ ইমাম, অর্থলোভী মৌলভী, অযোগ্য জনপ্রতিনিধি, স্বঘোষিত গ্রাম্য মাতাব্বর সহ বিয়ের মধ্যস্থতাকারীরা এ’ ঘৃণিত কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে আসছে। আর এভাবেই একটি বিশেষ শ্রেণী গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় আজ এ বাল্যবিবাহ নামক অভিশাপের মূল শেকড় এতোটাই গভীরে যে, কারো একার প্রচেষ্টায় সে শেকড়ের মূলোৎপাটন করা এতোটাও সহজ নয়।
বিয়ানীবাজার উপজেলাকে “বাল্যবিবাহ মুক্ত” উপজেলা হিসেবে চিহ্নিত করতে, বাল্যবিবাহ নির্মূল করার অদম্য প্রচেষ্টায় মাঠ পর্যায়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন অত্র উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউ.এন.ও.) মোঃ হেলালুজ্জামান সরকার। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কল্পে সভা-সেমিনারের মাধ্যমে গণ সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষে তিনি চষে বেড়াচ্ছেন গ্রাম হতে গ্রামান্তর। অত্র উপজেলার যে কোন গ্রামেই হোক, বাল্যবিবাহের খবর পেলেই তিনি ছুটে যাচ্ছেন বিয়ের আসরে ! যে কোন পরিস্থিতি উপেক্ষা করে প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় বন্ধ করছেন একের পর এক বাল্যবিবাহ।
বাল্যবিবাহ সম্পর্কে জানতে চাইলে, কে তিনি জানান, “বাল্যবিবাহ আজকাল সামাজিক ব্যধিতে পরিণত। এ’ ঘৃণ্য ও জগন্যতম ব্যাধির শিকার কোমলমতি কিশোর কিশোরীরা ঝরে যাচ্ছে অসময়ে। অসময়ে তাদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে বাড়ছে না শিক্ষার মান। যদিও বাল্যবিবাহ ও যৌতূক দু’টি আলাদা সমস্যা, তবুও এরা আজ একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে উঠায় অনেক পরিবার অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়া সহ সর্বশান্ত হওয়া পরিবারের সংখ্যাও আজকাল চোখে পড়ার মতো। শুধু তাই নয়; অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় সন্তান জন্মের সময় প্রাণ হারাতে হচ্ছে মা ও নবজাতকের। একে কেন্দ্র করে সামাজিক বিশৃঙ্খলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই অত্র উপজেলায় বাল্যবিবাহ ঠেকাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি “
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ” বাল্যবিবাহ নামক এ’ সামাজিক ব্যাধি থেকে রেহায় পেতে চাইলে, কারো একক প্রচেষ্টায় সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। সর্বস্তরের তথা সকল শ্রেণী পেশাজীবী মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উপড়ে ফেলতে হবে এ’ সামাজিক সমস্যার মূল শেকড়। তাই এ’ ঘাতক ব্যাধির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার জন্য উপজেলাবাসীর প্রতি রইলো জোড় আবেদন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমেদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D