২১শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৩৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০১৯
স্পোর্টস ডেস্ক :: চলছে ইউরো’র বাছাইপর্ব। দল পিছিয়ে দুই গোলের ব্যবধানে। জয় না পেলেও গোল ব্যবধান কম রাখতে হবে যেনো এদিক দিয়ে এগিয়ে থেকেও বাছাইপর্বের বাঁধা অতিক্রম করা যায়। ম্যাচের বাকি আর মাত্র ১৮ মিনিট। চিন্তার ভাঁজ পর্তুগীজ সমর্থকদের মনে। এমন সময়েই পেনাল্টির বাঁশি!
পর্তুগালের ত্রাতা হয়ে এলেন লম্বাদেহী এক ফুটবলার। স্পট কিক থেকে দারুণ শটে বল জড়িয়ে দিলেন জালে। গ্যালারি তখন উৎসবে মাতোয়ারা। অপরদিকে এই গোলের মাধ্যমেই দারুণ একটি মাইলফলক স্পর্শ করলেন সেই ফুটবলার। ফুটবল ইতিহাসের ষষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ৭০০ গোল করলেন তিনি। বলা হচ্ছিল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কথা।
সময়টা ১৯৮৫ সালের পাঁচ ফেব্রুয়ারি। পর্তুগালের ছোট্ট শহর মাদেইরাতে মায়ের কোল আলো করে এলো এক শিশু। চার ভাই-বোনের মাঝে সবচেয়ে ছোট্ট শিশুটির বাবা মা আদর করে নাম রাখলেন ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ডস সান্তোস অ্যাভেইরো’। তার বাবা রোনালদো নামটি দেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের নাম থেকে। তখনও কি তিনি জানতেন এই নামে একদিন সারাবিশ্ব চিনবে শিশুটিকে?
ক্লাব ক্যারিয়ার:
মাদেইরার অলিগলিতে ছোট থেকেই ছুটে বেড়াতে থাকেন ফুটবল নিয়ে। গোল করা যেনো তখন থেকেই তার নেশা হয়ে যায়। সাত বছর বয়সে খেলা শুরু করেন আন্দোরিনহা নামের এক ফুটবল ক্লাবে। বছর তিনেক পর যোগ দেন ন্যাসিওনাল ক্লাবে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে শুরু করেন পেশাদার ফুটবল খেলা। নাম লেখান পর্তুগালের স্পোর্টিং সিপি দলে। এখানে যেনো নতুন করে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। তার খেলা দেখেই মনে ধরে ম্যান ইউ বস স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের। ২০০৩ সালে নাম লেখান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে।
ক্লাবে যোগ দিয়ে নিজের আগের ক্লাবে খেলা ২৮ নম্বর জার্সি দেয়ার অনুরোধ করেছিলেন রোনালদো। কিন্তু ম্যান ইউ বস ফার্গুসন তাকে সাত নম্বর জার্সি দেন। এই জার্সি গায়ে একই ক্লাবে খেলেছেন জর্জ বেস্ট, এরিক কান্টোনা, ডেভিড বেকহ্যামদের মতো মহাতারকা। হীরে চিনতে ভুল করেননি ফার্গুসন। তার খুঁজে পাওয়া রত্নকে আজ সারাবিশ্ব ডাকে ‘সিআর সেভেন’ বলে।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বইয়ে দিয়েছেন গোলের বন্যা। ম্যান ইউয়ে যোগ দিয়ে নিজের এই গোল দেয়ার ক্ষমতাকে আরো শাণিত করেন তিনি। যোগ দেয়ার বছরেই ক্লাবের হয়ে জয় করেন প্রিমিয়ার লিগ টাইটেল, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ। ২৩ বছর বয়সেই জিতে নেন ফিফা ব্যালন ডি’অর পুরস্কার। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ২৯২ ম্যাচে ১১৮টি গোল করেন রোনালদো।
২০০৯ সালে সেসময়ের রেকর্ড ৯৪ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফিতে ম্যান ইউ ছেড়ে স্বপ্নের রিয়াল মাদ্রিদে আসেন দ্য রন। এখানেই যেনো নিজেকে পরিপূর্ণরূপে প্রস্ফুটিত করেন তিনি। ক্যারিয়ারের পরবর্তী নয়টি বসন্ত এই ক্লাবেই কেটেছে সিআর সেভেনের। তারকা থেকে হয়ে উঠেছেন মহাতারকা।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ১৫টি মেজর ট্রফি জিতেছেন রোনালদো। ক্লাব ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সব ট্রফিই জিতেছেন তিনি। ব্যক্তিগত অর্জনেও নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্যদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। লা লিগার রেকর্ড ৩৪টি হ্যাটট্রিক করেছেন রন। ৪৩৮ ম্যাচ খেলে করেছেন ৪৫১ গোল। লস ব্লাঙ্কোসদের ইতিহাসে তিনিই এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা। হয়েছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার।
রিয়ালের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন অবিচ্ছেদ্যরূপে। সবাই ধরে নিয়েছিলো এখানেই হয়তো ক্যারিয়ারের বাকিটা সময় কাটাবেন রোনালদো। কিন্তু মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট পেরেজের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৮ সালে ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করেন তিনি। ১০০ মিলিয়ন ট্রান্সফার ফি তে চার বছরের চুক্তিতে পাড়ি জমান জুভেন্টাসে।
জুভেন্টাসেও নিজের জাদুকরী পায়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন রোনালদো। প্রথম সিজনেই জিতে নিয়েছেন সিরি আ টাইটেল।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার:
২০০১ সালে পর্তুগালের বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে প্রথম সুযোগ পান রোনালদো। নিজের ফুটবল কারিশমা দেখিয়ে মাত্র দুই বছরের মাঝে জায়গা করে নেন মূল দলে। ২০০৭ সালে প্রথম বারের মতো অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড হাতে পড়েন তিনি। ২০১৪ সালে ক্যামেরুনের বিপক্ষে গোল করে হয়ে যান পর্তুগালের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার। ২০১৬ সালে পর্তুগালকে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জেতাতে বড় ভূমিকা ছিল তার। পর্তুগালের হয়ে ইউক্রেনের বিপক্ষে গোল করার মাধ্যমেই সব ধরণের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৭০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই লিজেন্ড।
এখনো পর্যন্ত পাঁচবার ফিফা বর্ষসেরা এওয়ার্ড পেয়েছেন রোনালদো। এ থেকেই বোঝা যায় কতটা উঁচুমানের ফুটবলার তিনি।
পরিবার:
রোনালদো পারিবারিক জীবনে এখনো অবিবাহিত। তবে তিনি চার সন্তানের জনক। ২০১০ সালে তার প্রথম সন্তান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জুনিয়র জন্ম নেয়। বিশেষ চুক্তির কারণে তিনি কখনো এর মায়ের নাম প্রকাশ করেন নি। বর্তমানে তার গার্লফ্রেন্ড স্প্যানিশ মডেল জর্জিনা রদ্রিগেজ। তাদের ঘর আলো করে সর্বশেষ সন্তান আলানা মার্টিনা ২০১৭ সালের নভেম্বরে জন্মগ্রহণ করেছে।
ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত ৯৭৩ ম্যাচ খেলেছেন রোনালদো। প্রতি ম্যাচে ০.৭২ গড়ে করেছেন ৭০০ গোল। সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হওয়ার মিশনে তার আগে এখন আছে জার্মানীর গার্ড মুলার (৭৩৫ গোল), হাঙ্গেরীর ফেরেঙ্ক পুসকাস (৭৪৬ গোল), ব্রাজিলের কালো মানিক পেলে (৭৬৭ গোল), ব্রাজিলের রোমারিও (৭৭২ গোল) এবং চেক রিপাবলিকের জোসেফ বাইকান (৮০৫ গোল)।
গোলমেশিন রন যেভাবে ছুটছেন, সবাইকে ছাপিয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। কোথায় গিয়ে থামবেন সিআর সেভেন? উত্তরটা হয়তো স্বয়ং রোনালদোও জানেন না!
স্পোর্টস ডেস্ক
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D