১৯শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৫২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০১৯
এবার একটি বালিশের দাম ২৭ হাজার এবং একটি কভারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার টাকা। চট্টগ্রামে নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রকল্প প্রস্তাবনায় দুর্নীতির এমন চিত্র উঠে এসেছে। উল্লেখ্য, এর আগে রূপপুরে একটি বালিশের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ হাজার টাকা।
দেশের দ্বিতীয় এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) এমন আরো অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। মাত্র ২০ টাকার হ্যান্ড গ্লাভসের দাম ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা, আর ১৫ টাকার টেস্ট টিউবের দাম ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার টাকা। যাচাই করা হয়নি প্রকল্পের সম্ভাব্যতাও।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে এ প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে। এছাড়া পরিকল্পনা কমিশন ডিপিপি প্রস্তুতকারীদের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, জড়িত মন্ত্রণালয়গুলো প্রকল্পের ব্যয় অহেতুক বাড়ানোর পাঁয়তারায় লিপ্ত হয়েছে। কোনোভাবেই তাদের আটকানো যাচ্ছে না। এছাড়া, এই প্রবণতাকে উন্নয়নের নামে লুটপাটের প্রাথমিক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
ডিপিপি’র তথ্য মতে, দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এজন্য ২২ তলাবিশিষ্ট এক হাজার বেডের দুটি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ২০ তলাবিশিষ্ট দুই বেজমেন্টের প্রশাসনিক ভবন করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম বন্দর বাইপাস সড়কের পাশে ২৮ দশমিক ৪২ একর জায়গা জুড়ে হবে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা।
ডিপিপির কার্যপত্র থেকে জানা যায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের ১২টি আইটেমের যে দাম ধরা হয়েছে তা বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। অনেকটা পর্বতসম।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য মতে, এই ১২ আইটেমের মধ্যে প্রস্তাবনায় বালিশ ক্রয়ে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতিটির ২৭ হাজার ৭২০ টাকা, যার (সরবরাহকারীর লাভ, ভ্যাট, ট্যাক্সসহ) বাজারমূল্য ৭৫০-২০০০ টাকা আর বালিশের কাভারের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ২৮ হাজার টাকা, যার বাজার মূল্য ৫০০-১৫০০ টাকা। এমন আরো অনেক অসঙ্গতি রয়েছে পণ্যগুলোর ক্রয় প্রস্তাবে। এর মধ্যে অপারেশনের সময় ডাক্তারদের হাতে পরার স্টেরাইল হ্যান্ড গ্লাভসের দাম ধরা হয়েছে প্রতিটির ৩৫ হাজার টাকা, যার বাজার মূল্য মাত্র ২০-৫০ টাকা। আর ১৫-৫০ টাকার টেস্ট টিউবের দাম ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার টাকা।
একই সঙ্গে বিল্ডিং নির্মাণে মাল্টিপ্লাগের দাম ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৩০০ টাকা, যার বাজার মূল্য মাত্র ২৫০-৫০০ টাকা। অপারেশন থিয়েটারের রাবার ক্লথের বাজার মূল্য ৫০০-৭০০ টাকা হলেও প্রকল্প প্রস্তাবে দাম ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা, রেক্সিনের বাজার মূল্য ৩-৫শ টাকা হলেও প্রতিটি ৮৪ হাজার টাকায় কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। সুতি তোয়ালে বাজারে ১০০-১০০০ টাকায় পাওয়া গেলেও প্রস্তাবনায় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৮০ টাকা। ডাক্তারদের সাদা গাউনের বাজার মূল্য ১০০-২০০০ টাকা হলেও প্রকল্পে প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা। সার্জিক্যাল ক্যাপ ও মাস্কের দাম ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার টাকা, যার বাজার মূল্য মাত্র ১০০-২০০ টাকা। বাজারে সু-কাভার প্রতিটির দাম ২০-৫০ টাকা, এখানে প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে আরো বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের সরঞ্জামাদি ক্রয়ের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে আরো অনেক অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যাবে। এ ধরনের প্রাক্কলন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্প প্রস্তাবের অনেক ক্ষেত্রে একই চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ভিন্ন ভিন্ন ব্যয় প্রাক্কলনও করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রকল্পটিতে অনেক অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেডিকেল সরঞ্জামাদির ক্রয় মূল্য মাত্রাতিরিক্ত ধরা হয়েছে। দু-এক ক্ষেত্রে বাজারের চেয়ে কমও ধরা হয়েছে। বিষয়টি একেবারে অগ্রহণযোগ্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিকে বলে দেয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে কোনো প্রকল্প প্রস্তাব পাঠালে তা যেন মন্ত্রণালয় কর্তৃক যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্ভুল করা হয়। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুতে সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী সংস্থার কারা কারা জড়িত ছিল তা তদন্ত করে মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।’
পিইসির কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের ডিপিপি পর্যালোচনা করে আরো অনিয়ম অসঙ্গতির তথ্য জানা গেছে। আসবাবপত্রের ব্যয় প্রাক্কলনেরও অসামঞ্জস্যতা ও অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়েছে। একই ধরনের ফার্নিচারের মূল্য একেক জায়গায় একেক রকম। একই ফার্নিচার একাধিকবার কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেমন রিসার্চ ল্যাবের যন্ত্রপাতির তালিকায় যেসব আসবাবপত্র কেনার কথা বলা হয়েছে, একই ধরনের ফার্নিচার অন্যত্র কেনারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৭৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। হাসপাতালের বইপত্র কেনার জন্য ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। বইয়ের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখো যায়, সব বইয়েই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্য ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ক্লিনিক্যাল হেমাটোলজির ৩ কপি বইয়ের সেটের দাম ধরা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যার বাজার মূল্য কমিশন বাদে ২২ হাজার ৫২৫ টাকা। রেসপিরেটরি মেডিকেলের দুই খণ্ডের দাম ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। কিন্তু অনলাইনে এর বাজার মূল্য কমিশন বাদে ২৭ হাজার ৭৯ টাকা।
সিলেটের দিনকাল ডেস্ক
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D